চট্টগ্রাম প্রতিবেদক : সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে টানা ভারি বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরী। বৃষ্টিতে ধসের শঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে ইতোমধ্যে সাড়ে তিনশ পরিবার আটটি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এসব পাহাড়ে থাকা অবশিষ্ট লোকজনকে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য তোলা বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রামে শনিবার গভীর রাতে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। গত পাঁচ দিনে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস মোট ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে শুধু সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টাতেই রেকর্ড করা হয়েছে ১৩৬ দশমিক দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অ্যাসিসট্যান্ট প্রদীপ কান্তি রায় বলেন, “পুরো দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু প্রবলভাবে সক্রিয়। একারণে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। আজও ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোনো কোনো পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে।
জনভোগান্তি চরমে
রোববার রাত থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে। সোমবার দুপুরের মধ্যে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেট, অলঙ্কার, পাহাড়তলি রোড, বাকলিয়া, চকবাজার, মেহেদীবাগ, ওয়াসার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে পানি ঢুকে পড়েছে। তিন পোলের মাথা, হেমসেন লেন, জামালখান বাই লেনসহ বিভিন্ন এলাকায় কোমর সমান পানি দেখা গেছে।
এনায়েত বাজার ও রাইফেল ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় অপর্ণাচরণ স্কুল সংলগ্ন এলাকায় নালার পানি উপচে মূল সড়কে বইছে। ভারি বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী। সকাল থেকে জলমগ্ন রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা। নগরীর লালখান বাজার মোড় এলাকায় গাড়ির অপেক্ষায় থাকা শাহাদাত হোসেন বলেন, আগ্রাবাদ যেতে হবে। কিন্তু গাড়ি নেই বললেই চলে। এই বৃষ্টিতে হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ভিজছি। নগরীর মেহেদীবাগের এক বাসিন্দা বলেন, নিচতলার বাসায় পানি ঢুকে গেছে। এই এলাকায় গত কয়েক বছরে এমন হয়নি। চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় সেখানকার দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় রোগী ও স্বজনরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। প্রবর্তক ও দুই নম্বর গেট এলাকায় প্রায় বুক সমান পানি জমায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ। নগরীর অন্য অংশে পাহাড়তলি বাজার সড়ক, ঈদগাঁও সড়ক ও ডিটি রোডের কিছু এলাকা পানি জমে যাওয়ায় বেলা দেড়টা পর্যন্ত যানজটে পুরো সড়ক অচল হয়ে যায়। জামালখান বাইলেনের বাসিন্দা আইনজীবী মিলি চৌধুরী ফেসবুকে জলাবদ্ধতার ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘বন্যায় ডুবে গেছে জামালখান বাইলেইন, আর কতদিন?’
পাহাড়ে ঝুঁকি
নগরীর পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নিতে শনিবার আটটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে তিনশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়ে ছেন জেলা প্রশাসনের স্টাফ কর্মকর্তা রাজীব হোসেন।
তিনি বলেন, প্রশাসন সজাগ আছে। আমাদের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং এবং উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। নগরীর আটটি আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে পাহাড় থেকে অনেকে আসছেন। তাদের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি, চন্দ্রনগর, চৌধুরী নগর এবং ১,২ ও ৩ নম্বর ঝিল পাড় এলাকায় পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।