বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা সমর্থক কর্তৃক খাগড়াছড়িতে  ১৩ বছরের কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ   : গ্রেপ্তার ৪ জন 

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর চট্টগ্রাম জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন শিক্ষাঙ্গন সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, (খাগড়াছড়ি)  :  খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের লতিবান এলাকায় রথযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় ঘুরতে গিয়েছিল ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী। রাতে বাড়ি না ফিরে কাকাবাড়িতে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। সেই নিরাপদ আশ্রয়েই গভীর রাতে হানা দেয় ছয় যুবক।


বিজ্ঞাপন

‘অবৈধ সম্পর্ক চলছে’—এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে কিশোরীর কাকাতো ভাইকে বেঁধে রেখে, পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা।


বিজ্ঞাপন

আত্মহত্যার চেষ্টা  :  ভয়ে ভীত মেয়েটি বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন

সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, “তার কিডনিতে বিষক্রিয়াজনিত জটিলতা দেখা দিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছি।”


বিজ্ঞাপন

বিক্ষোভে উত্তাল খাগড়াছড়ি  :  ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই খাগড়াছড়ি সদর, ভাইবোনছড়া ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় ও অভিযোগ :  স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন অনেকে।

মামলা ও গ্রেপ্তার : ভুক্তভোগীর বাবা ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫),এনায়েত হোসেন (৩৫),ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সাদ্দাম হোসেন (৩২)।

বাকি ২জন ধর্ষক পলাতক:পলাতকরা হলের ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদা মো. সোহেল ইসলাম।

সদর থানার ওসি মো. আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, “চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

বিএনপির পক্ষ থেকে সহানুভূতি ও সহায়তা  : গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে গিয়ে কিশোরীর খোঁজখবর নেন এবং তার পরিবারের হাতে এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা তুলে দেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার বলেন, “এই ছয়জন আমাদের কেউ নয়। অপরাধী যেই হোক, তার বিচার হওয়া উচিত। আমরাও সুষ্ঠু বিচার চাই।”

সঙ্গে ছিলেন সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, অনিমেষ চাকমা রিংকু, হাসেম ভূঁইয়া, কমল বিকাশ ত্রিপুরা, আনিসুল আলম আনিক প্রমুখ।

নারীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন : জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মঞ্জিলা সুলতানা ঝুমা বলেন, “ভিকটিমের বয়স মাত্র ১৩ বছর। আমরা মর্মাহত। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

ডব্লিউআরএন প্রতিনিধি নমিতা চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী নিপীড়নের পথ সুগম করছে। এই অবস্থার অবসান জরুরি।”

এই ঘটনা শুধু মামলা নয়—একটি সামাজিক বার্তা : এটি শুধুমাত্র একটি মামলা নয়—এটা সমাজের জন্য একটি কঠিন বার্তা। প্রশ্ন উঠছে—রাষ্ট্র কোথায়? আইনের শাসন কোথায়? একটি কিশোরী যদি একটি মেলায় গিয়েই এমন ভয়াবহতার শিকার হয়, তবে নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ কী?

এখন সময় এসেছে সোচ্চার হওয়ার, দাঁড়িয়ে পড়ার, এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *