প্রতিটি গ্রাম শহরের সুবিধা পাবে: প্রধানমন্ত্রী

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজনীতি সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীনতার সুফল হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুবিধা সম্পন্ন নগরে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ পাবে। শহরে সাধারণ মানুষ যেমন নাগরিক সুবিধা পায়, গ্রামের মানুষও সেই নাগরিক সুবিধা পাবে। প্রতিটি গ্রাম হবে শহরের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নগর। পাশাপাশি একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদস্যদের সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের আনসার বাহিনী অকুতোভয়। আনসার বাহিনীর কর্মদক্ষতা ও সাহসিকতা সর্বজনস্বীকৃত।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম জাতীয় সমাবেশ-২০২০ এর কুচকাওয়াজসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন । গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আনসার-ভিডিপির সদস্যের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, জননিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন, এটাই আমাদের আশা। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে শিগগিরই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
উন্নয়নকাজে এ বাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার ও ভিডিপিকে উন্নয়নকাজে আরও সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাবেন সে আশা পোষণ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করছেন। দেশ ও জনপদকে নিরাপদ রাখতে দু’টি নারী ব্যাটালিয়নসহ এ বাহিনীতে ৪২টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে।
পার্বত্য এলাকায় এ বাহিনীর ১৬টি ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া নবগঠিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কূটনৈতিক এলাকা, কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং দেশের বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
খেলাধুলায় আনসার-ভিডিপির সদস্যদের সফলতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা খেলাধুলা ও দেশীয় সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে জাতীয় গ-ি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বাড়াচ্ছেন। সদ্যসমাপ্ত এসএ গেমসে বাংলাদেশের অর্জিত ১৪২টি পদকের মধ্যে ৬৮টি পদক অর্জন করেছেন এ বাহিনীর খেলোয়াড়রাই।
তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৬১ লাখ সদস্য রয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়ন করার কার্যক্রম সরকার হাতে নিয়েছে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ও আম্রকাননের নিরাপত্তার জন্য দু’টি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
দেশের জনগণের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এই স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষ পাবে। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন শহরের সুবিধা পায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গ্রামের মানুষও নাগরিক সুবিধা পাবে, প্রতিটি গ্রাম হবে শহরের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নগর।
কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত নৈপুণ্যের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছরই এ বাহিনীর উৎকর্ষতা বাড়ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলাদেশ স্বাধীন করেন, তখন ৮২ শতাংশের মত মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ’৭৫-এ জাতির জনককে হত্যা করার পরে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। ২১ বছর পর আমরা আবার ক্ষমতায় আসি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে আমরা দারিদ্র্যসীমা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হয়েছি, এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সেই সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিদ্যুৎ, সবকিছুর উন্নয়ন আমরা করে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা পৌনে ১১টায় বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী অভিবাদন মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতের সুর বেজে ওঠে। এরপর খোলা জিপে করে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন করেন। প্যারেড পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী আবার ফিরে যান অভিবাদন মঞ্চে।
সেখানে সেবা ও সাহসিকতাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদকপ্রাপ্ত ১৪৩ জনকে পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *