নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের তৎপরতা থামছেই না। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গণতান্ত্রিক সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে মাঝে মধ্যেই তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। যদিও র্যাব পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতারও করছে। তারপরও ঘাপটি মেরে থাকা এসব জঙ্গি সদস্যরা প্রকাশ্যে তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে।
পুরান ঢাকায় বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে হিযবুত তাহরীরের সদস্য আতিকুর রহমান, মাকসুদুর রহমান ও এস এম সজিবকে গ্রেফতার করে এদের কাছ থেকে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর লেখা বই-৫টি, মাসিক রিপোর্ট-১টি, বার্ষিক রিপোর্ট ১টি, স্পাইরাল বাইন্ডিং করা বই-১টি ও ১টি ম্যাকসপো লেখা সাদা প্যাড উদ্ধার করা হয়।
সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মামুনুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৯ টার দিকে সূত্রাপুর থানার সুভাষ বোস এভিনিউয়ের ডিআইটি মার্কেট এলাকা থেকে ৩সদস্য গ্রেফতার হয়। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘হিযবুত তাহরীর’ সমর্থক, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা বিনষ্ট করাসহ দেশকে অস্থিতিশীল করে জনমনে ভীতি সঞ্চার করার উদ্দেশ্যে নাশকতামূলক কার্যক্রমের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
সুত্র জানায়, ২০০০ সালে নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ‘লিবারেটেড ইয়ূথ’ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গোপনে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সংগঠনটি প্রকাশ্যে তৎপরতা চালায়। পরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এ জঙ্গি সংগঠনটি আত্মগোপনে যায়। আর ২০০৯ সালের ২০ মার্চ ছাত্র মুক্তির ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুনরায় বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। হিযবুত তাহরীরের কেন্দ্রীয় নেতারা ২০১৩ সালের ৩১মার্চ অষ্ট্রেলিয়ার মেলবর্ণে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত হন। ওই সম্মেলনে হিযবুত তাহরীরসহ সরকার বিরোধী সংগঠনগুলোর উপর গ্রেফতার ও দমন পীড়নসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ডকোমেন্টারী ফুটেজ এক প্রদর্শনীতে উপস্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে।
সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনের ১২ জন কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে প্রায় ৪ থেকে ৫ জন পুলিশ ও র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। এরপর কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ছদ্মবেশে তাদের তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। এদের মধ্যে একজন স্থপতি মহিলা রয়েছেন, যিনি হিযবুত তাহরীরের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক ও ঢাকা মহানগর সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আর গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হিযবুত তাহরীরের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনষ্টিটিউটের (আইবিএ)’র সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রীন রোডের বাসায় গৃহবন্ধী রাখার পর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মওলা, ড. শেখ তৌফিককে র্যাব গ্রেফতার করে। আর মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালিয়ে মোরশেদুল আলম নামের হিযবুত তাহরীরের সাংগঠনিক সম্পাদককে মোহাম্মদপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করে। হিযবুত তাহরীর পৃথিবীর প্রায় ৪৩ টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানসহ ১৮টি দেশে এ সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ফজলে নুর তাপসের উপর বোমা হামলা হয়। তখন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হিযবুত তাহরিরকে সন্দেহের তালিকায় রাখে। পরে ২২ অক্টোবরে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।
এরপর সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে সংগঠনটি বার বার মাঠে নামার চেষ্টা করে। পবিত্র কুর’আনের শাসন, খিলাফত ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা অপ-তৎপরতা চালিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, দেশের সুশৃঙ্খল বাহিনীকেও ব্যবহারের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতার করছে। এরমধ্যে সবুজবাগের কদমতলা থেকে আনিছুজ্জামান, বারিধারা থেকে ফজলে ওয়াহাব ওরফে বিটু ও আশফাক-ই জামানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আশফাক এলজিইডি’র একটি প্রকল্পের প্রধান কর্মকর্তা র্যাব-১ এর সদস্যরা উত্তরায় অভিযান চালিয়ে গোলাম হায়দার ওরফে রসুল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ লিফলেট ও পোস্টার উদ্ধার করে। আর ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুক্তাঙ্গনে মহাসমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সা:) কটুক্তিকারী, মুশরিক শংকর বিশ্বাসের ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে ইষ্টিকার, লিফলেট বিতরণ করে।
গোয়েন্দা সুত্র জানায়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ের একজন শিক্ষক ২০১১ সালের ১৩ আগস্টের মহাসমাবেশের নেতৃত্ব দেন। আর ২১ জুন হিযবুত তাহরীরের ব্যানারে আরবী ভাষায় লেখা ব্যানার নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল করেন। ওই মিছিল থেকে শাহাদাত হোসেন সাইমুম নামের কর্মী আটক হন। পরে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের ফোনে আড়ি পাতায় এস এম এস ও ই-মেইল এবং ফেসবুকে যোগাযোগ রক্ষা করে। আর ২০১০ সালে ‘উলাই’য়াহ বাংলাদেশ’ নামে নতুন শব্দ সংযোজন করে। হিযবুত তাহরীরের ১০টি পাঠচক্র রয়েছে। পাঠচক্রে পাকিস্তান, প্যালেস্ট্না, ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের যুদ্ধ, মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ভিডিও ফুটেজ, স্থির চিত্র ও বিভিন্ন পুস্তিকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। ছাত্র মুক্তির পাঠচক্রের নামে রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া, বনানী বাজার মসজিদ, কাটাবন, মোহাম্মদপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় মগজ ধোলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও কতিপয় শিক্ষকও থাকেন বলে জানা গেছে।