নিজস্ব প্রতিবেদক : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। বৃহস্পতিবার ২০২০ সালের হজে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে হাব-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ দাবি জানান। রাজধানীর নয়াপল্টনে হাব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবে হজের কোনো ধরনের চার্জ বাড়েনি, জ্বালানির মূল্য উল্টো কমেছে। ফলে এ বছর বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত।
পুরো বিষয়টি রিভিউ করে একাডেমিক পর্যালোচনার মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য ‘ভালো প্রফিট’ রেখে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া পুনর্র্নিধারণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন হাব সভাপতি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে সৌদি আরবে যাবেন।
হাব সভাপতি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিমান পরিবহন। গতবছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে লক্ষণীয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন অজুহাতে এ বছর হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনৈতিক।
হজযাত্রীদের ২০১৯ সালের বিমান ভাড়া এক লাখ ২৮ হাজার টাকা থেকে এবার আরও কমিয়ে নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে তসলিম বলেন, এ বছর কোনো ব্যয় বৃদ্ধি পায়নি। সৌদি সরকারের কোনো ট্যাক্স বৃদ্ধি পায়নি। বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) তথ্যানুযায়ী, জ্বালানির মূল্যও বৃদ্ধি পায়নি।
তিনি বলেন, বিমান ভাড়া বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি তো পায়নি বরং গতবারের চেয়ে অনেক কমেছে। গতবার প্রতি লিটার জেড ফুয়েলের মূল্য ছিল ৭১ সেন্ট, এ বছর তা কমে ৫৮ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিমান ভাড়া বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটি কারণ হতে পারে ট্যাক্স বা চার্জ বৃদ্ধি পাওয়া। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশ সরকার বা রাজকীয় সৌদি সরকার হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার ওপর কোনো নতুন ট্যাক্স বা চার্জ আরোপ করেনি।
ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সগুলো সকল হজযাত্রীদের পরিবহন করে না দাবি করে সভাপতি বলেন, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হজযাত্রী সাধারণ শিডিউল ফ্লাইটে পরিবহন করে থাকে। শিডিউল ফ্লাইটে কম ভাড়ায় সাধারণ যাত্রীদের সাথে হজযাত্রীদের বেশি মূল্যে পরিবহন করছে। ডেডিকেটেড ফ্লাইট ও শিডিউল ফ্লাইটের হজযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
বছরের অন্য সময়ে ওমরা হজযাত্রীসহ অন্যান্য যাত্রীদের সৌদি আরবে একবার যাওয়া আসা বিমান ভাড়া ৪৪ হাজার টাকা থেকে ৫৭ হাজার টাকা জানিয়ে তসলিম বলেন, তাই হজের ক্ষেত্রে দুইবার যাওয়া আসার খরচ হতে পারে ৮৮ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
বর্তমানে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া তুলনামূলকভাবে অন্য দেশ থেকে অনেক বেশি জানিয়ে হাব সভাপতি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে হজযাত্রী পরিবহনে আগ্রহী এয়ারলাইন্সগুলো থেকে দরপত্র আহ্বান করে সর্বনি¤œ বিমান ভাড়া নির্ধারণ এবং তাদের অধিকার ও সুবিধাদি নিশ্চিত করে থাকে। কোনো এয়ারলাইন্সকে দরপত্র ছাড়া হজযাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, সংগত কারণেই বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহনে আগ্রহী এয়ারলাইন্সগুলো থেকে দরপত্র আহ্বান করে যৌক্তিক পর্যায়ে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা যেমন সম্ভব, তেমনি হজযাত্রীদের জন্য এয়ারলাইন্সগুলোর সেবা প্রদান নিশ্চিত করাও সম্ভব।
হজ প্যাকেজ এখনো চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ভাড়া কমবে। এরপর আমরা হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করব।
ভাড়া বৃদ্ধির জন্য বিমান কী যুক্তি দিয়েছে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন, তারা জানিয়েছে ডলার প্রতি মূল্য বেড়েছে ৭৫ পয়সা, এ জন্য তারা ভাড়া বাড়িয়েছে। প্রতি ডলারের দাম ৭৫ পয়সা বাড়লেও একজন হজযাত্রীর ভাড়া সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ টাকা বাড়ে। সেখানে ১২ হাজার টাকা বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে হাবের মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মো. মাজহারুল হক ভূঁইয়াসহ হাবের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।