আজ  নিলাম ! পাথর জাদুকাটার তীরে : নিলাম ঢাকায় বিএমডির হলরুমে সেই ১১০ কোটি টাকার বালি পাথর সরানোর ফের পায়তারা !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ সিলেট

বিশেষ প্রতিবেদক  (সিলেট) :  পাথর সিঙ্গেল বোল্ডারের সারি সারি স্তুপ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্ত নদী জাদুকাটার তীরের বিভিন্ন গ্রামে সড়কের আশে পাশে ঝোপ জঙ্গলে রেখে  নিলাম  ডাকের আয়োজন করা হয়েছে  বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর সভাকক্ষে!


বিজ্ঞাপন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ইউএনও’র হলরুম,সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হলরুমে ওই নিলাম আহ্বানের পর দু’দফা স্থগিতের পর ফের কৌশল পাল্টে আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় বিএমডির সভাকক্ষের বাহিরে অনলাইন প্লাটফর্মে নিলাম ডাকে অংশ গ্রহনকারীরা (জুমে) অংশ নেবেন।

এ সংক্রান্ত উন্মুক্ত নিলাম বিজ্ঞপ্তি তৃতীয় বারের মত আহ্বান করে বিএমডি গেল ৯ সেপ্টেম্বর অতি গোপনে।


বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, ১৪৩১ বাংলা সনে জাদুকাটা বালি মহাল-১, ২ ইজারার মেয়াদ শেষে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (প্রত্যাহারের পর পুলিশ হেডকোয়ার্টারে রিপোটকৃত আনোয়ার হোসেন খান, থানার বর্তমান ওসি দেলোয়ার হোসেন , গুসকান্ডে প্রশাসনিক কারনে বদলিকৃত থানার বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আবুল কালাম চৌধুরী, এএসআই (বর্তমানে পদাবনতির পর কনষ্টেবল) আব্দুল জব্বার, উপজেলা , জেলা প্রশাসনের কিছু অসত কর্মকর্তার মদদে ড্রেজার, বোমা, সেইভ মেশিনে জাদুকাটায় অবৈধ কোয়ারি খনন করে নদীর তীর গ্রামের আশে পাশে সরকারি খাঁস ভ’মি থেকে, ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি পাথর সিঙ্গেল বোল্ডার উক্তোলন করে মজুদ করা হয় তাহিরপুরের লাউড়গড়,ঢালার পাড়, ছড়ার পাড়, জাঙ্গালহাটি লাউড়গড় এলাকার একাধিক সড়কের আশে পাশে বসত বাড়ির ভের বাহিরে, ঝোপ ঝাড় জঙ্গলে।


বিজ্ঞাপন

এরপর সংঘবদ্ধ চক্র বিএমডির ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে দু, দফায় ১০ হাজার ৭৪৩ ঘনফুট পাথর জব্দ দেখিয়ে বিএমডির উপপরিচালক (বদলিকৃত) মো. মামুনুর রশীদকে দিয়ে নিলামের আয়োজন করান গেল ৭ আগষ্ট সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের হলরুমে।

এ নিয়ে গেল ৭ আগষ্ট দি কান্ট্রি টুডে সহ বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক দৈনিকগুলো একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, তরিগড়ি করে বিএমডি নিলাম স্থগিত করেন।

প্রসঙ্গত, সরজমিনে অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের  তাহিরপুরে এবার নিলামের আড়ালে সরকারি মূল্য ও আয়কর পরিশোধ ছাড়াই প্রায়য় ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি-পাথর সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা যুক্তরাজ্যে পলাতক সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য রণজিত চন্দ্র সরকারের ঘনিষ্ঠ সহচর আ.লীগ নেতা মোতালেব ওরফে ‘পাথ্থর মোতালেব’। তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী তীরবর্তী ছড়ার পাড় গ্রামের মৃত মহর আলীর ছেলে তিনি।

উচ্চ আদালত ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) কিছু কর্মকর্তা এ দুর্নীতির মহোৎসবে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী তীরবর্তী এলাকা, লাউরগড় বাজারের উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়া, বানরাকোনা হাওর, পার্শ্ববর্তী ঢালার পাড়, ছড়ার পাড়, একাধিক গ্রামের বাড়িতে, সড়কের পাশে, ঝোপঝাড় ও জঙ্গলের ভেতর খনিজ বালি ও নুরি পাথর, স্তুপ (ডাম্পিং) করে রাখতে দেখা গেছে। ডাম্পিং করে রাখা এসব খনিজ বালি, পাথরের একাধিক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমের কাছে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪৩১ বাংলা সনের জাদুকাটা নদীর বালিমহাল-১, ২ ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর ওই বালিমহাল দুটির ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। গেল কয়েক বছর জাদুকাটা নদীতে পৃথকভাবে খনিজ পাথরমহাল ইজারা দেওয়া হয়নি। আর এ সুযোগ কাজে লাগান আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, একসময় টং-দোকানে পান বিক্রি করে সংসার চালাতেন মোতালেব। পরে বালি-পাথরের অবৈধ বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে এখন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক।

সাবেক পলাতক এমপি রণজিত চন্দ্র সরকারের ছায়াতলে থেকে কথিত পাথর সমিতির সভাপতি মোতালেব স্থানীয় বালি-পাথর কারবারিদের ব্যবহার করে জাদুকাটা নদীর উৎসমুখ ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে পাথর (বোল্ডার) আনতে থাকেন।

একই সঙ্গে জাদুকাটা নদীর চর, তীর, আশপাশের এলাকা, সরকারি খাস বালি ভূমি থেকে শতাধিক ড্রেজার ও সেভ মেশিনে কোয়ারি করে উত্তোলন করতে থাকেন খনিজ সিঙ্গেল (নুরি পাথর), (বোল্ডার) পাথর ও বালি। বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে রাখা অবৈধভাবে সংগৃহীত এসব খনিজবালির বাজারমূল্য সরকারি ভ্যাট-আয়কর ছাড়াই ১০০ থেকে ১১০ কোটি টাকা।

স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়ে মোতালেবচক্র ৩ আগস্ট ১০ হাজার ৭৪৩ ঘনফুট পাথর জব্দ দেখিয়ে বিএমডির উপপরিচালক মো. মামুনুর রশীদকে দিয়ে নিলামের আয়োজন করান। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হলরুমে গেল ৭ আগষ্ট ওই নিলামের আয়োজন হয়। ওইদিনের নিলামও স্থগিত হয়। আজ মঙ্গলবার ঢাকায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পাইওনিয়ার রোড, সেগুনবাগিচা রোড বিএমডির সভাকক্ষে হবে সেই নিলাম।

স্থানীয় কারবারিদের অভিযোগ, ওই নিলামের আড়ালে মোতালেবচক্র নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অতীতের মতো বিএমডি ও জেলা , উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি মূল্য, ভ্যাট-আয়কর ছাড়াই ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি-পাথর সরিয়ে নেবে।

তাহিরপুরের ছড়ার পাড় গ্রামের মোতালেবের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে তিনি জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে বলেন, আমি পান দোকানদারি করিনি বরং লাউরগড় বাজারে মুদি দোকানদারি, পল্লী চিকিৎসক হিসাবে ডাক্তারি করতাম। চাঁদা তোলা, বালি-পাথর সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি। একপর্যায়ে বলেন, ডিসি অফিসে ৭ আগস্ট (আজ) জব্দকৃত পাথর বিএমডি থেকে উন্মুক্ত নিলাম হওয়ার কথা ছিল এরপর ওইদিন নিলাম স্থগিত হয়। নিজ বাড়িতে পাথর বোল্ডার ও পাথর ভাঙার মেশিন নেই বলেও দাবি করেন তিনি। চার চাকার গাড়িটি ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার পেয়েছেন বলেও জানান মোতালেব।

অভিযোগ উঠেছে, এই নিলামের আড়ালে মোতালেবচক্রের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা ঘুস জায়েজ করতে ফের ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি পাথর সরিয়ে নেওয়ার ফাঁদ তৈরি করেছেন বিএমডির কয়েকজন কর্মকর্তা।

গতকাল সোমবার খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) সহকারী পরিচালক আজিজুল ইসলামের নিকট কাছে জব্দকৃত খনিজপাথরের পরিমাণ ও নিলামকান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিএমডির ম্যাজিস্ট্রেট দুইবারে ১০ হাজার ৭৪৩ ঘনফুট পাথর জব্দ করেছেন সেই পাথরই নিলাম দেয়া হবে। নিলামের সিডিউল/ দরপত্র ক্রয়ের জন্য বিকাশ/নগদ নাম্বার দেয়া হয়েছে।

সিডিউল/ দরপত্র ক্রয়ের পর তাহিরপুরের ইউএনও নিশ্চিত করলে নিলাম ডাকে অনলাইন প্লাটফম (জুমে) লিংক দেয়া হবে তখন দেশের যেকোন স্থান থেকে নিলাম ডাকে অংশ নিতে পারবেন। নিলাম ডাকের এন্ট্রি সময়সীমা আজ মঙ্গলবার বেলা ৩ থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা। আবার নিলাম ডাকের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা।

আরও অধিক পরিমাণ পাথর সিঙ্গেল বোল্ডার থাকার পরও কেন জব্দ করা হয়নি-জানতে চাইলে আজিজুল হক বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহেদী হাসান মানিক জানান, মঙ্গলবার ঢাকায় পাথর নিলাম হবে এধরণের একটি চিঠি বিএমডি থেকে আমাকে দেয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, জাদুকাটা নদীর পুর্ব তীরে অবৈধভাবে উক্তোলনকৃত সকল বালি জব্দ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাহিরপুরের ইউএনওকে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *