ডেস্ক রিপোর্ট : তাজিকিস্তানে কনফারেন্স অন ইন্টারেকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস ইন এশিয়ার (সিআইসিএ) পঞ্চম সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এ কে আবদুল মোমেন। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম বৈঠক। মোমেন পাঁচ মাস আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। সাবেক কূটনীতিক জয়শঙ্কর মন্ত্রী হলেন গত মাসেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশনাবের হোটেল সেরিনায় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা দুজনই পারস্পরিক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তা আরও গভীর করার উপর জোর দেন। বৈঠকে মোমেন তিস্তা চুক্তি সম্পাদন ও সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারতের সক্রিয় সমর্থনও আশা করেন তিনি। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, কনফারেন্স অন ইন্টারঅ্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স ইন এশিয়ার (সিআইসিএ) পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে স্থানীয় হোটেল সেরিনায় এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম সাক্ষাৎ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর হৃদ্যতাপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন বৈঠকে। তারা আশা প্রকাশ করেন, এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে। বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি সম্পাদন ও সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধে ড. মোমেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারতের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে ভারতের সদ্ভাব ও সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার পরিণত সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করেছে। ভারতের পূর্বমুখী অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রবেশদ্বার হিসেবে বাংলাদেশের অনন্য সম্ভাবনা ও ভূ-কৌশলগত সুবিধার কথা উল্লেখ করে ড. জয়শঙ্কর বলেন, বিমসটেককে শক্তিশালী করলে তা উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তিনি আরও বলেন, ভারত আঞ্চলিক সংযোগের ওপর সমধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। বৈঠকে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা এবং পরিপক্ক ও প্রশংসনীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ-বিরাজিত অমীমাংসিত ও স্পর্শকাতর ইস্যুসমূহ সমাধান করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে যে অভূতপূর্ব উচ্চতায় উন্নীত করেছেন, তা বিশ্বের অপরাপর দেশসমূহের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি ভারতের সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ড. এস. জয়শঙ্করকে অভিনন্দন জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বাংলাদেশে প্রায় ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগ আকর্ষণে ড. জয়শঙ্করের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে ভারতকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অতিসত্বর বাংলাদেশ সফরেরও আমন্ত্রণ জানান। ড. জয়শঙ্কর দ্রুতই একটি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। ১৯৭১ সালে ভারতে শরণার্থী হিসেবে তার অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে ড. মোমেন মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ড. মোমেন জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বিপাক্ষিক সফরের সর্বপ্রথম গন্তব্য হিসেবে তিনি ভারতকেই বেছে নেন। ড. জয়শঙ্কর ১৯৭১ এর ঘটনাপ্রবাহকে তার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করে মুক্তিযুদ্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।