কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বেসরকারি খাতের ভুমিকাই মূখ্য” শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক  “কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বেসরকারি খাতের ভুমিকাই মূখ্য” শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে,  এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে,  আজ শনিবার  ২৯ জুন সকাল সাড়ে  ১০ টায়  ঢাকাস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-এ ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি কর্তৃক “কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বেসরকারি খাতের ভুমিকাই মূখ্য” শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়।বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।


বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।”কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে বেসরকারি খাতের ভুমিকাই মূখ্য” শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ ও প্রাইম ইউনিভার্সিটি এর বিতার্কিকগণ অংশগ্রহণ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজক ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিসহ অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিতর্কিকগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়টি সময়োপযোগী তবে বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি কুরবানির পূর্বে হলে ভালো হতো। তথাপি আগামী কুরবানিতে চামড়া শিল্পে এর ফলাফলের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক সর্বমোট রপ্তানির ৮২% এবং এর রপ্তানির আবার ৬৪% আমদানি নির্ভর। অপরদিকে চামড়া শিল্পের ১০০% ভ্যালু এড হতে পারে দেশের অর্থনীতিতে। তিনি চামড়া শিল্পে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার সম্পৃক্ততার কথা বলেন। এর মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক ঈদের দিন রাতে পোস্তা চামড়ার আড়ত, ঈদের পরের দিন সাভার ট্যানারি শিল্প পরিদর্শনসহ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ঈদের দিন হতে পরবর্তী ৫ দিন চামড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা তদারকি করেছেন মর্মে জানান।

এছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে কুরবানির পশুর চামড়া যথাযথ পদ্ধতিতে ছাড়ানো ও কাঁচা চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে অধিদপ্তর কর্তৃক মুদ্রিত সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ এবং সচেতনতামূলক টিভিসি প্রচার করা হয়। তিনি আরও বলেন, সরকার সাভারের মত নাটোর ও চট্টগ্রামে সিইটিপি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি এর পাশাপাশি এ বছর চট্টগ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে যেভাবে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে সেভাবে কুরবানির পর যথাযথভাবে লবন দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলায় সংরক্ষণ করার জন্য বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেন। হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর মতো পোস্তার ট্যানারিগুলোকেও ঢাকা শহরের বাইরে স্থানান্তর করা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

পরিশেষে তিনি সরকারি ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের চামড়া শিল্পের সোনালী দিন ফিরে আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কোরবানিতে বিপুল সংখ্যক পশু জবাই হলেও চামড়ার ন্যায্য দাম পাচ্ছে না বিক্রেতারা। কাঁচা চামড়ার বাজারে সর্বপ্রথম ধস নামে ২০১৯ ও ২০২০ সালে। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত কাঁচা
চামড়ার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

সেই সময়ে গরুর কাঁচা চামড়ার সরকার দর ছিল ৪৫-৫০ টাকা। কিন্তু আড়ৎদাররা ট্যানারী মালিকদের থেকে পূর্বের পাওনা না পাওয়ার কারণে চামড়া ক্রয় করেনি বলে জানা যায়। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে চামড়ার বাজারের সবচেয়ে কম দাম নির্ধারণ করে সরকার। সে সময়ে গরুর চামড়ার দাম ধরা হয় ৩৫-৪০ টাকা।

কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্যে গরুর চামড়া বিক্রি করা যায় নি। অথচ মাত্র ১০ বছর আগেও যখন এত মূল্যস্ফীতি মূদ্রাস্ফীতি ছিল না, তখনও গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। বর্তমানে গরুর দাম কয়েকগুণ বাড়লেও চামড়ার দাম উল্টো কয়েকগুণ কমেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে চামড়ার ক্রেতা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১২-২০১৩ সালে ২০-২৫ হাজার টাকার গরুর চামড়া আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এখন কয়েক লাখ টাকার গরুর চামড়া ৬ থেকে ৭ শ’ টাকায় বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ বছর রাজধানীতে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার ক্রয় মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, খাশির চামড়ার ক্রয়মূল্য ১৫-২০ টাকা এবং বকরির ১০-১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই লবণযুক্ত গরুর চামড়া অর্ধেক দামেও বিক্রি করা যায়নি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে চামড়ার বাজারে এই করুণ পরিস্থিতির জন্য দায় কার। ট্যানারী মালিকরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত চামড়া এলডব্লিউজি সনদপত্র না থাকায় বিশ্ব বাজারে সঠিক দামে তারা বিক্রি করতে পারছে না। ফলে কাঁচা চামড়ার চাহিদা কমে যাচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ থেকে জানা যায় ট্যানারী মালিক ও আড়ৎদাররা সিন্ডিকেট করে পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করছে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কম দামে কোরবানির চামড়া কিনতে যদি কোন সিন্ডিকেট হয়ে থাকে তাহলে মনে রাখতে হবে তারা গরীব ও অসহায় মানুষের উপর অবিচার করছে। কাঁচা চামড়ার বিক্রিত অর্থ মসজিদ মাদ্রাসাসহ এতিম, হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠির হক। অথচ এই গরীবদের ঠকিয়ে সিন্ডিকেট করে কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস নামানো হচ্ছে কি না তা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের বের করা উচিৎ। গরীব মানুষ কোরবানির গরু ছাগল নিয়ে ভাবে না।

তাদের ভাবনা ভালো দামে চামড়া বিক্রি হলে তাদের উপার্জন ভালো হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে কিন্তু গরীবের হক মেরে খেতে কোন সিন্ডিকেট গোষ্ঠির পায়তারা আছে কি না তা ভাববার কাউকে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যদিও এবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিতে কোরবানির দিন থেকেই মাঠে রয়েছে, তারা হয়তো এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

কাচা চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন নিম্নের দশ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন,উক্ত দয় দফা সমূহ যথাক্রমে,  এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিতে সাভারের হেমায়েতপুরে সিইটিপি ব্যবস্থাপনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা, ট্যানারী মালিকদের এলডব্লিউজি সনদ প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, যেহেতু গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়াক্রয়ে সিন্ডিকেটের কথা শোনা যাচ্ছে তাই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভাগীয় পর্যায়ে ট্যানারী পল্লী স্থাপন করা, চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া, চামড়ার বাজারে স্বচ্ছতা ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকরী সরকারি নীতিমালা তৈরী করা,  কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং

সচেতনতা বৃদ্ধি করা, চামড়ার গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা,  কোরবানির পর পশুর চামড়া কম দামে ক্রয়ে কোন সিন্ডিকেট আছে কি না তা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া,চামড়া বিক্রয়ের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা উন্মুক্ত করা এবং একীভূত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এবং  মধ্যস্বত্বভোগীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চামড়ার প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করা ।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রস্তাবের পক্ষে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ এবং বিপক্ষে প্রাইম ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকগণ অংশগ্রহণ করেন৷ প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ইশরাত শবনম, স্থপতি ফৌজিয়া ভূইয়া ও সাংবাদিক সেলিম মালিক।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “কাঁচা চামড়ার ন্যায্য দাম নির্ধারণে বেসরকারি খাতের ভূমিকাই মুখ্য” শীৰ্ষক ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষের সরকারি দল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, প্রস্তাবের বিপক্ষের বিরোধী দল প্রাইম ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়।প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয় ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *