করোনা মোকাবিলা প্রকল্পের খরচ বাড়লো ৫৬৫৯ কোটি টাকা
বিশেষ প্রতিবেদক : বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাব তোলা হলে প্রধানমন্ত্রী ওই প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে একনেকে ওই প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১২ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়। কিন্তু সময় মতো শেষ করতে না পারায় এক বছর পর আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর ২০১৬ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করে ৬১১ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় করার পাশাপাশি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব একনেক অনুমোদন দেয়। কিন্তু তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়িয়ে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু একনেক তাতে সায় দেয়নি।
এ বিষয়টি জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্প ২০১২ সালে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তার কাজের গতিবিধি সন্তোষজনক নয়। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু শেষ না হওয়ায় প্রথমে দুই দফায় দুইবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর সংশোধন করে ২০১৯ সাল করা হয়। এখন দ্বিতীয় সংশোধন করে ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘‘প্রকল্পের অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রী অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের প্রকল্প আমরা গ্রহণ করবো না।’ তিনি বিষয়টি আইএমইডিকে দিয়ে তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আদ্যোপান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। আমরা শিগগিরই এটি তদন্ত করবো।’’
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। বরং তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই বছরের প্রকল্পে আট বছরে মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিশদ আলোচনার পর বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—কেন এই দীর্ঘ মেয়াদে প্রকল্প কাজ করতে পারছে না তা তদন্ত করতে।’
তিনি জানান, এ প্রকল্পে ২০১৮ সালে একটি অনিয়ম হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনে তদন্ত হয়। এতে কয়েকজন কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয় বলে আমরা শুনেছি।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
করোনা মোকাবিলা প্রকল্পের খরচ বাড়লো ৫৬৫৯ কোটি টাকা : ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ করোনা মোকাবিলার এ প্রকল্পের খরচ বাড়লো ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি ৭ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ১৭২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রথমে সরকারের দেয়ার কথা ছিল ২৭৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ প্রকল্পে সরকার এখন ১০৫ কোটি ৬ লাখ টাকা কম দেবে।
প্রকল্পে বিদেশি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। প্রকল্পে প্রথমে বিদেশি ঋণ ছিল ৮৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বা স্বাস্থ্য অধিদফতর।