নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ওয়াসার পানির মান নিয়ে রাজধানীবাসীর হাজারও অভিযোগের মধ্যেই আবারও বাড়ানো হলো পানির দাম। শুক্রবার ঢাকা ওয়াসার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পানির উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের সামঞ্জস্য বিধান এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে ব্যয় সমন্বয় করতে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। আবাসিকে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির মূল্য ১৪ দশমিক ৪৬ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মূল্য আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এর আগে আবাসিকে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ছিল ১১.৫৭ টাকা, আর বাণিজ্যিকে ছিল ৩৭.৪ টাকা। সে হিসেবে আবাসিকে বেড়েছে প্রতি হাজার লিটার পানিতে ২ দশমিক ৮৯ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ২ দশমিক ৯৬ টাকা।
এর আগে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য পানির দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেয় ওয়াসা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেওয়া চিঠিতে ওয়াসা আবাসিক ব্যবহারের জন্য প্রতি ইউনিট বা ১ হাজার লিটার পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বর্তমান দাম ৩৪ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। সেখানে তারা কারণ হিসেবে দেখায়, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য পানির দাম বাড়ানো দরকার। এছাড়া সংস্থাটির পরিচালনা খরচ বেড়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের পানির দাম যথাক্রমে ২২ এবং ১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ঢাকা ওয়াসার পানির সংযোগ রয়েছে তিন লাখ ৯০ হাজার ৬৫১টি। এই সংযোগ থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ পানি ব্যবহার করে। বর্তমানে ঢাকায় দৈনিক পানির উৎপাদন ২৪৫ কোটি লিটার। নগরবাসীর মোট চাহিদা ২৩০ থেকে ২৩৫ কোটি লিটার।
এদিকে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ নাগরিকরা। তারা বলছেন, বিদ্যুতের পর পানির দাম বাড়ানোর কারণে এখন বাসা ভাড়া বেড়ে যাবে। যার কারণে আরো বেকায়দায় পড়বে নি¤œ আয়ের মানুষ। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, ওয়াসার পানি এমনিতেই দূষিত। পানির সঙ্গে ময়লা আসে। তার পরও গোসল, কাপড় ধোয়া, হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজে ব্যাবহার করা যায়। কিন্তু খাবারের পানি সব সময় কিনে খেতে হয়। এমনিতেই? দূষিত পানি ব্যবহার করে বাড়তি টাকা দিচ্ছি, আবারও মূল্য বাড়ালে ভাড়াটিয়ারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা জুনায়েত মানিক সকালের সময়কে বলেন, আগে ওয়াসার সেবার মান বাড়ানো উচিত। তারপর যদি পানির দাম বাড়ায়, সেটা দেখা যাবে। কিন্তু যে পানিতে ময়লা-আবর্জনা আসে, খাওয়া যায় না, সে পানির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। কাওরানবাজার এলাকার মিঠু হোসেন বলেন, আবারও দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। বরং ওয়াসার পানির মান বাড়ানোর বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, পানির দাম না বাড়িয়ে আমাদের বিকল্প কিছু ছিল না। দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে না। অন্য কোনো জায়গা থেকে ঋণ করতে হবে। আর সামান্য প্রেশার নিলে মানুষ বৃহত্তর অর্থে উপকৃতই হবে। এসব বিষয় চিন্তা করে বাস্তবতার ভিত্তিতেই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।