নিজস্ব প্রতিবেদক : হযরত শাহজালাল আমত্মর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে উদ্ধারকৃত ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনের চালানের দেশি-বিদেশি নেটওয়ার্ক সনাক্তপূর্বক মূল-হোতাসহ একাধিক দেশি-বিদেশী নাগরিক গ্রেপ্তার এবং গুরম্নত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর কর্মকর্তারা, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অত্যান্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ মাদকের মরণ ছোবল থেকে তরম্নন সমাজকে রক্ষার জন্য ঢাকা মহানগরীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (উত্তর) এর জোরালো কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানিক টিম হযরত শাহজালাল আমত্মর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ২৪ জানুয়ারি অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আমত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যমত্মর থেকে প্রায় ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ মালাউ এর মহিলা নাগরিক গ্রেফতার করা হয় এবং ২৫ জানুয়ারি অভিযান পরিচালনা করে ২০০ গ্রাম কোকেনসহ তানজেনিয়ার নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত চালানটি দেশের ইতিহাসে কোকেনের সর্ববৃহৎ চালান।
বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং এই কোকেন সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ককে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ প্রদান করে।
গত ২৫ জানুয়ারি থেকে আজ রবিবার ২৮ জানুয়ারি পর্যমত্ম আমাদের একাধিক টিম উক্ত নেটওয়ার্কটিকে আইনের আওতায় আনার জন্য মাঠে নেমে যায় এবং তদমত্ম কার্যক্রম শুরম্ন করে।
গত ২৪ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারি গ্রেফতারকৃত মালাউ এর নাগরিক NOMTHANDAZO TOWERA SOKO (35) এবং তানজেনিয়ার নাগরিক Mohammadi Ali Mohammad এর কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ও তাদের ডিজিটাল ডিভাইসসমূহ ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশেস্নষণ করে কোকেন চোরাচালান চক্রের অন্যান্য সদস্যসহ মূল হোতা Don Franki বা Jacob Franki নাম জানা যায়। Don Franki বা Jacob Franki যে Big Boss নামে তাদের কমিউনিটিতে পরিচিত। সে মূলত এই কোকেন সিন্ডিকেটের মূলহোতা ও মাস্টারমাইন্ড। নামমাত্র গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে সে কোকেন চোরাচালান কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও সে বাংলাদেশ নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট। বেশ কিছু গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে Kelvin Yenge (42) কে গ্রেফতার করা হয়। Kelvin Yenge এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। কোকেনের চালান বাংলাদেশ পর্যমত্ম পৌছানোর সমন্বয়কারী হলো Kelvin Yenge । গত ২০/০১/২০২৪ ইং তারিখে সে Mohammadi Ali Mohammad এর সাথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকারী দেশী-বিদেশী এই সিন্ডিকেটের সাথে সমন্বয় করে। গত ২৪ জানুয়ারি, কোকেনের চালানটি আটক হওয়ার সংবাদ পেয়ে সে দেশ ত্যাগের প্রস্ত্ততি নিচ্ছিল। বাংলাদেশ ত্যাগ করার প্রস্তুতিকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মাস্টারমাইন্ড Don Franki এর বাংলাদেশী সমন্বয়কারী রনি-এর বিষয়ে আমরা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক গোয়েন্দা নজরদারি করতে থাকি এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বসুন্ধারা এলাকা থেকে আটক করা হয়।
রনি এই সিন্ডিকেটের বাংলাদেশী সমন্বয়কারী সে একটি এগ্রো মেশিনারিজ কোম্পানীর পরিচালক। Don Franki এর সাথে দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ তার ব্যবসায়ীক লেনদেন ছিল। তার কাজ ছিল মাদক বহনকারীদের দেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ইনভাইটেশন, হোলেট রির্জাভেশন ও ভিসা প্রাপ্তির কার্যক্রম তদারকি করা এবং সে Maspex Limited নামক অসিত্মত্বহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভূয়া ইনভাইটেশন লেটার প্রস্ত্তত করে Don Franki এর নিকট প্রেরণ করতো। তার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইস বিশেস্নষণ করে একাধিক ভূয়া ইনভাইটেশন লেটার ও Don Franki এর সাথে যোগসূত্রতা পাওয়া গেছে।
গ্রেফতারকৃত রনি এর কাছে Don Franki এর বারিধারায় অবস্থিত অফিস-কাম বাসার ঠিকানা পাওয়া যায়। তাকে নিয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং তলস্নাশি করে কোকেন চোরাচালান সিন্ডিকেটের গুরম্নত্বপূর্ন তথ্য এবং কোকেন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ল্যাগেজ ও ৭০ গ্রাম কুশ পাওয়া যায়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশেস্নষণ ও বাড়ির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, Don Franki দীর্ঘ ০৯ মাস আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তার অবর্তমানে Don Franki এর ভাই Wissly এবং Don Franki এর ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল উক্ত বাসায় থেকে ব্যবসা দেখাশুনা করে।
কোকেন চালান আটকের সংবাদ পেয়ে তারা আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে Don Franki এর বাংলাদেশী ম্যানেজার বারিধারা এলাকা হতে আটক করা হয়। আটকের পরে সে জানান, বাংলাদেশে কোকেনের চালান প্রবেশের পরে পুনঃপ্যাকেজিং, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা দায়িতব ছিল তার। তার ডিজিটাল ডিভাইস বিশেস্নষণ করে এ সংক্রামত্ম প্রমাণাদি পাওয়া গেছে।
আটককৃত আপেলকে জিজ্ঞাসাবাদে এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় বিদেশী (নাইজেরিয়ান) সদস্যদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে বসুন্ধারা এলাকা থেকে নাইজেরিয়ান নাগরিক Oskar, Ndulue Ebuka Stanley @Podosky (31) গ্রেফতার করা হয়।
Oskar কে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, Don Franki এর ভাই Wissly বারিধারা বাসায় থেকে বাংলাদেশ থেকে কোকেন টানজিটের বিষয়টি সমন্বয় করে। Oskar এর ডিজিটাল ডিভাইসসমূহ বিশেস্নষণ করে Don Franki এবং Wissly এর সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। Oskar এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে Ndulue Ebuka Stanley @Podosky কে গ্রেফতার করা হয়। Oskar জানায়, বাংলাদেশ থেকে কোকেন ট্রানজিটের কাজে Ndulue Ebuka Stanley @Podosky সহায়তা করে। Wissly এর বিষয়ে সে জানায় ২-৩ দিন আগে সে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের তথ্য যথাক্রমে, মোঃ সাইফুল ইসলাম রনি (৩৪), পিতা- মো: গোলাম ফারম্নক, থানা: শিবচর, জেলা: মাদারীপুর। মোঃ আসাদুজ্জামান আপেল (২৭), পিতা- মোঃ মোতালেব সরকার, থানা: রাজারহার, জেলা-কুড়িগ্রাম। Kelvin Yenge (42), Country: Cameroon. Nonso Ezema Peter @ oskar (30), Country: Nigeria. Ndulue Ebuka Stanley@Podosky (31) , Country: Nigeria.
তদমেত্ম আগত আসামীদের ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকরণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।