নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এবারের বাজেট হতে হবে বেঁচে থাকার। টিকে থাকার বাজেট হতে হবে। বাজেটে জনগণ দেখতে চায়, কোন কোন খাত অগ্রাধিকার পাবে, কোন খাতে কীভাবে ব্যয় করা হবে।
বাজেট প্রাক্কালে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত ‘ভার্চ্যুয়াল জন-বাজেট সংসদ ২০২০’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার সংগঠনটির পাঠানো এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আতিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ গত বছরের থেকে ৩ শতাংশ বেশি বা দ্বিগুণ করতে হবে এবং বাজেটের বড় একটা অংশ বিনিয়োগ করতে হবে যন্ত্রপাতি এবং ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ করার ক্ষেত্রে।
কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বিবেচনা করে আদিবাসী, সংখ্যালঘুসহ সমাজের সব সুবিধা বঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রের কাছে তাদের যে অর্থনৈতিক অধিকার আছে, তা যেন বাস্তবায়ন হয়। সে অনুযায়ী জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।
জেলা বাজেটের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু প্রতিটি এলাকার চাহিদা আলাদা আলাদা তাই এলাকাভিত্তিক সুনির্দিষ্ট চাহিদা বুঝে তালিকা তৈরি এবং সে অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দের পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পের ক্ষেত্রে একটা সেক্টরকে প্রাধান্য না দিয়ে শিল্পে বহুমুখীতা আনতে হবে। মেগা প্রজেক্টগুলোর কাজ এবারের বাজেটে গুরুত্ব না দিয়ে বর্তমান সংকটকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শরমিন্দ নিলোর্মি বলেন, বাজেট বরাদ্দে পরিষ্কারভাবে দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। এবং প্রয়োজন হলে আগামী ছয় মাসের জন্য একটা মধ্যবর্তী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
স্বাগতিক বক্তব্যে অ্যাকশনএইডের পরিচালক আসগার আলি সাবরি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন বাজেট নিয়ে কাজ করে আসছে। প্রতিবছরের মতো এবারও জনবাজেট সংসদের আগে সেক্টরভিত্তিক প্রাক বাজেট আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় করোনার কারণে কৃষকদের বাজেট ও কৃষকের অবস্থা, প্রতিবন্ধী ও শ্রমজীবী মানুষের বাজেট প্রত্যাশা, এমনকি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বিষয়টিও তুলে আনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন পরিচালিত মতামত জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সেকেন্দার আলী মিনা। তিনি বলেন, ৮৮ শতাংশ জনগণ মনে করেন যে বাজেটে সাধারণ জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয় না বললেই চলে। মাত্র ৯.৫ শতাংশ উত্তর দাতা মনে করেন বাজেটে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন থাকে। ৮০ শতাংশ জনগণই মনে করেন যে জেলাভিত্তিক বাজেটের আলোকে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা উচিত। ৭৮ শতাংশ জনগণ মনে করেন যে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে বাজেটের বরাদ্দ করা বা আলাদা খাত হিসেবে দেখানো উচিত। ৮৬ শতাংশ জনগণ মনে করেন যে গত বছরের তুলনায় এ বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। এছাড়া কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা-প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি মতামত জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে।
অনলাইন ভিত্তিক এই জন-বাজেট সংসদে সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সহ সভাপ্রধান আমান রহমান। তথ্যপ্রযুক্তি ও ডকুমেন্টেশনে ছিলেন সংগঠনের তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।