বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন
নিজস্ব প্রতিনিধি : ফেনী নদীর উপর নির্মিত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবারুম ও বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়কে যুক্ত করা বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ফেনী নদী। সেতুটি বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে আরও সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সেতুর মাধ্যমে সরাসরি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে ত্রিপুরা। ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্বাবধানে ৮২.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬ একর জমির ওপর ‘মৈত্রী সেতু’ নির্মিত হয়েছে।
সেতুর ভারতীয় প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানিয়েছেন, গত ১৩ জানুয়ারি সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। এ সেতুর মোট পিলার ১২টি। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ ৮টি ও ভারতের অংশে ৪টি। সেতু থেকে ২৪০ মিটার এপ্রোচ রোড নির্মাণ করে রামগড়-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে সাথে এবং ওপারে সেতু থেকে প্রায় ১২০০ মিটার এপ্রোচ রাস্তা নবীনপাড়া-ঠাকুরপল্লী হয়ে সাবরুম-আগরতলা জাতীয় সড়কে যুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের দুই লেনের এ সেতুর দুপাশে রয়েছে ফুটওয়ে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুধু বন্ধুত্বের বন্ধন নয় বরং দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়াতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দিল্লি থেকে একইভাবে যুক্ত হন।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই সেতু দিয়ে ত্রিপুরার সাবরুমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হল বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড়। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গেও সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হলো ত্রিপুরার। মৈত্রী সেতুটি এই অঞ্চলের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা ভুলিনি, আপনারা কীভাবে ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন এবং আশ্রয় দিয়েছিলেন। আমরা ভারতকে সবসময়ই যথাসম্ভব সহায়তা করবো।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সঙ্গে বৈঠকে রামগড়- সাবরুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেনী নদীতে নির্মাণাধীন ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ নামে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘দীর্ঘ ২০১৭ সালে আপনারা ত্রিপুরার উন্নয়নে দ্বিগুণ মনোযোগী হন। আর এর ফলে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা আজ আপনাদের সামনেই। যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হতো না, তা এখন সহজেই হচ্ছে। যেখানে কৃষকদের ফসল সরবরাহ করতে বিভিন্ন অসুবিধা হতো, সেখানে আজ কৃষকরা সরাসরি ফসল সরবরাহ করতে পারছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ত্রিপুরায় আজ যোগাযোগ তথা সড়কপথ, বিমানপথ এবং রেলপথের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে জনগণের জীবনকে আরও সহজ করে তুলছে। সেই সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক দিকেরও উন্নয়ন হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার এই সেতু পর্যটন ও বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হবে এমন আশা ব্যক্ত করে মোদি বলেন, ‘এই সেতুর ফলে ত্রিপুরার তথা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধন একদিকে যেমন সমৃদ্ধির পথে আছে, তেমনি দুই দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নির্মিত এই মৈত্রী সেতুর কারণে পণ্য পরিবহন এবং পর্যটন খাত আরও উন্নত হবে। ফলে, পণ্য পরিবহনের জন্য এখন আর আপনাদের শুধু সড়ক পথের ওপর ভরসা করে বসে থাকতে হবে না, বাংলাদেশের সড়ক, নদী ও সমুদ্র পথেও সুবিধা পাবে এই রাজ্য।