ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ, ঈদযাত্রায় বৃষ্টির বাগড়া মহসীন আহমেদ স্বপন : ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রেলপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের। বিশেষ করে ঈদ যাত্রার প্রথমদিন থেকেই উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলো দেরিতে ছাড়ছে। রোববারও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলো দুই থেকে চারঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে।
ঈদের আগে শিডিউল বিপর্যয় কাটবেনা বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তবে স্বস্তির খবর সড়কপথে। নারায়ণগঞ্জে নবনির্মিত মেঘনা ও গোমতী সেতু এলাকা পরিদর্শন করে এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন। বৈরী আবহাওয়ায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল ব্যহত হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই, কমলাপুর রেলস্টেশনে কাঙ্খিত ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো যাত্রী। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও ট্রেন না আসায় আনন্দের ঈদ যাত্রা শুরু হয় বিড়ম্বনা দিয়ে। এদিনও রাজশাহীগামী ট্রেনগুলো ২ থেকে ৩ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।
ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৯টি ট্রেনের মধ্যে ৪টিই বিলম্ব করে আসে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে যথা সময়ে স্টেশনে যাত্রীরা পৌঁছতে না পারায় প্লাটফর্মে থাকার পরও ৪০ মিনিট দেরীতে ছাড়ে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি।
তবে সড়কের চিত্র স্বস্তিদায়ক। বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক পথে যাত্রী চাপ কম। তবে, যানজটের কারণে ফিরতি বাস পৌছতে বিলম্ব হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে রয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগ ও উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা।
এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, যে ট্রেনগুলো দেরিতে কমলাপুরে পৌঁছেছে, সেই ট্রেনগুলোই ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ট্রেনগুলোই যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি সব ট্রেনগুলো যেন যথাসময়ে ছেড়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে সার্বিক সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
সদরঘাটে মানুষের ঢল: ঈদে প্রিয়জনের কাছে ফিরতে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। রোববার ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে সদরঘাটে। লঞ্চে জায়গা পেতে অনেকেই সকাল বেলায় ছুটেছেন সদরঘাটের দিকে। যদিও সকাল থেকে ঘণ্টা দুয়েক বৈরি আবহাওয়ায় থেমে ছিল ঈদযাত্রা। পরে ঝলমলে আবহাওয়ায় সদরঘাটে যাত্রীদের ঢল নামে।
রোববার সদরঘাটের আগে রায় সাহেব বাজার থেকেই চোখে পড়ে নৌপথের যাত্রীদের। হাতে ও কাঁধে একাধিক ব্যাগ, কারো মাথায় বস্তা, মালামাল নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ চলছেন লঞ্চের দিকে। তবে দুপুর পর্যন্ত সদরঘাটে যাওয়ার সড়কগুলো ছিল অনেকটাই যানজটহীন, তবে ওইসব সড়কে গাড়ির চাপ ছিল।
বেলা ১১টার দিকে সদরঘাটে দেখা যায়, যাত্রীরা আসতে শুরু করেছেন। ঘাটে থাকা কয়েকটি লঞ্চের ডেক যাত্রীতে প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। তবে কিছু সময়ের পরই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়ে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে, সঙ্গে নামে বৃষ্টি। অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য ২ নম্বর সংকেত জারি করে আবহাওয়া বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে সদরঘাট থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে বেলা ১২টার দিকে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়। রোববার দুপুরে বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাটে দায়িত্ব পালনকারী পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা বলেন, দুপুর পর্যন্ত সদরঘাট থেকে মোট ২৬টি নৌযান বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে দু’টি দূর পাল্লার লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে গেছে। যাত্রী বোঝাই হয়ে যাওয়ায় সকালের দিকেই ঢাকা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী তাশরীফ-১ ও ঢাকা-ঘোষেরহাট রুটে চলাচলকারী গ্লোরী অব শ্রীনগর-৮ লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে গেছে, যদিও এই লঞ্চগুলোর বিকেলে থেকে সন্ধ্যা নাগাদ সদরঘাট ছেড়ে যাওয়ার কথা।
দিনেশ কুমার সাহা আরও জানান, এখন লঞ্চ যাত্রীপূর্ণ হয়ে গেলেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আমরা আগেই ঘাট ছাড়ার নির্দেশনা দিচ্ছি।
দুপুরের মধ্যেই সদরঘাটের মূল ঘাটে থাকা ঢাকা-কালাইয়া রুটে চলাচলকারী বন্ধন-৫, ঢাকা-চরফ্যাশন রুটের কর্ণফুলী-১৩, ঢাকা-হাতিয়া রুটের ফারহান-৪, ঢাকা-বোরহানউদ্দিন রুটের প্রিন্স অব জাহিদ-৭, ঢাকা-ভোলা রুটের কর্ণফুলী-৪, ঢাকা রাঙ্গাবালী রুটের জাহিদ-৪ লঞ্চ যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়।
দুপুরের পর সদরঘাটে যাত্রীর চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। অনেককেই লঞ্চের ছাদে চাঁদর বিছিয়ে বসতে দেখা গেছে। বন্ধন-৫ লঞ্চের যাত্রী মো. রাকিবুর রহমান। বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের মৈশাদী গ্রামে। রাকিব বলেন, কাজের তাগিদে শহরে থাকি, মা-বাবা গ্রামে থাকেন। তাই গ্রামে যাওয়া ছাড়া আমাদের ঈদ অপূর্ণ। সকালে বৃষ্টিতে ভিজে সদরঘাটে এসেছি। ডেকে কোনো রকমে বসার জন্য একটু জায়গা পেয়েছি।
সদরঘাটে দায়িত্ব পালনকারী বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা মনে করছেন, সদরঘাটে সর্বোচ্চ ভিড় হবে সোমবার। মঙ্গলবারও যাত্রীর প্রচ- চাপ থাকবে। এর মধ্যেই বেলা ১২টার দিকে সদরঘাট পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এরপরই সদরঘাট পরিদর্শনে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ম ম মোজাম্মেল হক।