খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক,(খাগড়াছড়ি) : পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি শুধু নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের জন্য নয়, জীববৈচিত্র্যের মহামূল্যবান ভাণ্ডার হিসেবেও পরিচিত। এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্ট, কানাডা সরকারের সহায়তায় একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে—পাবলাখালী মৌজার পাড়াবন বা ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) পরিদর্শন।

এই বনাঞ্চল ঐতিহাসিকভাবে এখানকার বাসিন্দাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে বন সংরক্ষণের মূল লক্ষ্য শুধু প্রথাগত সম্পদ রক্ষা নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পানির প্রবাহ বজায় রাখা। পাবলাখালীর ভিসিএফে রয়েছে চারটি ছড়া, যেখানে মাছ, কাঁকড়া ও চিংড়ির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে।
পাবলাখালী মৌজার হেডম্যান বিকাশ চাকমা বলেন,
“এখানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবারের মালিকানা রয়েছে। ইউএনডিপি থেকে প্রতিনিধি এসে আমাদের পাড়াবন ঘুরে দেখেছেন। আমরা যতটুকু পারি চেষ্টা করছি, ভবিষ্যতেও করব। এই বন যেন টিকে থাকে, সে জন্য সকলের সহযোগিতা দরকার।”

এখানে দেখা গেছে অসংখ্য বিরল প্রজাতির গাছ, পশুপাখি এবং ছড়া-ঝিরি-ঝর্ণার প্রাকৃতিক সমাহার। বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্টের জেলা কর্মকর্তা সুকেতন চাকমা বলেন,”আমরা মূলত কাজ করছি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য। এখানে ৭০০ একরের বেশি জায়গায় স্থানীয়রা নিজেরাই ভিসিএফ ঘোষণা করেছেন, যা খুবই প্রশংসনীয়।”

পাবলাখালী ভিসিএফের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদীপ দেওয়ান জানান,”আমাদের ভিসিএফে বন্যপ্রাণী, পাখি, বড় গাছ এবং নানা প্রজাতির সাপও রয়েছে। আমরা সবাই মিলে বন সংরক্ষণ করছি। তবে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।”
পরিদর্শনে উপস্থিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও ভিসিএফ পরিদর্শক চিং লা মং চৌধুরী বলেন,”আমরা দেখেছি পাড়াবনের ভেতরে ৪টি বড় ছড়া, অসংখ্য ঝিরি এবং ছোট-বড় ঝর্ণা রয়েছে। পানি প্রবাহ খুবই সন্তোষজনক। এছাড়া নানা প্রজাতির পাখি, পোকামাকড়ের ডাক এবং ছড়ায় মাছ ও কাঁকড়ার উপস্থিতি এক নতুন আশা জাগায়।”
বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া বলেন,”পাবলাখালীর পাড়াবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং পাড়াবাসীরা আন্তরিকতার সঙ্গে এটি রক্ষা করছে। খাগড়াছড়ির প্রতিটি পাড়াবন বায়োডাইভারসিটি কনজার্ভেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জেলা পরিষদও এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমরা বন বিভাগ থেকেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”
প্রকৃতি রক্ষার এই উদ্যোগ শুধু আজকের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যও। পাবলাখালীর পাড়াবন তাই হতে পারে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।