চট্টগ্রামে জিবি’র ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

Uncategorized চট্টগ্রাম জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) : আজ বৃহস্পতিবার ২৭ জুন  চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এর বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, ওএসপি, বিএসপি, এসইউপি, এনডিসি, পিএসসি, এমফিল, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় অসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

সকাল ১০ টায়  বিজিবি মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে বিজিবি মহাপরিচালক স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসাথে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদ বিশেষ করে বিজিবি’র জীবন উৎসর্গকারী ০২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ০৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম ও ৭৭ জন বীর প্রতীকসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী সাফল্যের পথ পরিক্রমায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ এবং নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক সহায়তা প্রদান এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত।

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় আজ এই বাহিনী একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, এপিসি, এটিভি, আরসিভি, এয়ার বোট, অত্যাধুনিক এন্টি ট্যাংক অস্ত্র, জলযানসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি। বিজিবি আজ একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। এ বাহিনীর সদস্যদের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রশিক্ষণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গায় আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত আরও একটি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে । বিজিবি’র এই অভূতপূর্ব উন্নয়নে সার্বক্ষণিক সানুগ্রহ উদ্যোগের জন্য বাহিনীর সকল সদস্যের পক্ষ থেকে বিজিবি মহাপরিচালক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক, বীরযোদ্ধা। বিজিবি’র চারটি মূলমন্ত্র ‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’হৃদয়ে ধারণ করে নবীন সৈনিকরা এই বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে বিজিবি মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত প্রহরার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা করা। তিনি বলেন, বিজিবি হবে ‘সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক’। আর এজন্য সততা ও সত্যবাদিতা (Honesty & Integrity), আনুগত্য (Loyalty), নিষ্ঠা (Sincerity) ও শৃঙ্খলা (Discipline) – এই চারটি গুণের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে তিনি নবীন সৈনিকদের নির্দেশ প্রদান করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বাহিনীর ৩য় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের বিদায়লগ্নে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “যারা নতুন আজকে বিডিআর-এ যোগদান করেছো, যারা শপথ গ্রহণ করলা, তাদের কাছে আমার কথা রইলো- ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎপথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো।” বিজিবি মহাপরিচালক জাতির পিতার এই চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক অমূল্য কথাগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করে সীমান্তে চোরাচালান রোধসহ পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

বিজিবি মহাপরিচালক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের সর্ববিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৩০৬ রিক্রুট (জিডি) মোঃ মিনহাজ হোসেন রাফি, শারীরিক উৎকর্ষতা (পুরুষ) ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৬৩২ সিপাহী আবু হুরায়রা ও সর্ব বিষয়ে ৩য় ও শারীরিক উৎকর্ষতা (মহিলা) বিষয়ে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৭১৬ সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম এবং ফায়ারিং-এ শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বক্ষ নম্বর-৬৪১ সিপাহী মোঃ শাহিন উদ্দিন এর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকসদল কর্তৃক বিজিবি মহাপরিচালককে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরিশেষে বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।

উল্লেখ্য, বিজিবি’র ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-তে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৫৫৬ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫২০ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *