সুমন হোসেন, খুলনা ব্যুরো : জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে জীবন বাজি রেখে প্রতিনিয়তই ভূমিকা রেখে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। করোনা সংকটেও তার ব্যতিক্রম নয়। মৃত্যুভয়কে জয় করে করনা দ্বিতীয় ঢেউয়েও পুলিশের মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি সদস্যই সাহসিকতার সঙ্গে করোনাযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন বুদ্ধিদীপ্ত ও বহুবিধ অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদের দিকনির্দেশনায়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ চলমান লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়নে পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞার নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ে চালিয়ে যাচ্ছে কর্মতৎপরতা। গতকাল বুধবার লকডাউন বাস্তবায়ন ও সার্বিক পুলিশি কার্যক্রমসহ একাধিক বিষয়ে কেএমপি’র এই কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের দেশ অনলাইন নিউজ পোর্টালের খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান মোঃ সুমন হোসেন।
লকডাউন কার্যকরের বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা জানান, লকডাউনকালীন বর্তমান সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটনের সার্বিক অবস্থা ভালো। লকডাউন কার্যকরে সরকারি-বেসরকারি যে সমস্ত অফিস সরকারের সার্কুলার মোতাবেক চালু থাকার কথা ছিলো, সেগুলোই চালু রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আসছেন। চিকিৎসক-নার্স, বিভিন্ন হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোও খোলা রয়েছে। তবে দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ রয়েছে। পুলিশ রাস্তায় কাজ করছে। প্রতি শিফটে ৩৬টি মোবাইল পার্টি কাজ করছে কেএমপিতে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কেএমপির কোনো সদস্য আক্রান্ত হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে কমিশনার বলেন, কেএমপির চারজন সদস্য ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে খুলনা সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ সাইফুল আলম একজন। কেএমপি’র হেডকোয়াটার্সে কর্মরত এ্যাসিটেন্ট কমিশনার (সাপ্লাই), গত দু’দিন আগে আক্রান্ত হয়েছিল একজন সার্জেন্ট ও একজন কনস্টেবল। এদের মধ্যে দু’জন সুস্থ হয়ে ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন বলেও জানান তিনি।
সরকার ঘোষিত বর্তমান লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটনা ঘটে গেছে, কেএমপি সদস্যদের এসব ঘটনা এড়িয়ে চলার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আপনি দিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নে কেএমপি কমিশনার বলেন, এখনো পর্যন্ত কেএমপিতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা সবাইকে বলি যেন অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে ঠান্ডা মাথায় সবার সাথে কথা বলতে হবে। যারা অযাচিতভাবে ঘর থেকে বের হয়ে আসছে বা মুভ করছে তাদেরকে নিবৃত করতে হবে। পরামর্শ দিয়েই তাদেরকে বাড়ি ফেরাতে হবে। এভাবেই এখনো পর্যন্ত কাজ চলছে। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কেএমপিতে কোনো রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) জাহাঙ্গীর আলম আজকের দেশকে জানান, ‘কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে খুলনা মহানগরীর প্রবেশদ্বারসহ বিভিন্ন স্থানে ২৬টি চেকপোস্ট বসিয়ে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এদিকে কার্যক্রম বর্তমান সময়ে চলমান রয়েছে। চলমান লকডাউনে কেএমপির আটটি থানা এলাকায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৪২টি ইজিবাইক, ৩০টি মাহিন্দ্র, ৬০টি রিকশা, ৪৪টি মোটরসাইকেল, পাঁচটি সিএনজি ও অন্যান্য ৩২টিসহ মোট ৭১৩টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং এ সংক্রান্তে মামলা হয়েছে ১১৬টি। গত এক সপ্তাহে মাস্ক পরিধান না করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা এবং অপ্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করার অপরাধে কেএমপি’র বিভিন্ন থানার সহোযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২২০টি এবং ২৫১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৫০ টাকা। এ ছাড়াও লকডাউন কার্যকর করতে কেএমপি’র ১০টি মোবাইল টিম, গোয়েন্দা পুলিশের দুটি টিম, থানা, ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে খুলনা মহানগরী এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক কার্যক্রমে যতটা না কঠোর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ মানবিক দিক বিবেচনায় ঠিক ততটাই সহানুভূতিও রয়েছে অসহায় দরিদ্র মানুষদের জন্য। মানিবক দিক বিবেচনায় স্বপ্রণোদিত অর্থের মাধ্যমে ত্রাণ নিয়েও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরই ধারাবহিকতায় গতকাল নগরীর বয়রাস্থ পুলিশ লাইন্স মাঠে সিটি মেয়র আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক ও কেএমপি কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞার উপস্থিতিতে দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এডিসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৩২০ জন দরিদ্রদের মধ্যে প্রত্যেককে (সাত কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, এক কেজি চিনি, এক কেজি ছোলা, তিন কেজি আলু, দুই কেজি পেঁয়াজ, ৫০০ গ্রাম সেমাই, ৫০০ গ্রাম রসুন, এক কেজি লবণ, সর্বমোট ১৭ কেজি পরিমাণ) ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। মেয়র আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। অসহায় মানুষ খাদ্যের অভাবে কষ্ট করছে, আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা বলেন, যারা আজ নিম্নআয়ের মানুষ আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সহকর্মী যারা আছেন তাদের স্বপ্রণোদিত প্রদত্ত অর্থের মাধ্যমেই এই ত্রাণ সহায়তার বিতরণ করা হয়েছে।
ত্রাণ বিরতণকালে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) এসএম ফজলুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এঅ্যান্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম (বিপিএম সেবা), ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; বিশেষ পুলিশ সুপার রাশিদা বেগম, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ এহসান শাহ, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এফঅ্যান্ডবি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (আরসিডি) মনিরা সুলতানা, অতি. ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সোয়াট) মো. মারুফাত হুসাইন, অতি. ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) মো. জাহাঙ্গীর আলম, অতি. ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেন, অতি. ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) শেখ ইমরা, সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার) মো. হাফিজুর রহমান, সহকারী পুলিশ কমিশনার (ফোর্স) মো. সালাউদ্দিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।