আজিমপুর সরকারি কলোনির বহুতল মেকানিক্যাল পার্কিং কেলেঙ্কারি  : আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চক্রের ছত্রচ্ছায়ায় দুর্নীতির নীলনকশা ! 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের আগের নিয়াজ মোহাম্মদ তানভীর এর পোস্


বিজ্ঞাপন

 

নজস্ব প্রতিবেদক  :  রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিতব্য বহুতল মেকানিক্যাল কার পার্কিং শেড—৭২ কোটি টাকার এই প্রকল্প এখন দুর্নীতি ও ক্ষমতার দাপটের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা মিললেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চক্রের প্রভাবশালী সদস্যরা।

তদন্তে ধরা পড়া অনিয়ম  : ডিপিপি ভঙ্গ: অনুমোদিত পরিকল্পনায় ২৮৮ গাড়ি রাখার জায়গা থাকার কথা থাকলেও তৈরি হচ্ছে ২৪০ গাড়ির জায়গা। এতে প্রায় ১১ কোটি টাকা সাশ্রয় হলেও তা ফেরত না দিয়ে ভাগবাটোয়ারার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।  দ্বৈত দরপত্র: রং ও কভার তৈরির কাজ মূল প্রকল্পের মধ্যেই থাকা সত্ত্বেও আবার আলাদা দরপত্র আহ্বান করা হয়—যাতে একই কাজের জন্য দ্বিগুণ বিল দেখানো সম্ভব হয়। অযৌক্তিক তড়িঘড়ি: সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের আগেই দরপত্র আহ্বান ও চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। অভিযোগ উপেক্ষা: প্রকল্প পরিচালক একাধিকবার নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।


বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটির মতামতে স্পষ্ট বলা হয়—ডিপিপি ব্যতীত ধারণক্ষমতা হ্রাস সমীচীন হয়নি। অথচ এটাই হয়েছে, আর এর আড়ালে দুর্নীতির মহোৎসব চলেছে।


বিজ্ঞাপন

মূল অভিযুক্ত কে  ?   এই অনিয়মের কেন্দ্রে আছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়াজ মো. তানভীর আলম। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন, যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এত বছর একই জায়গায় থাকা উচিত নয়।প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও শাস্তির পরিবর্তে তাঁকে সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তাকে কখনোই ধরাছোঁয়ার মধ্যে আনা হয়নি।

রাজনৈতিক কানেকশনের জাল   ও  নিয়াজ মো. তানভীর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চক্রের আশীর্বাদপুষ্ট :  তাঁর চাচা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক খুলনা সিটি মেয়র ও বাগেরহাট-৩ আসনের সাংসদ তালুকদার আব্দুল খালেক। তাঁর মা শেখ হেলালের স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। গোপালগঞ্জের সাবেক সচিব শহিদুল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার সুবাদে গণপূর্ত প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক আছে।

এইসব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগসূত্রের জোরে তানভীর আলম ছিলেন ‘অদৃশ্য সুরক্ষা চক্রের’ অধীনে।

দুর্নীতির অর্থে গড়া সাম্রাজ্য : তদন্ত সূত্র বলছে—নিয়াজ মো. তানভীর ঢাকায় দায়িত্বে থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফ্ল্যাটসহ একাধিক অবৈধ সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। দুর্নীতির টাকায় প্রভাবশালী মহলের দোরগোড়ায় নিয়মিত যাতায়াত ও “ম্যানেজমেন্ট”-এর মাধ্যমে পদে বহাল থেকেছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রকাশ্যে ফেসবুকে দলীয় প্রচারণা চালাতেন; কিন্তু ৫ আগস্ট ক্ষমতার পরিবর্তনের পর সব পোস্ট মুছে ফেলেছেন।

ঢাকার প্রকৌশলীদের দখলদারি  :  আজিমপুর প্রকল্প কেবল একক ঘটনা নয়—ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রকৌশল বিভাগগুলোতে গুটিকয়েক কর্মকর্তা বছরের পর বছর একই পদে বহাল থেকে তৈরি করেছেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য। ঢাকার ৩১টি বিভাগে বহু বছর ধরে একই ব্যক্তিদের নিয়োগ রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক কানেকশন আর আর্থিক শক্তির কারণে তাদের সরানো যায়নি।এমনকি বদলি নীতিমালা কার্যকর করাও হয়ে ওঠেনি।

এভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চক্র প্রশাসনের ভেতরে নিজস্ব ‘নেটওয়ার্ক’ বানিয়ে রেখেছিল, যেখানে দুর্নীতিই ছিল টিকিট।

কাক্কু তালুকদার আব্দুল খালেকের এর সাথে নিয়াজ মোহাম্মদ তানভীর এর তোলাা ফেসবুক পোস্ট।

 

প্রশ্নগুলিই আজও উত্তরহীন : তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?  সচিবালয়ের মতো সংবেদনশীল স্থানে কীভাবে একজন আওয়ামী লীগপন্থী বিতর্কিত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন? কোটি কোটি টাকার অনিয়মের দায় কি শুধু ফাইলে চাপা পড়বে?

উপসংহার :  আজিমপুরের মেকানিক্যাল কার পার্কিং প্রকল্পটি প্রমাণ করেছে—আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চক্র ক্ষমতার আড়ালে প্রশাসনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখন সরকারের টেবিলে আছে, কিন্তু যদি দায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এটি আরেকটি ‘দুর্নীতির ফাইল’ হিসেবেই ইতিহাসে হারিয়ে যাবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *