সুমন হোসেন, (যশোর) : যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সনজিৎ কুমার বিশ্বাস এইচ.এস.সি. পাশের সাটিফিকেট জাল করে এবং অবৈধ নিয়োগের মার্কসীট তৈরি করে বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরীর বেতনও তুলছেন। যা রীতিমতো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষা বিভাগের চোখে ধুলো দিয়ে কৌশলে নিজের প্রধান শিক্ষক পদের এমপিও করিয়াছেন। সূত্র জানায়, হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্থাপিত ১৯৮৬ সালে। আর বিদ্যালয়টি এমপিও হয় ১৯৮৮ সালে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ৫ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা শিক্ষক এবং ৫টি শ্রেণীতে মোট ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক আরও ৪জন শিক্ষক এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন।
এরমধ্যে একজন ইসলামী শিক্ষার সহকারি শিক্ষক। অথচ এই বিদ্যালয়ে কোন মুসলমান শিক্ষার্থী নেই। এলাকাবাসি বলতে শুরু করেছে, এই বিদ্যালয়ে আরও ৪জন শিক্ষক নিয়োগ পেলে ছাত্র-ছাত্রীর চেয়ে শিক্ষক বেশি হয়ে যাবে। এছাড়া এই প্রধান শিক্ষক ৩জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে অর্ধ কোটি টাকা আদায় করেছেন। নিয়োগ প্রাপ্তরা হলেন আয়া পদে ১ জন, অফিস সহায়ক পদে ১ জন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ১ জন।

মনোরঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে সনজিৎ কুমার বিশ্বাস হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ০৭/০৫/২০০০ সালে। সবিতা বিশ্বাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থেকে নতুন নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে সনজিৎ কুমার বিশ্বাস কে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন।

ফলে পুনরায় একই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ২৪/১২/২০২৩ সালে। নিয়োগ বোর্ডের ফলাফল সীটে সনজিৎ কুমার বিশ্বাস এইচ. এস. সি. পাশের সাটিফিকেটে ৩য় বিভাগে পাশ করেছে দেখানো হয়। পরে একই তারিখে ওই ফলাফল সীট জলিয়াতি করে ২য় বিভাগ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
সনজিৎ কুমার বিশ্বাস এস. এস. সি. পরিক্ষা দেন ১৯৯০ সালে। ২য় বিভাগে পাশ করেন। মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. পরিক্ষা দেন ১৯৯২ সালে। এ সময়ে তিনি একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হন। পরে ইমপ্রুভমেন্ট দিয়ে ১৯৯৩ সালে ৩য় বিভাগে পাশ করেন। ১৯৯৫ সালে বি. এ. পাশ করেনও ৩য় বিভাগে।
এরপর সহকারী ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাখা- ১১, নং শিম/ শ ১১/১৭/২০০৯/৮৮৪ তারিখ ৩ আগষ্ট ২০০৯ ইংরেজি ধারা ১নং এ বলা আছে একের অধিক তৃতীয় ধারা শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন না।
সাটিফিকেট জালিয়াতি করে হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চাকুীর করছেন এমন অভিযোগ দায়ের করেন ওই এলাকার কানু বিশ্বাস নামের এক ব্যাক্তি। অভিযোগের তদন্ত করতে সরাসরি বিদ্যালয়ে আসেন মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ এস এম জিল্লুর রশীদ। তিনি অভিযুক্ত সনজিৎ কুমার বিশ্বাস ও বাদি কানু বিশ্বাস সহ সকলকে নিয়ে বসেন।
এরপর প্রধান শিক্ষকের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখেন। ওই সময়েও সনজিৎ এর এইচ. এস. সি. পাশের সাটিফিকেটে ৩য় বিভাগে পাশ করা দেখতে পান।
এ সময়ে বাদি কানু বিশ্বাস শিক্ষা অফিসারের নিকট জানতে চাইলে একাধিক সাটিফিকেটে ৩য় বিভাগে পাশ হলে সে ব্যক্তি প্রধান শিক্ষক হওয়ার নীতিমালা আছে কি না?
উত্তরে শিক্ষা অফিসার বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা ও বি. এড. পাশ এবং যদি কোন শিক্ষকের ইনডেক্স নম্বর থাকে তাহলে সে প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন।