# সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রেতাত্মা হয়ে ওয়ালটন মালিকপক্ষের ভূমিকা # স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত # বিক্রয় প্রতিনিধিদের উপর জুলুম-নির্যাতন ও টাকার জন্য ভয়ঙ্কর চাপ # ওয়ালটনের লিফট টেন্ডার কেলেঙ্কারি # গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলীদের বিদেশ ট্যুর দুর্নীতি # মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা ও করপোরেট ধামাচাপা #

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৫ আগস্ট ২০২৪—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে এবং শুরু হয় দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনিক শুদ্ধি অভিযান।
কিন্তু সেই রক্তের দাগ শুকানোর আগেই দেশের এক করপোরেট জায়ান্ট—ওয়ালটন—আজও প্রেতাত্মার মতো সাবেক ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে।

আওয়ামী প্রেতাত্মার ছায়ায় ওয়ালটন মালিকপক্ষ : অভিযোগ অনুযায়ী, ওয়ালটন মালিকপক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তার ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন আঁতাতে ছিল।

এই তালিকায় আছেন— ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক সিআইডি’র উর্ধতন এক কর্মকর্তা এবং সাইবার নিরাপত্তা সেলের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তাদের প্রভাব ব্যবহার করে ওয়ালটন মালিকপক্ষ সারা দেশের বিক্রয় প্রতিনিধিদের উপর চালিয়েছেন ভয়ঙ্কর জুলুম।
জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় বিক্রয় প্রতিনিধিরা চোখের জলে জানান—তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হতো। অমান্য করলে হতো জেল-জরিমানা, গুম বা হত্যার হুমকি, অনেকের পরিবার ভেঙে পড়েছে এই করপোরেট সন্ত্রাসের চাপে, অর্থাৎ, ওয়ালটন কেবল একটি কোম্পানি নয়—এটি হয়ে উঠেছিল সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের আর্থিক প্রেতাত্মা।
লিফট টেন্ডার কেলেঙ্কারি : গণপূর্তে ওয়ালটনের দখল, শিল্পখাতে একচেটিয়া দখল নেওয়ার সর্বশেষ চেষ্টায় ওয়ালটন এবার হাত বাড়িয়েছে লিফট সরবরাহের দিকে।
দুদক সূত্রে অভিযোগ এসেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের চারজন নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ালটনের অর্থে ইউরোপ ট্যুরে গেছেন। এরা হলেন—
শেখর চন্দ্র বিশ্বাস, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। নাজমুল আলম রব্বানী, নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজী মাশফিক আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী। মোর্শেদ ইকবাল, নির্বাহী প্রকৌশলী। এমনকি একজন প্রকৌশলী তার স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়েছেন।
সফরের নাম দেওয়া হয় “ইটালি ট্যুর”—কিন্তু মূল আয়োজন করে ওয়ালটন। যাতে ওয়ালটনের লিফটকে বিদেশি লিফটের সমতুল্য ঘোষণা করা যায় এবং ভবিষ্যতে সব সরকারি টেন্ডার একচেটিয়াভাবে তারা পায়।
অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক এ কেলেঙ্কারিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দিয়েছেন। আশরাফুল হকের নীরবতাকে অনেক কর্মকর্তা “নীরব দুর্নীতি” বলে আখ্যা দিয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এই ট্যুর গোপনে আয়োজন করা হয়।
মিডিয়া প্রোপাগান্ডা : করপোরেট সাফল্যের নামে ধামাচাপা, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যখন দিন দিন বাড়ছে, তখন দেশের কিছু গণমাধ্যম ওয়ালটনের করপোরেট সাফল্যের গল্প প্রচার করছে।
“বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের উত্থান”, “বর্ষসেরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান” ইত্যাদি শিরোনামে এসব প্রতিবেদন আসলে ধামাচাপা ও প্রোপাগান্ডা। যেখানে বিক্রয় প্রতিনিধিদের কান্না, দুর্নীতির চক্র ও টেন্ডার কেলেঙ্কারি গোপন রাখা হচ্ছে। এই ভাড়াটে সাংবাদিকতাকে জনগণ আখ্যা দিচ্ছে দুর্নীতির মিডিয়া সিন্ডিকেট।
কেন এই তদন্ত জরুরি ? ওয়ালটন আজ দেশের শিল্পখাতের একটি বড় প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ লাখো গ্রাহক ও হাজারো কর্মীর জীবনে প্রভাব ফেলে।
কিন্তু—বিক্রয় প্রতিনিধিদের জুলুম : সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেতাত্মা হয়ে রাজনৈতিক আঁতাত। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের বিদেশ ট্যুর দুর্নীতি। একচেটিয়া লিফট ব্যবসার ষড়যন্ত্র।
সব মিলে ওয়ালটন কেবল একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়—বরং দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও করপোরেট জুলুমের প্রতীক হয়ে উঠছে।
উপসংহার : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন বাংলাদেশকে এক নতুন পথে এনেছে। কিন্তু ওয়ালটনের মতো প্রতিষ্ঠান যদি আবারও দুর্নীতির আঁকড়ে ধরে বসে, তবে তা এই সংগ্রামের আত্মত্যাগকে ব্যর্থ করে দেবে।
জনগণের দাবি : দুদক যেন এই কেলেঙ্কারির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ওয়ালটনের মালিকপক্ষ ও তাদের রাজনৈতিক প্রেতাত্মাদের বিচার করে রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত করা হোক।