নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদকাসক্তি দেশের তরুণ সম্প্রদায় তথা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ। মাদক যেখানে রয়েছে সেখানে অবৈধ অস্ত্র, চোরাচালান, নারী পাচার, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইনের পাশাপাশি বর্তমানে আইস, এলএসডিসহ নতুন কিছু মাদকের প্রচলন দেখা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘‘মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স” নীতির আলোকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন “চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে” এই ¯েøাগানকে সামনে রেখে প্রতিনিয়ত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি র্যাব মাদক বিরোধী অভিযানে প্রায় দেড় লক্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক অপরাধীদের গ্রেফতারসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। উদ্ধার করা হয় প্রায় ৯ লক্ষ পিস ইয়াবা, ১০৩৫ কেজির অধিক হেরোইন, প্রায় সাড়ে ৪০ লক্ষ বোতল ফেন্সিডিল, ৩ লক্ষ ৭ হাজার বোতলের অধিক বিদেশি মদ, প্রায় ৭৫ লক্ষ লিটার চোলাই মদ, ১ লক্ষ ৭৩ হাজার কেজির অধিক গাঁজা, প্রায় ৬ লক্ষ ৫৫ হাজার বোতল বিয়ার, ২৩৬ কেজির অধিক আফিম, ৫ লক্ষ ৫২ হাজারের অধিক পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশন, ৯০ লক্ষাধিক পিস ড্রাগ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব ২০২৩ সালে সারাদেশে ৪৪৫৩টি অভিযান পরিচালনা করে ৯,৯৩৯ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। এসব অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৯৫,২৯,৪১৯ পিস ইয়াবা, ১২৭.২৫০ কেজি হেরোইন, ১,২৩,০৫৪ বোতল ফেনসিডিল, ১৪,৭০০ বোতল বিদেশি মদ, ৭৮,২৪২.৩৮ লিটার চোলাই মদ, ২৫,৮৫৩.৩৫ কেজি গাঁজা, ৬,৭৫৬ বোতল বিয়ার, ১১.৪৪৫ কেজি আফিম, ৭০,৫২৭ পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশন, ২,১৮,৯৮৩ পিস ড্রাগ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য।
ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইনের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদকের মধ্যে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ, এলএসডিসহ নতুন কিছু মাদকের প্রচলন দেখা যায়। র্যাব ইতোমধ্যে ৬১ কেজির অধিক আইস উদ্ধার করে। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসে ইয়াবার মূল উপাদানে এমফিটামিন এর পরিমান অনেক বেশি থাকে। তাই মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুন ক্ষতিসাধন করে এই আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিস্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারিরীক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এই মাদকে আসক্ত হয়ে মাদকাসক্তরা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।
২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য মাদক বিরোধী অভিযানসমূহ যথাক্রমে,
গত ০২ ফেব্রæয়ারি ২০২৩ তারিখ রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১২ এর একটি আভিযানিক দল গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং নওগাঁ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইনসহ চক্রের অন্যতম মূলহোতা মোঃ শাকিবুর রহমান (৩৫), নিয়ামতপুর, নওগাঁ ও তার সহযোগী, মোসাঃ রাজিয়া খাতুন (৩৩), গোদাগাড়ী, রাজশাহী, এবং মোসাঃ সেলিনা খাতুন @শিরিনা (৩৮), স্বামীঃ মোঃ সাকিবুর রহমান, নিয়ামতপুর, নওগাঁদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গত ০৬ মে ২০২৩ তারিখ রাতে র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালির সফিউল্ল্যাহ কাটা সংলগ্ন এলাকার ইরান মাঝির আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত অবস্থায় আনুমানিক ১২০ কোটি টাকা মূল্যমানের ২৪.২ কেজি আইসসহ কক্সবাজার কেন্দ্রিক আইস চোরাচালানের অন্যতম হোতা ইমরান @ ইরান মাঝি (৩৩), ও তার সহযোগী মোঃ রুবেল @ ডাকাত রুবেল (২৬), উভয়ের পিতাঃ মৃত সিরাজুল ইসলাম, উখিয়া, কক্সবাজার মোঃ আলাউদ্দিন (৩৫), পিতাঃ মৃত আলী আহাম্মদ, রাজপালং, উখিয়া, কক্সবাজার এবং জয়নাল আবেদীন @ কালা বদা (৩৭), পিতাঃ মৃত আব্দুল করিম, টেকনাফ, কক্সবাজার’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ২১ মে ২০২৩ তারিখ র্যাব-৯ এর একটি আভিযানিক দল হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২০২ (দুইশত দুই) কেজি গাঁজা উদ্ধার পূর্বক ২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ২৯ মে ২০২৩ তারিখ র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একজন মহিলাসহ পাঁচ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ৯ লক্ষ পিস ইয়াবা।
গত ২০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল বান্দরবান সদরের হাফেজ ঘোনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তিন কোটি টাকা মূল্যের ৩.২ কেজি আফিম উদ্ধারসহ একজন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করেছে।
গত ২১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ র্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল গাইবান্ধার খামার কামারজানি প্রত্যন্ত চর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১৬৯২ বোতল বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়।
গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ র্যাব-৫ এর একটি আভিযানিক দল চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাদক সম্রাট মোঃ শরিফুল ইসলাম @ধুলু মিয়া (৫০), পিতাঃ মৃতঃ নসিমুদ্দিন এবং তার ছেলে মোঃ মোমিনুল ইসলাম চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, চাপাইনবাবগঞ্জদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের বাড়ীর পিছনে বাঁশ ঝারে মাটির গর্তে প্লাষ্টিকের ড্রামে অভিনব কৌশলে লুকানো অবস্থায় ১০ কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হয়। চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে এই স্লোগানকে সামনে রেখে মাদকের বিরুদ্ধে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।