সাংবাদিক হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাংবাদিক সমাজের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন 

Uncategorized জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সংগঠন সংবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  চলমান আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক হাসান মেহেদীসহ চার সাংবাদিককে হত্যার বিচার চেয়ে বুধবার (৩১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুপুর ১২টায় সাধারণ সাংবাদিক সমাজ কর্তৃক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে সাংবাদিকবৃন্দ।


বিজ্ঞাপন

উক্ত সংগঠনের আহবায়ক সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমানের সভাপতিত্তে ও মোহাম্মদ মাসুদ এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের সংগঠন কর্তৃক একাধিক ব্যানারে উপস্থিত ছিলেন-ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফোরাম, জাতীয় রিপোর্টার্স ক্লাব, মিরপুর প্রেসক্লাব, পূর্বাঞ্চল সাংবাদিক ইউনিট, মিরপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, জার্নালিষ্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশের, গ্লোবাল জার্নালিষ্ট কাউন্সিল ইন বাংলাদেশ,বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফাউন্ডেশন, এশিয়ান জার্নালিষ্ট সোসাইটি, খিলক্ষেত প্রেসক্লাব, মিরপুর রিপোর্টাস ইউনিটি, কেরানীগঞ্জ মডেল প্রেসক্লাব, কদমতলী সাংবাদিক ক্লাব, শ্যামপুর প্রেসক্লাব, ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটি, ডেমরা থানা প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি সহ আরো একাধিক সাংবাদিক সংগঠন ও সংগঠনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন এর চেয়ারম্যান মোঃ মোরশেদ আলম।


বিজ্ঞাপন

বক্তারা বলেন, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে সাংবাদিক হতাহত, গণমাধ্যমের গাড়ি ভাংচুর, আগুনে জ্বালিয়ে দেয়াসহ নজিরবিহীন যে বর্বরতা চালানো হয়েছে তার কঠোর প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সরকারি বাহিনী এবং আন্দোলনকারী উভয়েই সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে জঘণ্যভাবে হামলে পড়েছে। কোথাও লড়াইয়ের ফাঁদে ফেলে, কোথাও ঠান্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে চার জন সাংবাদিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আহত বানানো হয়েছে প্রায় দুইশ’ বিশ জন সংবাদকর্মিকে। এদের মধ্যে অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। আহত অর্ধ শতাধিক সাংবাদিকের অবস্থা গুরুতর।

সাংবাদিক সংগঠন ও সংগঠনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ছারাও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম র্মুতুজা দ্রুব ও সাবেক ডিইজের র্নিবাহী সদস্য এএইচ আল আমিন। সেদিন কি ঘটেছিলো তা তার প্রত্যক্ষ শাক্ষি দৈনিক বাংলাদেশরে আলো পত্রিকার সাংবাদিক ইমরান হোসেন ইমন সবার সামনের তুলে ধরেন।

এসময় বক্তারা তাদের দাবি উত্থাপন করে বলেন, আন্দোলন চলাকালীন দুদিনের মধ্যে চার সাংবাদিক হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আমরা অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই হত্যার শিকার সাংবাদিক পরিবারের কোনো সদস্যকে সরকারি চাকরি প্রদানসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।

পাশাপাশি আহতদের সমুদয় চিকিৎসা ব্যয়বহণসহ জরুরি আর্থিক সহায়তা প্রদানের দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের জীবন কেড়ে নেয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের পাশে তাৎক্ষণিক ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দাঁড়ানোর নজির দেখতে পেয়েছি। এগিয়ে আসতে দেখেছি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকেও। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম থাকা সাংবাদিকদের হত্যার ঘটনায় পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাদের জীবন যাপনের স্থায়ী ভিত্তি গড়ে দেওয়া খুবই জরুরি। ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদির দুটি অবুঝ সন্তান রয়েছে। নয়া দিগন্তের নিহত তুরাবের নববিবাহিত স্ত্রীর হাতের মেহেদি শুকায়নি। তাদের কাছে রাষ্ট্রের জবাব কী?

শুধু কোটা-সংস্কার আন্দোলন নয়, কোনো আন্দোলনেই একজন সংবাদকর্মী কখনো কারো প্রতিপক্ষ থাকে না। একজন সাংবাদিক না আন্দোলনকারীদের, না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। চলমান ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ করতেই কেবল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন। অথচ কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় রাজধানীসহ সারাদেশে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চার সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন।

উক্ত প্রতিবাদ সভা সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, সুরমা আলম, জিয়াউর রহমান,হাফিহুর রহমান শফিক. জুয়েল খন্দকার, মোঃ সেলিম, আকাশ মনি, সাইদুল ইসলাম, সৈয়দা রিমি, মাহাবুব আলম, জাকিআ সুলতানা, মেহেদী হাসান, আব্দুল আজিজ, সুজন শেখ, আজিজুল ইসলাম যুবরাজ।

গত  ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় সহিংসতার সময় পুলিশের গুলিতে হত্যার শিকার হন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী। ১৯ জুলাই দুপুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আন্দোলনের ছবি তোলার সময় ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক তৌহিদ জামান প্রিয় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। একই দিনে সিলেটে দায়িত্ব পালনের সময় নয়া দিগন্তের সাংবাদিক এ টি এম তুরাব গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তুরাবের দেহে আটানব্বইটি গুলি পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১৮ জুলাই দৈনিক ভোরের আওয়াজের গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি মো. শাকিল হোসেন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ, হামলার শিকার ও সংঘাতের মাঝে পড়ে অন্য সংবাদকর্মিরা আহত হয়েছেন।

সাংবাদিকেরা আন্দোলন করতে যাননি, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। তাকে কেন গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যার শিকার হতে হবে? কেন বরণ করতে হবে পঙ্গুত্ব? প্রতিটি ঘটনার ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন সাধারণ সাংবাদিক সমাজ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *