মানিকগঞ্জে খাদ্য পণ্যের নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অংশীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মশালার কিছু দৃশ্য।
নিজস্ব প্রতিনিধি (মানিকগঞ্জ) : জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং গ্লোবাল এল্যাইন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) এর যৌথ উদ্যোগে ভোজ্য তেল সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে খাদ্য পণ্যের নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর নিশ্চিত করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ( প্রশিক্ষণ ও প্রচার,অতিঃ দাঃ) আতিয়া সুলতানা।
আজ রবিবার ২৫ ফেব্রুয়ারি, সকাল ১১ টায় ” ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা ” মানিকগঞ্জে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও গ্লোবাল এল্যাইন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) এর যৌথ উদ্যোগে ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর আলোকে ভোজ্য তেল সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে খাদ্য পণ্যের নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অংশীজনের অংশগ্রহণে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মানিকগঞ্জ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আশেক মাহফুজ, পোর্টফোলিও লিড, গেইন, মারুফা নাজনীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মানিকগঞ্জ, ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম, ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. হাসিব আহসান।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ ও সহকারী পরিচালকগণ, মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, মানিকগঞ্জ জেলা এর নিরাপদ খাদ্য অফিসার, মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বাজার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধিবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আইনের মাধ্যমে ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়। তিনি এই কার্যক্রমের প্রেক্ষাপট হিসেবে দেশের স্কুলগামী শিক্ষার্থী, গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধ দানকারী মায়েদের ভিটামিন এ স্বল্পতার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন,গেইন ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ করার যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তাতে সহযোগী হিসেবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করছে। এই কর্মশালা উপস্থিত সদস্যগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইলফলক হয়ে থাকবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস। এরপর অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
‘বাংলাদেশে ভোজ্য তেল সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন গেইন এর কো-অর্ডিনেটর লাইলুন নাহার। তারপর অধিদপ্তর কর্তৃক খোলা ভোজ্য তেল বিষয়ে পরিচালিত তদারকি কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. হাসিব আহসান বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও গেইন এর উদ্যোগে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ফলে মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন হয়েছে। খোলা ভোজ্য তেল পরিহারের ক্ষেত্রে এবং আয়োডাইজড লবন ক্রয়ের ক্ষেত্রে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি বর্ণিত কর্মশালার ন্যায় এ সকল কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানান।
কর্মশালায় ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন ভোক্তা সচেতন হলে তাঁদের অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এই কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সচেতন হবো এবং অন্যান্যদের সচেতন করব এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
মারুফা নাজনীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মানিকগঞ্জ কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই কর্মশালার মাধ্যমে ভোক্তা হিসেবে আমি আমার নিজের অধিকার সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং সচেতন হয়েছি। তিনি প্রান্তিক পর্যায়ে অধিদপ্তর কর্তৃক প্রচারণা কার্যক্রম বেগবান করার অনুরোধ জানান।
গেইন এর পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ তাঁর বক্তব্যের শুরুতে অধিদপ্তরসহ সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।তিনি বাংলাদেশে ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে গেইন এর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি খোলা ভোজ্য তেল এর ক্ষতিকর দিক বর্ণনার পাশাপাশি প্যাকেটজাত ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেলের সুফল সম্পর্কে সভায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি অধিদপ্তর ও গেইন এর যৌথ উদ্যোগে খোলা ভোজ্য তেল বন্ধের লক্ষ্যে এই কর্মশালাসহ গৃহীত কার্যক্রমের সফলতা কামনা করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
আলোচনায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ভাষা শহীদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের শহীদ সকল সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি গেইন ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রম বাজার তদারকি, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬১২১, অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং সিসিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন। তিনি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর গুরুত্বপূর্ণ দিক কর্মশালায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, CCMS (Consumer Complaint Management System) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।মহাপরিচালক আলোচনায় বলেন, যেকোনো তথ্যর জন্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বর ১৬১২১ এ ফোন করে ভোক্তাগণ তথ্য জানতে পারছেন।
তিনি জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য (যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়) স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অধিদপ্তর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে SCMS(Supply Chain Management Software) শীর্ষক একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এসকল পণ্যের অবৈধ মজুদ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।
তিনি বলেন, ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইনের আওতায় পেট বোতলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা গেলেও খোলা তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। তিনি আরও বলেন, খোলা তেল বন্ধ করে প্যাকিং এর আওতায় নিয়ে আসলে তাতে ভিটামিন এ নিশ্চিত করাসহ কতিপয় ব্যবসায়ীদের অবৈধ চর্চা সনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।আলোচনায় তিনি বলেন, অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয় বরং ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে।
পরিশেষে তিনি কর্মশালার সফলতা কামনা করেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলে মিলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক, মানিকগঞ্জ রেহেনা আকতার তাঁর বক্তব্যের শুরুতে কর্মশালা আয়োজনের জন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও GAIN কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সরকারের খুব কার্যকর একটি দপ্তর। গত কয়েক বছর ধরে এই দপ্তরের কার্যক্রম আরও প্রানবন্ত হয়েছে। তিনি বলেন ভোক্তা সাধারণের স্বার্থে এই অধিদপ্তরের কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত বিস্তৃত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভোক্তা স্বার্থে খোলা সয়াবিন তেল বন্ধ করে প্যাকিং এর আওতায় এনে তাতে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। আলোচনায় তিনি বলেন, প্যাকেটজাত পণ্য একটি দেশের উন্নয়নের পরিচায়কও বটে। তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমসহ GAIN এর সাথে ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
এরপর মুক্ত আলোচনায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক কর্মশালায় আগত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
পরিশেষে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আজকের কর্মশালা যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক হয়েছে।তিনি আমন্ত্রিত অতিথিসহ GAIN কর্তৃপক্ষ, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা কর্তৃপক্ষ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।