ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর মোয়াজ্জেম হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের আবাসন, আর্থিক খাত, এমনকি শিক্ষা ব্যবসা—সবখানেই তার হাত। অথচ এতসব ভয়ঙ্কর অপকর্মের পরও তিনি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে! তিনি আর কেউ নন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর, কথিত “ক্যাপ্টেন” এম মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে “জয়বাংলা বাবুল”—যার নাম শুনলেই ভুক্তভোগীরা শিউরে ওঠেন।
প্রতারণার সাম্রাজ্য : টাকা গেল, প্লট মিলল না ! পূর্বাচল উপশহরের পাশে গ্রেটওয়াল ল্যান্ড প্রোপার্টিজ লিমিটেড—প্রথমে অনেকটা স্বপ্নের মতোই শুরু। হাজারো মানুষ জীবনভর সঞ্চয় গচ্ছিত রাখলেন এই প্রকল্পে, প্লট কিনবেন বলে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টো ! কেউ ১০ বছর, কেউ ১৫ বছর আগেই পুরো টাকা শোধ করেছেন, কেউ শেষ কিস্তি দিতে না দিতেই অফিসে গিয়ে দেখেছেন “অফিস গায়েব”!

আবার যারা পাওনা টাকা চাইতে গেছেন, তারা শুনেছেন ভয়ঙ্কর হুমকি: “মামলা করে জীবন শেষ করে দেব!” শওকাত কাদের চৌধুরী, সেলিম রশীদ, সামিয়া হাসান, ফারজানা ইসলাম—এমন অসংখ্য গ্রাহক আজও কাগজপত্র হাতে দাঁড়িয়ে, কিন্তু প্লট পাননি।

ক্ষমতার লাঠি : “জয়বাংলা বাবুল” : মোয়াজ্জেমের আসল শক্তি টাকা নয়, তার রাজনৈতিক পরিচয়। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন — জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের কার্যকরী সভাপতি “তাঁতী লীগের উপদেষ্টা” প্রধানমন্ত্রী ও শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি ঝুলিয়ে রাখতেন অফিসে। ফলে প্রতারিত মানুষ মুখ খুলতেও সাহস পেত না। ভুক্তভোগীদের একটাই কথা —– “আওয়ামী লীগের নাম শুনেই পুলিশ আমাদের অভিযোগ নিতে চাইত না।”
ভুয়া ক্যাপ্টেন : আসলে বহিষ্কৃত নৌসদস্য : তিনি নিজেকে গর্বভরে পরিচয় দেন “ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন” বলে। অথচ নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েও অনিয়মের দায়ে চাকরি হারান খুব অল্প সময়েই। কিন্তু তারপরও মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে নিজেকে “অবসরপ্রাপ্ত অফিসার” সাজিয়ে নিয়েছেন !
পিকে হালদারের গোপন পার্টনার : আবাসনের প্রতারণা তার একদিক। আরেকদিকে তিনি বাংলাদেশের অর্থ খাতের কুখ্যাত মাফিয়া পি কে হালদারের সহযোগী। পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান থাকাকালে, কোটি কোটি টাকা লোপাটে হালদারের প্রধান সহচর ছিলেন তিনি। আদালতের জবানবন্দিতেও তার নাম এসেছে। অনুমান করা হয়, প্রায় ২০০০ কোটি টাকা তিনি গিলেছেন একাই! ফলে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু তারপরও দেশীয় প্রভাবের কারণে এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
জমি দখল : খাস থেকে সংখ্যালঘু, সবই গিলে ফেললেন ! ভূমিদস্যু হিসেবেও কুখ্যাত এই মোয়াজ্জেম হোসেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রায় ১০০০ বিঘা জমি দখল করেছেন। গাজীপুরের বন বিভাগের খাস জমিও রাতারাতি হাতিয়ে নিয়েছেন। ঢাকাসহ নানা জেলায় নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
“ভূতের মুখে রাম নাম”: শিক্ষা ব্যবসায়ও হাত : প্রতারক হয়েও গুলশানে কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম স্কুল (সিটিএস) নামের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের চেয়ারম্যান তিনি। কোমলমতি শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি মাঝে মাঝে “শিক্ষণীয় বাণী” দেন।
ভুক্তভোগীরা ব্যঙ্গ করে বলেন—“যার হাতে হাজার কোটি টাকার প্রতারণা, তার মুখে শিক্ষার কথা শোনাটা ভূতের মুখে রাম নাম ছাড়া কিছু নয়।”
গ্রাহকদের হাহাকার, আইনের নীরবতা : ভুক্তভোগী আনিসুজ্জামান শাহীন থানায় জিডি করেও কোন সুরাহা পাননি। কেউ কেউ সব টাকা দিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম। সরকার পরিবর্তনের পর তারা এখন হাহাকার করছেন—“আমাদের টাকা-জমি সব গেল, প্রতারক মোয়াজ্জেম আজও উধাও!”
শেষ প্রশ্ন : কবে ধরা পড়বেন ? অসংখ্য অভিযোগ, কোটি কোটি টাকার লুটপাট, পিকে হালদারের সঙ্গী, সংখ্যালঘু জমি দখল, শিক্ষা খাতে ব্যবসা—সবকিছুর পরও মোয়াজ্জেম হোসেন আজও মুক্ত বাতাসে ঘুরছেন।
দেশবাসীর প্রশ্ন— “আওয়ামী দোসর এই মহাপ্রতারক কবে আইনের আওতায় আসবেন?”