নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী তৎকালীন ইপিআরের ল্যান্স নায়েক শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এর অবিস্মরণীয় অবদানকে চিরস্মরনীয় করে রাখার জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর ৫৪তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

আজ শুক্রবার ৫ সেপ্টেম্বর, সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির যশোর ব্যাটালিয়ন (৪৯ বিজিবি) এর উপ-অধিনায়ক মেজর নূর উদ্দিন আহমাদ শার্শা উপজেলার কাশিপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এর সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় বিজিবির একটি সুসজ্জিত দল ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। পরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এর রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এসময় বিজিবি অন্যান্য কর্মকর্তা ও সৈনিকবৃন্দ, বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারবর্গ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহেষখোলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মাতার নাম জেন্নাতুনেছা। নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) এ যোগ দেন।

তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টর, যশোরের অধীনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর পর যখন মুক্তিবাহিনীকে সুসংগঠিত করা শুরু হয় তখন তিনি যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার গোয়ালহাটি গ্রামে স্থাপিত একটি ক্যাম্পের অধিনায়কের দায়িত্ব পান।
নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৭১ সালের ০৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালহাটি গ্রামের এক প্রান্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে শহীদ হন। তিনি দুজন সঙ্গী নিয়ে গোয়ালহাটি গ্রামের অনতিদূরে ছুটিপুর ঘাঁটি টহল দেয়ার সময় পাকবাহিনী তাঁদের আক্রমণ করে। নূর মোহাম্মদ শেখ তাঁর টহল দলটিকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করেন।
পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলে নূর মোহাম্মদ শেখ হাতে এলএমজি এবং কাঁধে গুরুতর আহত সঙ্গীকে নিয়ে শত্রুবাহিনীর দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে নিরাপদ জায়গায় যেতে থাকেন। হঠাৎ শত্রুর দুই ইঞ্চি মর্টারের আঘাতে তাঁর হাঁটু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
তাঁর সঙ্গীরা যেন প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য মারাত্মক আহত অবস্থায়ও নূর মোহাম্মদ শেখ গুলি চালাতে থাকেন এবং এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে এই বীর যোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়। নূর মোহাম্মদ শেখ নিজের প্রাণের বিনিময়ে সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করেছিলেন।
তাঁর এই অপরিসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে।