নিজস্ব প্রতিবেদক : শতবর্ষ পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি: এর সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ গংদের লুটের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন ছাড়া টানা তিন মেয়াদ তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। আইন কভার না করায় তিনি নিজে চেয়ারম্যান থাকতে না পারায় তার পছন্দের অনুগতদের দিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে সব নিয়ন্ত্রণ করছেন। ব্যাংকের অর্গানোগ্রামে না থাকলেও তিনি এখন প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানাগেছে। জোট বেঁেধ সরকারি ও সমবায়িদের সম্পদ লুটপাট করছে। ব্যাংকে নানা অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তের জন্যে সমবায় অধিদপ্তর ইতিমধ্যে ৪৯ ধারায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে ১৯০৭ইং সনে এই ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে কৃষি ঋণ কার্যক্রম মূলত নেই, কেবল স্বর্ন বন্ধকি ঋণ কার্যক্রম চলছে,অবৈধভাবে ব্যক্তি আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে। ব্যাংকের প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। যা সমবায়িদের কোন কাজে আসেনা।ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতরা লুটেপুটে খাচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচিত হয় না।জানা গেছে, সদস্য সমিতি থাকলেও তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়না। সব সময় ফয়েজ আহমেদ গংরা পকেট কমিটি গঠন করে।
সমিতির রয়েছে প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংকের রয়েছে তিন তলা নিজস্ব মার্কেট। এখানেই রয়েছে চরম জালিয়াতি, ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ২ভাবে ভাড়া আদায় করা হয়। একটি কাগজে কলমে ভাড়া দেওয়া হয় যা ব্যাংকে জমা হয়। বাকিটা অনানুষ্ঠানিক ভাবে নেয়া হয় যা ব্যবস্থাপনা কমিটির পকেটে যায়। এতে ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হয় তেমনি ব্যবস্থাপনা কমিটির পকেটও ভারী হয়। মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংক ও সাধারন সমবায়ীগণ। নানাভাবে জাল-জালিয়াতী করে বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে ইচ্ছা করে লোকসান দেখানো হয়। যাতে করে সদস্য সমিতিকে লভ্যাংশ দিতে না হয়।
অন্যদিকে এই ব্যাংকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফয়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে এফডিআর, ডিপিএসসহ অন্যান্য আমানতের লাভের টাকা ও মুল টাকা ফেরত না দিয়ে গড়িমসি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমানতকারী শহীদুল করিম জেলা সমবায় অফিসার বরাবর এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারী তার লিখিত অভিযোগ পত্রে জানান, আমি একজন ব্যবসায়ী। সমবায় ব্যাংকের ম্যানেজার শেখ ফয়েজ আহমেদের অনুরোধে ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো অপারেটিভ ব্যাংকে ২০১৮ সালে মাসিক দুই হাজার টাকা করে তিন বছর মেয়াদী একটি ডিপিএস যার হিসাব নম্বর ২/৩৭৮ ও তিন বছর মেয়াদী ১০০০০০(এক লক্ষ) টাকার একটি এক কালীন এফডিআর যার হিসাব নম্বর ১১০, রশিদ বই নং ৯ শুরু করি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আরও একটি ডিপিএস মাসিক এক হাজার টাকা হারে তিন বছর মেয়াদী যার হিসাব নং ২/৩২০ শুরু করি। বর্তমানে করোনায় ব্যবসা বানিজ্য মন্দা হওয়ায় আমার টাকার প্রয়োজন হয়। ব্যাংকে গিয়ে শেখ ফয়েজ আহমেদের কাছে টাকা চাইলে তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন টাল বাহানা শুরু করেন। ব্যাংকের কর্মচারীরা ইতোমধ্যে আমার বই যাচাই করেছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, রানা আহাম্মেদ নামের একজনকে এক লক্ষ টাকা লোন দেওয়ার বিপরীতে আমার নিকট থেকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি চেক জামানত হিসেবে আমি দিই। সেই লোন পরিশোধ হয়ে গেলেও জামানত হিসেবে দেওয়া আমার চেকটি তিনি ফেরত দেননি বরং আমাকে না জানিয়ে ঐ লোককে আবারও দুই লক্ষ টাকা লোন দেন। রানা আহাম্মেদ পরবর্তী দুই লক্ষ টাকা লোন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে আমাকে নোটিশ করা হয়। এই নোটিশ পেয়ে আমি অবাক হই এবং তার প্রতারণা বুঝতে পারি। তখন ব্যাংকে এসে চেক চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন।
এ বিষয় নিয়ে টেপাখোলা জেলা সমবায় অফিসে এসে জানতে পারি এই ব্যাংকটি সাধারণ তফসিলি ব্যাংকের মত ব্যাক্তির নিকট থেকে কোন টাকা জমা রাখতে পারে না। এই ব্যাংকের সদস্য একেক টি প্রাথমিক সমিতি। এটা জানার পর আমার মাথায় বাজ পরে। আমি বুঝতে পারি যে, শেখ ফয়েজ আহমেদের দ্বারা কত বড় প্রতারণার শিকার হয়েছি। ব্যাংকে আসা যাওয়ার সুবাদে আমি অনেককেই দেখেছি এমন হয়রানি হতে। কাজী ওমর আলী নামের একজনের ৮৬ লক্ষ টাকা এখানে রয়েছে। মিজানুর রহমান নামের একজনের ৬/৭ লক্ষ টাকা রয়েছে। এরকম আরও লোক নিয়মিত টাকার জন্য আসা যাওয়া করছেন। তাদের সাথে কথা বলে জেনেছি দীর্ঘদিন যাবৎ তারা তাদের টাকার জন্য ঘুরছেন কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না। তারা তাদের টাকার জন্য আইনের আশ্রয় না নিয়ে কোন ভাবে বুঝিয়ে যদি টাকাগুলো তুলতে পারেন সে আশায় আছেন। কিন্তু আমি নিরুপায় হয়ে শেখ ফয়েজ আহমেদের খারাপ আচরণ ও প্রতারণার বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে এই আবেদনের মাধ্যমে অনুরোধ করছি। আমানতের টাকা তো ফেরত পাননি; উল্টো ফয়েজ আহমদের হুমকির কারনে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত শহীদুল করিম।
ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকে ফয়েজ আহমেদ গংদের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করার জন্য সমবায় অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সমবায়ীগণ।