দায় নিল দুই সিটি
চিকিৎসকসহ ৩জনের মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদক : বর্ষা শুরু হতে না হতেই রাজধানীবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু জ্বর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছর জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬১৮ জন। আর চলতি মাসের প্রথম তিন দিনেই আক্রান্ত হন ২৫৪ জন।
এবার আক্রান্তদের বেশীরভাগই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছেন। তাই জ্বর হলে দেরি না করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডা. নিগার নাহিদ দিপু নামে এক নারী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৩২ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন ডা. নিগার। সর্বশেষ তিনি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ বছর ডা. নিগারসহ মোট তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন।
হঠাৎ করেই জুন মাসে রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির দায় সিটি করপোরেশন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর এজন্য সমন্বয়হীনতাকেই দুষছেন তারা। সিটি করপোরেশনও দায় নিয়ে বলছে, এখন আরো সতর্ক তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
এক পরিবারের ছয় শিশু এবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের বয়স ২ থেকে দশ বছর। কাছের হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে বাবা-মা তাদের রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
শিশু হাসপাতালেরও চিত্রও একই। চলতি মাসের প্রথম তিন দিনেই ১৯ শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে।
এ বছর জুনে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬১৮ জন। জুলাই মাসের প্রথম তিন দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৪ জন। এ মৌসুমে এ পর্যন্ত মারা গেছে দুইজন।
গত বছরের জুনে ডেঙ্গু আক্রান্তর সংখ্যা ছিল ২৯৫। জুলাই মাসে ৯৪৬ আর আগস্টে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৭৯৬ জন। সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৮৭ আর অক্টোবরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪০৬ জন। গত মৌসুমে মারা যান মোট ১৩ জন।
চিকিৎসকরা জানান, এবার বেশিরভাগই রোগীই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত। যা অল্প সময়েই রোগীকে দুর্বল করে ফেলে।
এ মৌসুমে তৃতীয় পর্যায়ের ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় জ্বর হলে বিলম্ব না করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এবার আগেভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক। এডিস মশা যেন লার্ভা ছড়াতে না পারে সেজন্য সিটি করপোরেশনসহ নাগরিকদের সচেতনতা হওয়ার পরামর্শ তার। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবার আগেই প্রতিরোধের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বিকল্প নেই। নিজের বাড়ি ও আশপাশে যেন বৃষ্টির পানি না জমে সে দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
চিকিৎসকের মৃত্যু : রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডা. নিগার নাহিদ দিপু নামে এক নারী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৩২ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন ডা. নিগার। সর্বশেষ তিনি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্কয়ার হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ারের এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার সকালে জরুরি বিভাগ থেকে আইসিইউতে ভর্তি হন ডা. নিগার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টায় তার মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার ডা. নিগারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি পপুলার ও স্কয়ার হাসপাতালের বরাত দিয়ে জানান, ডা. নিগার গত ১ জুলাই রাত দেড়টায় প্রচন্ড জ্বর নিয়ে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজেটিভ ধরা পড়ে। ভর্তির পর তার রক্তে প্লাটিলেট ছিল ১১ হাজার। পপুলারে কয়েক ঘণ্টার চিকিৎসায় প্লাটিলেট ১৫ হাজার হয়। ওই দিন দুপুরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তার। দ্রুত চিকিৎসায় তিনি কিছুটা সুস্থ হন। রাত ১টার দিকে আরেকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। বুধবার সকালে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে আনার পর আরেকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। এ বছর ডা. নিগারসহ মোট তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন।
দায় নিল দুই সিটি: হঠাৎ করেই জুন মাসে রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির দায় সিটি করপোরেশন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর এজন্য সমন্বয়হীনতাকেই দুষছেন তারা। সিটি করপোরেশনও দায় নিয়ে বলছে, এখন আরো সতর্ক তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনেই এখন সরব এডিস নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে মাঠে নেমেছে উত্তর আর চলতি মাসের শুরুতেই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে এসেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে দুই সিটি করপোরেশন যখন এমন কর্মসূচি দিচ্ছে, তখন এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই হাজার। এর মধ্যে জুনেই আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৫৯৫ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ এমন পদক্ষেপ আরেকটু আগে নিলে হয়তো এই পরিসংখ্যান ভিন্ন হতো। তাদের চোখে ঘাটতি আছে সমন্বয়েরও। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধে যেভাবে কাজ করার দরকার, এগুলো তারা পুরোপুরি করতে পারেনি। কিন্তু তারা নতুন ওষুধ এনেছে কিন্তু তার আগেই তো ঘটনা ঘটে গেছে।
দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বলেই মানছে দুই সিটি করপোরেশন। তবে মৌসুমের বাকি সময়ে এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলে জানায় তারা। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমেনুর রহমান জানান, যেহেতু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ঘাটতি ছিল- এটা তো অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরিফ জানান, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।