নিজস্ব প্রতিনিধি (সিলেট) : লন্ডনে পালিয়ে থাকা সাবেক এমপি রণজিত চন্দ্র সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আজিজুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদর বাজারের একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান থেকে তাহিরপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার আজিজুল তাহিরপুর উপজেলার সদরের সদর ইউনিয়নের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের প্রয়াত রিফাত আলীর ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

জানা গেছে , বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুর্বেই সিলেটের টিলাগড়ের আলোচিত রনজিত চন্দ্র সরকারের বদৌলতে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন ভাটি উপজেলা সদরের সদর ইউনিয়নের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের মুত আফিজ আলীর ছেলে মাছ কারবারি এখলাছুর রহমান তারা ওরফে ’একতারা, সদস্য পদ বাগিয়ে নেন একই গ্রামের মৃত রিফাত আলীর ছেলে মাছ কারবারি আজিজুল হক, এরপুর্বে একই গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে ইমরান আহমদ বিপক স্বেচ্চাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন কৌশলে।

এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আসনের তৎকালীন দলীয় এমপি রণজিত চন্দ্র সরকার বিজয়ী হওয়ার পর এখলাছুর রহমান তারা ওরফে ’একতারা, আজিজুল , বিপক প্রকাশ্যে তাদেও প্রভাব-ক্ষমতার জানান দিতে থাকেন। ওই ত্রি কারবারি তাহিরপুর উপজেলা সদর বাজারে খুলে বসে এমপি রনজিতের নামে ব্যাক্তিগত অফিস কাম তদবীরালয় রনজিত লীগ।

এরপর থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, তাহিরপুরের সরকারি বেসরকারি সব সেক্টর ছড়ি ঘুরাতে থাকেন এমপি রনজিতের প্রভাবে। ট্রেন্ডারবাজি, জলমহালে দথল পাইয়ে দেয়া সহ উপজেলা শ্রীপুর-ডাম্পের বাজার কোটগারি, সুলেমানপুর (নৌ পথে চাঁদাবাজি) ভারতীয় বিড়ি, মাদক , চিনি, কসমেটিকস, থান কাপড়, মসলা, সুপারি, খাদ্যসামগ্রী, অস্ত্র সহ সবধরণের সীমান্ত চোরাচালান, বাদাঘাট সহ উপজেলা সকল হাটবাজার ইজারার নামে খাসঁ আদায়ের নামে হরিলুট , খেয়াঘাট ইজারা, তিনটি শুল্ক ষ্টেশনে নিজেদের ছায়া লোকজন বসিয়ে চাঁদাবাজি, কলাগাঁও ছড়া নদী, জাদুকাটা, শান্তিুপুর, মাহারাম সকল নদী পাহাড়ি ছড়া থেকে সেইভ, ট্রেজারে লুটাতে থাকেন কয়েক শত কোটি টাকার খনিজ বালি পাথর ওই ত্রি কারবারি। ঘাগড়া ঘাটে বালি পাথর বাহি ট্রলার থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য একাধিক হাফপ্যান্ট পরিহিত ইয়াবা আসক্তদের বসানো একটি ক্যাডার বাহিনী। ওই ঘাটে অলিখিত ভাবে এখলাছুর রহমান তারা, আজিজুল, বিপক সহ তাদের অনুগতরা ছিলেন পার্টনার।
তাহিরপুর উপজেলা সদরে থানা পুলিশের ছত্র ছায়ায় রীতিমত গুদাম ভাড়া করে নিব্রিগ্নে মজুদ রেখে চালাতে থাকেন ভারতীয় বিড়ি, চিনি, মাদক কারবার।
উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের কলাগাঁও সীমান্ত গ্রামে মৃত জয়দরের ছেলে , স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন তালিকাভুক্ত অস্ত্র চোরাকারবারি প্রয়াত নজরুলের ভাই ওয়ার্ড যুবলীগ পদবীধারী কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আত্মগোপনে থাকা এমরুল হাসান ওরফে ট্রলি এমরল, তার সহোদর ময়মনসিংহে আত্মগোপনে থাকা ফজলু সর্দার, রাসেল, ভাতিজা মুরাদ, চাচাত ভাই অস্ত্র -ইয়াবা কারবারি,অপহরণকারি চক্রের সদস্য শামীম ওরফে হাত কাটা শামীম,চারাগাঁও মাইজহাটির পল্লী চিকিৎসক বশিরের ছেলে সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি জাভেদ, তার সহোদর সোহেল, একই গ্রামের আব্দুল গফুর ওরফে রাণী গফুরের ছেলে ভারতে মুদ্রা, স্বর্ণ (হুন্ডির টাকা-স্বর্ণ পাচারকারি) আওয়ামী লীগ সদস্য বিভিন্ন সময়ে ভারত, রাজধানী ঢাকা, সিলেটে আত্মগোপনে থাকা সাইফুল ওরফে মুরগী সাইফুল, একই গ্রামের কাজল উদ্দিনের ছেলে বিএনপি নেতা সামাদ মুন্সীর ভাই উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ভারত সহ বিভিন্ন সময়ে সিলেটে আত্মগোপনে থাকা আব্দুল কুদ্দুছ ওরফে কালা কুদ্দুছ, সংসার পাড়ের (বিএনপি) যুবদল কর্মী হবিবুর রহমান হবি, জঙ্গলবাড়ির হযরত আলী সহ সীমান্তের লাউরগড় থেকে বাগলী পর্য্যন্ত কয়লা-চুনাপাথর চোরাচালান চক্র, উপজেলা পৈলনপুর গ্রামের জীবন কৃষ্ণ তালুকদারের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ঝুমুর কৃষ্ণ তালুকদার সহ আরো শতাধিক সদস্য নিয়ে সব ধরণের চোরাচালানী মালামাল, ঘাট বানিজ্য, জলমহাল বাণিজ্য থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য আন্ত: উপজেলা সীমান্ত চোরাচালনা ও সীমান্তের ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজ চক্র গড়ে তোলে ওই ত্রি-কারবারি এখলাছুর রহমান তারা ওরফে একতারা, আজিজুল বিপক।
উপজেলার তাহিরপুর সদর বাজার, বাদাঘাট, বালিজুড়ি, ক্উাকান্দি, শ্রীপুর, ডাম্পের বাজার, একতা বাজার, আমবাড়ি, সুলেমানপুর বাজার সহ ২৮টি ভারতীয় বিড়ি মহাল অগ্রীম ২ থেকে ৩ লাখ নিয়ে অলিখিত ভাবে ইজারা দেয় রনজিত চন্দ্র সরকারের ঘনিষ্টজন কাম ক্যাশিয়ার খ্যাত এখলাছুর রহমান তারা ওরফে একতারা, আজিজুল বিপক। এসব বিড়ি মহালের আড়ালের মূলত ভারতীয় মদ, গাঁজা, ইয়াবার কারবার চালাত মহাল প্র্াপ্তরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও অদুশ্য শক্তির ইশারায় ওই উপজেলার ২৮টি ভারতীয় বিড়ি মহল চলছে গোপনে-প্রকাশ্যে।
তাহিরপুর উপজেলা সদরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজনের মুখে মুখে এখনো সরব আলোচনা রয়েছে বর্তমানে লন্ডনে পলাতক সাবেক এমপি রনজিত চন্দ্র সরকারের নাম ব্যবহার করে তাহিরপুর উপজেলা সদর বাজারে খুলে বসা অফিস কাম তদবীরালয়ে রনজিত চন্দ্র সরকারের ঘনিষ্টজন কাম ক্যাশিয়ার খ্যাত এখলাছুর রহমান তারা ওরফে ]’একতারা, আজিজুল, বিপকের জন্য সীমান্তের সেই এমরুল হাসান ওরফে ট্রলি এমরুল সহ অধিকাংশ চোরাকারবারি উপটোকন হিসাবে ভারতীয় দামি মদের বোতলের কার্টুন নিয়ে এসে স্বাক্ষাত লাভ করে করে তদবীরালয় থেকে চোরাচালানের দ্বীক্ষা নিয়ে ফিরতেন ।
আওয়ামী সরকার পতনের পুর্ব মুহুর্ত সময়ে প্রদিদিন সন্ধার পর ভোররাত পর্য্যন্ত প্রতিনিয়ত তাহিরপুর উপজেলা সদরের সদর বাজারে সাবেক এমপি রনজিত চন্দ্র সরকারের নামে প্রভাবে খুলে বসা অফিস কাম তদবীরালয়ে চলত মাদকের বড়সর আসর। তখন থানা পুলিশ-প্রশাসনের দায়িত্বীলরা এসব জেনেও ছিলেন নির্বিকার।
অভিযুক্তদের অনেকেই গ্রেফতার হয়ে হেফাজতে,আবার অনেকেই মামলার আসামি হয়ে আত¦গোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রোববার সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রাকিকুল হাসান রাসেল আজিজুলকে তাহিরপুর থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, তাহিরপুর থানায় ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দায়ের করা একটি নাশকতার মামলায় তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলায় এজাহারানামীয় অন্যান্য আসামি ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আজিজুলের অন্য সহযোগিদের গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ।