মন্ত্রণালয়ের তদন্তেে দুর্নীতি প্রমাণের পরও বহাল তবিয়তে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার  : অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের সিন্ডিকেটটি টেন্ডার ও পোস্টিং বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

!!  ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এইচবিআরআইয়ের গবেষণা খাতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। গবেষণা খাতের এ টাকা থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকায় ‘অটোমেটিক ব্লক মেকিং প্লান্ট’ স্থাপন করা হয়। এ কাজও পায় কিংডম বিল্ডার্স। ঠিকাদারকে সব বিল পরিশোধ করা হলেও প্লান্টটির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। এ ধরনের কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংস্থার অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রকৌশলীদের নিয়ে কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও সে ধরনের কোনো কমিটিই হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে শামীম আখতারের বক্তব্য, তার দাখিলকৃত কাগজপত্র এবং সংশ্লিষ্ট অফিসে রক্ষিত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার কর্তৃক সব যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং কাঠামো নির্মাণ করা হলেও কার্যত এটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। সব মেশিনারিজ স্থাপন করার পর প্লান্টটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য প্রাথমিকভাবে চালু করা হলে কিছু ত্রুটি দেখা দেয় এবং মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট পাওয়া যাচ্ছিল না। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও প্লান্টটি সম্পূর্ণরূপে চালু অবস্থায় বুঝে না পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাবরে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো কারিগরি কমিটি কর্তৃক বাস্তবায়ন প্রতিবেদন নেওয়া হয়নি। সার্বিক পর্যালোচনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ফাংশনাল অবস্থায় বুঝিয়ে না দেওয়া সত্ত্বেও ওই প্রকল্পটির সম্পূর্ণ বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম না হলেও বিল পরিশোধে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। তা ছাড়া শামীম আখতারের বদলির পর পরবর্তীতে বর্ণিত প্লান্টটির বিষয়ে কোনো কার্যক্রমই গ্রহণ করা না হওয়ায় প্লান্টটির মেশিনারিজ অযতেœ অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় প্লান্টটির ক্ষতি হচ্ছে মর্মে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে  !!


বিজ্ঞাপন
আলোচিত ও সমালোচিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার।

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক  : গণপূর্ত অধিদফতর  প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ  শামীম আখতারকে ঘিরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আলম ও কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট টেন্ডার ও পোস্টিং বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে এক অভিযোগ পাওয়া গেছে এছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালেয়ের তদন্তে দুর্নীতি প্রমানের পরও বহাল তবিয়তে থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার চালিয়ে যাচ্ছেন নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতি, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে,  গণপূর্ত অধিদফতরে প্রায় চার বছর ধরে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মনিটরিং) মো. আশফাকুল ইসলাম বাবুলকে আহ্বায়ক করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রায় এক বছর আগে তদন্ত প্রতিবেদন সচিবের কাছে জমা দিলেও প্রধান প্রকৌশলী মন্ত্রীর কাছের লোক হওয়ায় প্রভাব বিস্তার করে তদন্ত প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থার কর্মকর্তারা। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে বিসিএস (পাবলিক ওয়ার্কস) ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের মেধাতালিকার প্রথম স্থানে থাকা আশরাফুল আলমের বাড়ি বগুড়া হওয়ার কারণে প্রধান প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক মাস পরেই তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে ছয়জনকে ডিঙিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শামীম আখতারকে। মন্ত্রীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে প্রভাব বিস্তার করে মেধাতালিকায় ৭ নম্বরে থাকার পরও প্রধান প্রকৌশলী পদে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চলতি দায়িত্ব পান শামীম আখতার। প্রায় চার বছর ধরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ (গ্রেড-১) এই পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ছয় মাসের বেশি কাউকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

শামীম আখতার হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক থাকাকালীন তার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্সসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে কার্যাদেশ দেওয়াসহ কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মনিটরিং) মো. আশফাকুল ইসলাম বাবুলকে আহ্বায়ক করে দুজন যুগ্ম সচিবকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি অভিযোগগুলোর মধ্যে তিনটি অভিযোগের প্রমাণ পায়। প্রায় এক বছর আগে তদন্ত প্রতিবেদন সচিবের কাছে জমা দিলেও প্রধান প্রকৌশলী তদন্ত প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এইচবিআরআইয়ের গবেষণা খাতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। গবেষণা খাতের এ টাকা থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকায় ‘অটোমেটিক ব্লক মেকিং প্লান্ট’ স্থাপন করা হয়। এ কাজও পায় কিংডম বিল্ডার্স। ঠিকাদারকে সব বিল পরিশোধ করা হলেও প্লান্টটির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। এ ধরনের কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংস্থার অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রকৌশলীদের নিয়ে কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও সে ধরনের কোনো কমিটিই হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে শামীম আখতারের বক্তব্য, তার দাখিলকৃত কাগজপত্র এবং সংশ্লিষ্ট অফিসে রক্ষিত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার কর্তৃক সব যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং কাঠামো নির্মাণ করা হলেও কার্যত এটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। সব মেশিনারিজ স্থাপন করার পর প্লান্টটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য প্রাথমিকভাবে চালু করা হলে কিছু ত্রুটি দেখা দেয় এবং মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট পাওয়া যাচ্ছিল না। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও প্লান্টটি সম্পূর্ণরূপে চালু অবস্থায় বুঝে না পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাবরে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো কারিগরি কমিটি কর্তৃক বাস্তবায়ন প্রতিবেদন নেওয়া হয়নি। সার্বিক পর্যালোচনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ফাংশনাল অবস্থায় বুঝিয়ে না দেওয়া সত্ত্বেও ওই প্রকল্পটির সম্পূর্ণ বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম না হলেও বিল পরিশোধে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। তা ছাড়া শামীম আখতারের বদলির পর পরবর্তীতে বর্ণিত প্লান্টটির বিষয়ে কোনো কার্যক্রমই গ্রহণ করা না হওয়ায় প্লান্টটির মেশিনারিজ অযতেœ অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় প্লান্টটির ক্ষতি হচ্ছে মর্মে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্লান্টের শেড নির্মাণের জন্য ৭০ লাখ টাকার কাজে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই কিংডম বিল্ডার্সকে নিযুক্ত করা হয়। অর্ধকোটি টাকার কাজ আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্থি এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয় যার মালিক আল আমীন ও শামীম আখতারের (পীর সাহেব) মুরিদ। সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ই-জিপির উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৭০ লাখ টাকার প্রকল্পটির টেন্ডার করা হয়। তবে প্রকল্পটি ২০১৯ সালের হলেও নথিতে রক্ষিত চুক্তিপত্রটি ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছে মর্মে দেখা যায়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, চুক্তিপত্রটি যথাসময়ে স্বাক্ষর না করে পরবর্তীতে করা হয়েছে। অর্থাৎ ওই প্রকল্পটি চুক্তি স্বাক্ষর না করেই বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। তা ছাড়া অভিযোগে বর্ণিত অর্ধকোটি টাকার আরেকটি কাজের তথ্য বিশ্লেষণে মনে হয় এটি একটি পৃথক কাজ। সুতরাং অভিযোগে উল্লিখিত ৭০ লাখ টাকার প্রকল্পটির চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় করা হয়েছে বলে কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগের বিবরণে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৈনিক ২০ ঘনমিটার ব্লক উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্যে ‘এএসি প্লান্ট’ উন্নয়নকাজে ২০১৯ সালে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। কাজটি করে কিংডম বিল্ডার্স, অর্থি এন্টারপ্রাইজ ও জামান বিল্ডার্স। ঠিকাদারদের সিংহভাগ বিল দেওয়া হলেও এখানেও চালু হয়নি প্লান্টটি, উল্টো কাজ শেষ করতে আরও সাড়ে ৩ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে তারা। অভিযোগের বিষয়ে শামীম আখতারের বক্তব্য, তার দাখিলকৃত কাগজপত্র এবং সংরক্ষিত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় বিল প্রদানের ক্ষেত্রে প্রথা অনুযায়ী এমবি (মেজারমেন্ট বুক) যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। কারিগরি যন্ত্রপাতি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির গুণগত মান নিশ্চিত না হয়েই প্রায় ৯০ শতাংশ বিল প্রদান করায় নিয়মের ব্যত্যয় করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া একই মাসে প্রায় ১ কোটি টাকার এইচবিআরআইয়ে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় তার মুরিদের প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্স। চুক্তির চেয়ে ঠিকাদারদের ৮ লাখ টাকা বেশি বিল দেওয়া হলেও কাজটি থেকে যে অন্যদিকে দরপত্রের আগেই অফিস সংস্কারের কাজ শুরু করে দেয় অর্থি এন্টারপ্রাইজ।

অভিযোগের বিষয়ে এইচবিআরআইর সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে গণপূর্ত অধিদফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজে কথা না বলে অধিদফতরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে জবাব দেন। তিনি বলেন, প্রতিটি অভিযোগের জবাব তদন্ত কমিটির কাছে প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে- অধিকাংশ অভিযোগই ভিত্তিহীন।

গণপূর্ত অধিদফতর  প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ  শামীম আখতার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আলম ও নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটটির টেন্ডার বানিজ্য  ও পোস্টিং বাণিজ্যসহ  গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালেয়ের তদন্তে দুর্নীতি প্রমানের পরও বহাল তবিয়তে থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার চালিয়ে যাচ্ছেন নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতি, এহেন বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সহ অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সচেতন মহল।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *