আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণা  : র‍্যাব-৪ এর অভিযানে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ছয় সদস্য’কে গ্রেফতার 

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  : “বাংলাদেশ আমার অহংকার”- এই স্লোগান নিয়ে র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

র‍্যাব-৪ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের পাশাপাশি প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সদা সচেষ্ট। আমরা আজকে আপনাদেরকে একটি ভয়ানক প্রতারক চক্রের বিষয়ে উপস্থাপন করবো যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণায় জড়িত ছিল। গত কয়েক দিন আগে জনৈক সোহেল রানা আমাদের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করে যে তারা একটি প্রতারণার শিকার হয়েছে।

তার আপন ছোট ভাই চলতি বছরের  ১৪ সেপ্টেম্বর,  সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে। এসময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে জানায় তার ভাইয়ের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। ভুক্তভোগী তার পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজেকে মেজর সোহেল পরিচয় দেয় এবং তার সাথে পরে দেখা করতে বলে।


বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় অবস্থিত একটি হোটেলে আসামি সোহেল রানা এর সাথে দেখা করে। আসামি সোহেল রানা নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেয় এবং তার সাথে থাকা অপর প্রতারক তৈয়বুর রহমানকে সেনাবাহিনীর কর্নেল বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।


বিজ্ঞাপন

সোহেল ভুক্তভোগীর ভাইকে আনসার ব্যাটালিয়ন সিপাহী পদে চাকুরী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জানায় তার সাথে আনসারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ আছে এবং ১২ লক্ষ টাকা দিলে তার ছোট ভাইকে চাকুরীতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারবে।

এই প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হয় এবং সে মোতাবেক চলতি বছরের  ১৫ সেপ্টেম্বর, ভুক্তভোগী প্রাইভেট একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চার লক্ষ টাকা প্রদান করে।

টাকা পাওয়ার পর মেজর পরিচয় দানকারী সোহেল, কর্নেল পরিচয় দানকারী তৈয়বুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিরা ভুক্তভোগীকে তার ভাই রাজু (১৯) এর আনসার ব্যাটালিয়নে যোগদানের নিয়োগপত্র প্রদান করে।

নিয়োগপত্রটি দেওয়ার পর বিকাশ ও নগদ এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরো এক লক্ষ টাকা নেয়। নিয়েগপত্রটি পেয়ে ভুক্তভোগী তার ভাই কে নিয়ে বাড়ি আসে।

বাড়ীতে এসে তারা তাদের গ্রামের আনসারের সিপাহি পদে নিয়োগপত্র প্রাপ্ত হয়েছে এমন একটি ছেলের নিয়োগপত্রের সাথে তাদের নিয়োগপত্রটির অনেক গরমিল দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভুক্তোভোগী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে আসামীদের দেওয়া নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

এ বিষয়ে তারা শাহ আলী থানা এবং র‍্যাব-৪ বরাবর অভিযোগ দায়ের করে। র‍্যাব-৪ একটি চৌকস আভিযানিক দল তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান সনাক্ত করে গতকাল মঙ্গলবার ২৩ সেপ্টেম্বর, রাতে ঢাকা ও সাভারে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা যথাক্রমে,  সোহেল রানা মিলন (৩৩), তৈয়ব মোস্তাক (৪৬), মোঃ সজীব মুন্সি (৪৪),  শামীম আহমেদ (৪৫),  মোঃ মওলাদ আলী খান (৫২) এবং সোহেল রানা জিন্নাহ (৩৭)।

গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত থেকে ১টি প্রাইভেট কার, ৭টি মোবাইল ফোন, ২টি ভূয়া নিয়োগপত্র এবং নগদ-৯৫,২০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।

এছাড়াও আসামীদের গ্রেফতারের সময় একজন ভিকটিমকে পাওয়া যায়, যাকে সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেওয়ার নাম করে নিয়ে এসেছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামীগণ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা মহানগরীতে অবস্থান করে বিভিন্ন জেলার চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উৎকোচের মাধ্যমে চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলো।

তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। ইতোপূর্বে একই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার কারণে র‍্যাব-৪ কর্তৃক দুইবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *