কুমিল্লার  দেবিদ্বার সরকারি হাসপাতালে ঔষধ ও এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে ত্রি-রত্নের জালিয়াতি প্রকাশ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ স্বাস্থ্য

কুমিল্লা প্রতিনিধি : ৫০ সয্যা বিশিষ্ট কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে যেয়ে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড সার্জিক্যাল’ কর্তৃক সরবরাহকৃত ছয় গ্রæপের ১২ টি কার্যাদেশের বিভিন্ন ঔষধ ও মালামালের স্তুপ। গত ১৯ দিন ধরে এসব মালামাল হাসপাতাল ফ্লুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।


বিজ্ঞাপন

এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা রোগির সংখ্যার দিক থেকে ‘কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ ও ‘সদর হাসপাতালের’ পরের স্থান। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও মাঝে মাঝে ভর্তি রোগির পরিমান থাকে শতাধিক। হাসপাতালটি উপজেলা সদর এবং ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহা-সড়কের পাশে হওয়ায় ‘জরুরী বিভাগ’ ছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগির পরিমান দাড়ায় সহস্রাধিক। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগি স্বল্প আয়ের এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশদারিত্ব বেশী।


বিজ্ঞাপন

যেগুলো চাহিদার তুলনায় কয়েকগুন বেশী। রোগিদের নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ও বিভিন্ন সামগ্রীর চেয়ে অপ্রয়োজনীয় ঔষধ ও বিভিন্ন সামগ্রীর পরিমান ছিল বেশী এবং নিম্নমানের।
গত ২১ ও ২২ জানুয়ারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহকৃত ঔষধ ও মালামাল সার্ভে কমিটির সদস্য ডাঃ মো. নাজমুল হাসান সাঈদ (জুনিয়র কনসাল্টেন্ট), ডাঃ মো. কবির হোসেন (আর এমও) এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি ডাঃ শফিকুল ইসলাম এসব মালামাল পর্যবেক্ষণ করে অনুমোদন দেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় উপস্থিত সাংবাদিক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও স্থানীয়রা নিম্নমানের, অপ্রয়োজনীয় এবং পরিমানের চেয়ে অতিরিক্ত হওয়ায় সার্ভে কমিটিকে ইজিবির নিয়ম বহির্ভূত কোন ঔষধ ও মালামাল গ্রহন না করার অনুরোধ জানান।
এসব সরবরাহকৃত মালামাল সংরক্ষনেরও কোন গুদাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। গত ২০২০ সালে মালামাল সংরক্ষণে পুরাতন ভবনের পুরুষ ওয়ার্ড পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে ওই ওয়ার্ডকে মালামাল রাখার গুদাম করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

সরবরাহকৃত ঔষধের মেয়াদ কার্যাদেশে ২ বছরের থাকলেও কিছু ঔষধ প্রায় ৬/৭ মাস অতিবাহিত হয়েগেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেকের গুদামে ১৫২ পিস বালিশ রয়েছে, চাহিদাপত্রে ৩ শত বালিশের ওয়ার্ক অর্ডার থাকলেও এ চাহিদার ২০% অতিরিক্ত করলে ৩ শত ৬০ পিস সরবরাহ করার কথা, সেখানে বালিশ আনা হয়েছে ২ শত ৭৫ টাকা দরে ৫ শত ৭০ পিস, অপরদিকে টেন্ডার আইডির ক্রমিক নং ১৬তে ট্যাবলেট সেফুরেক্সিম ৫০০ গ্রাম + ক্লাভনিক এসিড ১২৫ গ্রাম দরপত্রে চাওয়া হয়ে ছিলো ৬৫০ পিস, ট্যাবলেটের দাম ৬০ টাকা কিন্তু কার্যাদেশ দুটিতে সর্বমোট ৭ হাজার ৩ শতটি ট্যাবলেটের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে, ৬৫০ পিস ট্যাবলেটের শর্তানুযায়ী সর্বোচ্চ শতকরা ২০% বাড়ানো গেলেও, এই পরিমান চাহিদা দেয়া কোন প্রকারেই সম্ভব নয়। এখানে শুধুমাত্র একটি আইটেমই নয়, সকল গ্রুপের সকল আইটেমেই এই জালিয়াতি করা হয়েছে যার সব কিছুতেই চরমভাবে অনিয়ম করেছেন।

এই ঔষধটি (ট্যাব. সেফুরেক্সিম ৫০০ গ্রাম + ক্লাভনিক এসিড ১২৫ গ্রাম) পঞ্চম প্রজন্মের এন্টিবায়োটিক, একজন রুগীর জন্য ১২-১৪ টি ট্যাবলেট প্রয়োজন, মাত্র ৫ শত ৩০ জন রুগীর সেবা প্রদানে কার্যাদেশ মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৩ লক্ষাধিক রোগিকে বঞ্চিত করা হয়েছে।  সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সেবায় কার্যাদেশে একটি প্যারাসিটামল টেবলেট সরবরাহ করা হয়নি। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সকল প্রকার এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করণ নিরুৎসাহিত করে দিবস পালন করে থাকে, সেখানে একই অধিদপ্তরের কর্মরত কর্মকতা হয়েও এই দ্বৈত্ব নীতি গ্রহণ করায় সংশ্লিষ্টরা কোন জবাব দিতে পারেননি।

এ ছাড়াও ষ্টিলের আলমিরাগুলোর থিকনেস ও ওজন খুবই দূর্বল, রোগির বেড ফোমগুলো মুষ্টিবদ্ধ করলে জমাট বেঁধে যায়, টিপ পড়লে ছিদ্র হয়ে যায়, ফোম কভার ছাড়াই যেগুলোর মূল্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩ শত টাকা, গজ, বেন্ডেজ, কটন প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকগুন বেশী সরবরাহ করা হয়েছে। তা ছাড়া চুক্তি মোতাবেক সকল গ্রুপের মালামাল সমূহ ১৪ দিনের মধ্যে সরবরাহের বধ্যাবাধকতা ছিলো, যার বিষয়ে বর্তমান দায়ীত্বরত কর্মকর্তাদের কোন সদত্তোর পাওয়া যায়নি।

এখানেই শেষ নয় ই-জিপিতে দরপত্র আহব্বান করেও সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উক্ত সহোযোগী প্রতিষ্ঠানকে সার্বিক সহযোগীতায় নিয়ম বহিভর্‚তভাবে প্রতিটি এমএসআর গ্রুপের জন্য দুুইটি করে কার্যাদেশ প্রদান করে যান। ই-জিপি সিডিউল প্রতিটি গ্রুপ লট বা লট মালামালের সংখ্যা বা পরিমান নির্দিষ্ট ছিলো, যা ই-জিপি শর্তাবলী মোতাবেক আইটিটি ধারা ৫৩.১ এ প্রতিটি আইটেম শতকরা ২০% কমাতে বা বাড়ানোর এখতিয়ার সিমাবদ্ধ ছিলো।

কিন্তু তিনি প্রতিটি কার্যাদেশেই তার আর্শিবাদ পুষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সার্জিক্যালকে (বাড়ী নং ২৭, রোড নং ০৮, বøক-ই, রামপুরা, বনশ্রী, ঢাকা ১২১৯) নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ই-জিপিতে আইডি নং ১০২৭৫১৯ ঔষধ (নন ইডিসিএল) ৫১ টি আইটেমের স্থলে এক কার্যাদেশেই ৩৩ টি আইটেম এবং অপরটিতে ২০ টি আইটেমের ঔষধের চাহিদা চাওয়া হয়েছিলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে দেবীদ্বার সরকারি হাসপাতালে ঔষধ ও এমএসআর সমগ্রী ক্রয়ের জন্য গত বছরর ই-জিপিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সার্জিক্যাল’র ‘ঔষধ নন-ইডিসিএল’, ‘এমএসআর যন্ত্রপাতি সামগ্রী’, ‘গজ-ব্যান্ডেজ-তুলা সামগ্রী’, ‘লিলেন সামগ্রী’, ‘ক্যামিকেল রি-এজেন্ট সামগ্রী’ ও ‘আসবাবপত্র’সহ ছয় গ্রুপের ছয়টি আইডিতে প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার দরপত্র আহব্বান করা হয়েছে।

মূল বাজেটে এ ঔষধ সামগ্রীর মধ্যে সরকার নির্ধারিত ৭০% ঔষধ সামগ্রী ক্রয় এবং ৩০% সংশ্ষ্টি ঠিকাদার তার ইচ্ছা স্বাধীন সরবরাহ করবেন। দরপত্র দাখিলের (এবং কার্যাদেশ দেয়ার) সর্বশেষ সময়সীমা ও ছিল গত বছরের ২৪ নভেম্বর। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ৪ ডিসেম্বর।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে চাহিদা প্রদানকৃত ঔষধসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্যাম্পল(নমুনা) জমা দেয়া এবং এসকল স্যাম্পলগুলো মূল্যায়ন কমিটির কর্তৃক বাছাইকৃত সামগ্রীর গায়ে স্বাক্ষর থাকার কথা। যা অডিটকালীন সময় পর্যন্ত সংরক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *