শ্রদ্ধাঞ্জলি

জাতীয় জীবন-যাপন

কাজি আরিফ : ছোট্ট আড়াই রুমের বাসা। বাসার মালিক স্বামী স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
কেননা বানভাসি মানুষের মত এক দঙ্গল মানুষ তাদের বাসায় উঠে হাজির হয়েছে৷ যারা হাজির হয়েছে তারা একগাদা লোকের সাথে ঠাসাঠাসি করে থাকার অসুবিধাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। বরং হাসাহাসি করেই থাকছে। ঢাকায় প্রথম আসা বলে কথা!


বিজ্ঞাপন

কোন ব্যাপারনা ভেবেই সিরিয়াল করে খাওয়া গোসল আর টয়লেট শেয়ার করছে সবাই। থাকা, খাওয়া, নাওয়া নিয়ে কারো কোন কমপ্লেইন নেই। থাকার কথাও না। ছোটরা বড়দের হাতের নীচে দিয়ে এসে ঠিকই খেয়ে নিচ্ছে। গোসল সেরে নিচ্ছে।
নো পবলেম।


বিজ্ঞাপন

একটা ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় বেড়াতে আসা লোকজন এই মওকায় ঢাকা শহর দেখে নেবার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, যাদুঘর ছাড়া সে যুগে ঢাকায় আর দ্রষ্টব্য কিছুই ছিলনা। সেই সময়ে টিভি সিনেমাতে ও এই তিনটি দ্রষ্টব্য স্থানের সাথে বড়জোর সদরঘাট আর কমলাপুর রেলস্টেশন দেখানো ছাড়া হাতে আর কিছু ছিলনা। ঢাকায় আসা এই লোকগুলোর এসব দেখা চাই, না হলে বাড়ি গিয়ে গল্পটা কি নিয়ে করবে শুনি?

বেড়াতে আসা মানুষগুলো এসব স্থানে যাবার সাশ্রয়ী পরিকল্পনা করে। সে ব্যাপারে রাত্রি বেলায় মিটিং বসে।
কোথায় গিয়ে কার ক’টাকা লস হল, কে কি দেখল এসব।

বাসার মালিকদের এসব শোনার সময় নেই।
তাদের সাথে খুব একটা দেখাও হয়না কারো। অফিস,বাজার আর রান্নাঘর নিয়ে তাদের গলদঘর্ম অবস্থা। উপরন্ত রাতে পুরো বাসাটা অতিথিদের হাতে ছেড়ে পাশের বাসায় ঘুমাতে যান তারা।

প্রথম বারের মত ঢাকায় বেড়াতে আসা এইসব মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা, বেড়ানোর আবদার, রাতে থাকার ব্যবস্থা হাসিমুখে করে যাচ্ছে।

সেবার হাসিমুখে আমাদের অত্যাচার যারা সয়েছিলেন তারা হলেন আমার ছোটখালা ও খালু। ১৯৮৫ সালে আমার বড়মামী লন্ডন যাবার প্রাক্কালে তাকে প্লেনে উঠিয়ে দেবার নামে আমরা একদল মানুষ এসে সিন্দাবাদের ভুতের মত ঘাড়ে চেপে বসেছিলাম। সেই আমার প্রথম ঢাকা দেখা।

এরপর খালা খালু যেখানেই গেছেন সেখানে আমি গিয়েছি তাদের ভালবাসা আর স্নেহের লোভে। তাদের স্নেহের পরশ সর্বদাই পেয়েছি।

গতকাল রাতে আমার মুক্তিযোদ্ধা খালু রেজাউল ইসলাম ইহলোকের মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজেউন) না,করোনা নয়। দীর্ঘদিনের অসুস্থ্যতা ও হার্ট ফেইল।

এদিকে করোনা আর লকডাউনের ফাঁদে পড়ে সশরীরে গিয়ে উনাকে শেষ শ্রদ্ধাটুকু জানাতে পারছিনা। আমি সেই ঢাকাতেই বন্দী। সেকারনে খুব কষ্ট পাচ্ছি।
আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন। আমিন।