বিশেষ প্রতিবেদক : নিয়োগ পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় মার্ক না পেয়েও স্বৈরাচারী হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মাহবুবুল আলম হানিফের তদবীরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা সাবধান আলী। তিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা, নিরীক্ষা বিভাগ, বিসিক ঢাকাতে কর্মরত আছেন। নির্ধারিত তারিখের দীর্ঘদিন পর বিসিকের চাকুরীতে যোগদান করেও যথারীতি বেতন ভাতা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন এবং মূল ব্যাচের সাথে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। তার প্রতিটি কর্মকান্ড স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে অসন্তোষ সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে আনন্দ উপভোগ করেন এ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জানান যে, মোঃ সাবধান আলী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা, নিরীক্ষা বিভাগ, বিসিক ঢাকা নিরীক্ষা বিভাগে পদায়নের পর হতে আজ পর্যন্ত স্বৈরাচারী মনোভাব দেখিয়ে সরকারের প্রচলিত আইন, বিধি-বিধান, নিয়ম-নীতির অপব্যাখ্যা করে বিসিকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে আসছেন। মৃত এবং অবসরে গমনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দেনা পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে অমানবিক আচরণ করে চলেছেন।

অহেতুক জটিলতা তৈরী করে ভোগান্তিতে ফেলছেন বিসিকের নিকট পাওনা প্রত্যাশীদেরকে। অসন্তোষ তৈরী করে চলেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা মঞ্জুরী প্রদানের ক্ষেত্রে। সরকারী আদেশ এমনকি সুপ্রীম কোর্টের আদেশ ও মানছেন না তিনি। তার এ ধরনের আচরণে আতংকিত বিসিকের বিভিন্ন প্রকল্প বা কর্মসূচী থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। কারণ তার দেয়া ভুল তথ্যের উপর একের পর এক বে-আইনী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চলেছেন বিসিক কর্তৃপক্ষ।

প্রেক্ষাপট-১ : সাবধান আলীর এখতিয়ার বহির্ভুত কাজের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ ওসমান গনি নামের একজন কর্মকর্তার বিষয়ে সবিস্তারে উল্লেখ করে নোট উপস্থাপন করা হলে বিসিক কর্তৃপক্ষ সাবধান আলীর বে-আইনী এবং কর্তৃত্ব বহির্ভুত মতামতের সাথে একমত পোষণ করে নথি নিষ্পত্তি করে। যার কারণে আরো অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী একই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিসিকের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৮ মার্চ ২০১০ তারিখে সমাপ্ত মৌমাছি পালন শীর্ষক প্রকল্পের ৩৬টি পদ সরকারের রাজস্বখাতে স্থানান্তরের ভুতাপেক্ষ একটি সরকারী আদেশ (জি,ও) জারী করে জারীকৃত উক্ত আদেশের শর্তাবলী ক্রমিক (ঘ)-তে উল্লেখ করা আছে প্রকল্প সমাপ্তির তারিখ হতে জি,ও জারীর তারিখ পর্যন্ত সময়কাল অনুমোদিত বিরতিকাল হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, কিন্তু কোন বেতন ভাতা প্রাপ্য হবে না।
বিসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা বে-আইনী কাজের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার কাজে অভ্যস্ত মোঃ সাবধান আলী তার স্বভাবসুল্ভ আচরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১৮ মার্চ ২০১০ তারিখের সরকারী আদেশ (জি,ও)-এ উল্লিখিত শর্ত লংঘন করে অনুমোদিত বিরতিকাল গননা করেছেন ১লা জুলাই ২০০৫ হতে ৬ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখ পর্যন্ত (৫ বছর ৫ মাস)। যেখানে সরকার নির্ধারিত অনুমোদিত বিরতিকাল নির্ধারণ করা আছে ১লা জুলাই ২০০৫ তে ১৭ মার্চ ২০১০ পর্যন্ত (৪ বছর ৮ মাস) ।
যে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর রাজস্ব খাতে পদায়ন এবং যোগদানের তারিখ যাহাই হউক না কেন তার ক্ষেত্রে অনুমোদিত বিরতিকাল সরকারী জি,ও-তে উল্লিখিত অবস্থার বেশী সময় গণনার কোন সুযোগ নেই।
একাধিক প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ তাদের মতামত জানাতে গিয়ে নিশ্চিত করেছেন যে, বিসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাবধান আলী যেমনি আইন তৈরী করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন না তেমনি তিনি সরকারী কোন আদেশ নির্দেশ পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংযোজন-বিয়োজনের ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন না।
সরকারী আদেশ উপেক্ষা করে নিজেদের খেয়াল খুশীমতো এখতিয়ার বহির্ভুত কাজের মাধ্যমে একজন কর্মকর্তাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার উপস্থাপনায় একমত পোষণ করে বিসিক কর্তৃপক্ষ সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে এবং বে-আইনী কাজে অভ্যস্ত কর্মকর্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
প্রেক্ষাপট-২ : একজন দৈনিক ভিত্তিক অফিস সহায়ক, নকশা কেন্দ্র, বিসিক, ঢাকার মজুরী বিল পরিশোধ সংক্রান্ত । দৈনিক ভিত্তিক অফিস সহায়ক, নকশা কেন্দ্র, বিসিক, ঢাকার মজুরী বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে লংকাকান্ড বাঁধিয়ে বসেছেন বিসিকের নিরীক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারীর মজুরী বিল পরিশোধের বিষয়টি দপ্তর প্রধান এর আওতাভুক্ত একটি বিষয়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে বিসিক প্রধান কার্যালয়, তেজগাও-এ কর্মরত সকল দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারীকে বিসিক চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে ৩১ দিনের মজুরী বিল পরিশোধ করার বিষয়টি অবগত হয়ে নকশা কেন্দ্র হতে ৩১ দিনের মজুরী বিল প্রস্তুত করে দাখিল করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে কত দিনের মজুরী বিল পরিশোধ করা হবে বা যেতে পারে তার প্রস্তাবনা পেশ না করে বিভিন্ন বিধি বিধানের উল্লেখ করে মতামত প্রদান করা হয়েছে।
বিসিক চেয়ারম্যান বিশেষ বিবেচনায় বিসিক তেজগাঁও কার্যালয়ে কর্মরত দৈনিক কর্মচারীদেরকে ৩১ দিনের মজুরী প্রদানের বিষয়টিতে অনুমোদন প্রদান করেছিলেন।
প্রকারান্তরে বিসিকের নিরীক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী বিসিক চেয়ারম্যানের মজুরী প্রদানের অনুমোদন ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন-প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমোদন ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা সাবধান আলী সংরক্ষণ করতে পারেন না-এটা গুরুতর অসদাচরণ।
প্রেক্ষাপট-৩ : বিসিকের চাকুরী হতে অবসর গ্রহণকারী এবং বিসিকের মৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেনা পাওনা পরিশোধের প্রয়োজনে নিরীক্ষা বিভাগের মতামতের জন্য প্রেরিত নথি সরকারী বিধান অনুযায়ী নিষ্পত্তি না করে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে ভোগান্তিতে ফেলছেন পাওনা প্রত্যাশীদেরকে।
প্রেক্ষাপট-৪ : সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদের ন্যায় বিসিকে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে ২০১৫ সালের পে-স্কেল গেজেটের ধারা নং-৭ এ।
উচ্চতর গ্রেড মঞ্জুরী প্রদানের ক্ষেত্রে বিভাগীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটির সুপারিশের কোন প্রয়োজন নেই, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধান এর অনুমোদন সাপেক্ষে প্রাপ্তির বিধান থাকা স্বত্তেও নিরীক্ষা বিভাগের মতামত প্রদানে কালক্ষেপনসহ অযাচিতভাবে কমিটি গঠন প্রস্তাব এবং প্রচলিত আইনের অপব্যাখ্যা প্রদান করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে চলেছেন মোঃ সাবধান আলী।
উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে ৩০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখের আপিল বিভাগের রায় এবং ১৫ জুলাই ২০২৫ তারিখে আপিল বিভাগের প্রদত্ত রায়ের ব্যাপারেও নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায় সাবধান আলীর নিকট হতে।
উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি বিষয়ক মতামত প্রদানের জন্য ষাটের অধিক নথি দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে তার দপ্তরে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালনরত যে কোন ব্যক্তি যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে গভীরভাবে সরকারের প্রচলিত আইন, বিধি-বিধান, নিয়ম-নীতি পর্যবেক্ষণ বা পর্যালোচনা করে সঠিক মতামত/সিদ্ধান্ত প্রদান করার বিধান আছে।
মোঃ সাবধান আলী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বার্থ বিরোধী কাজের মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে চলেছেন-বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট একটি ব্যাপার হয়ে দেখা দিয়েছে।
যার কারণে বে-আইনী কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিসিকের সকলস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ মোঃ সাবধান আলী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা এর এখতিয়ার বহির্ভুত, হয়রানীমূলক এবং উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত আচরণে/কার্যক্রমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
বিসিক কর্তৃপক্ষ হিসাবে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজনীতা অনুভব করেন কি না-অনুগ্রহ পূর্বক মতামত জানাবেন মর্মে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের হাতে আসা তথ্য সূত্র উল্লেখ করে চলতি মাসের ১৯ জুলাই, হোয়াটসএপ মাধ্যমে বিসিক চেয়ারম্যান এর মতামত জানতে চাওয়া হলেও কোন মতামত পাওয়া যায়নি এমনকি মোঃ সাবধান আলীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বিসিক নামীয় সরকারী প্রতিষ্ঠানটির স্থিতিশীলতার স্বার্থে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রত্যাশা করছেন বিসিকের শান্তিপ্রিয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।