মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী : তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই যুগে পৃথিবীর যে কোনো স্থান হতে যে কোনো সেবা/অনলাইন সেবা প্রদান করা যায়। বর্তমান পৃথিবীকে বিশ্বপল্লী (Global Village) বলা হয়। বর্তমানে সেবা প্রদান করার জন্য সেবা প্রদানকারীকে বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থান করার প্রয়োজন হয় না। যিনি ভ্যাট প্রদান করবেন তিনি আবাসিক হতে পারেন আবার অনাবাসিক হতে পারেন। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা-২ এর দফা(১) এবং দফা (১৫) এর মাধ্যমে যথাক্রমে ‘অনাবাসিক ব্যক্তি’ এবং ‘আবাসিক ব্যক্তি’ এই দুটি ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা সন্নিবেশ করা হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি/বিদেশি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান বা তাদের কোনো শাখা যদি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে কিন্তু মালিক বাংলাদেশে অবস্থান না করে তাহলে তাকে ‘অনাবাসিক ব্যক্তি’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে।
গুগল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনাবাসী প্রতিষ্ঠান তাদের পেজে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে, বিভিন্ন সেবা বিক্রি করে থাকে। পুরো ব্যবসাটি অনলাইন ভিত্তিক। অনেকক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যালয় বাংলাদেশে নেই। তারা মূলত অনলাইনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন নেয়, প্রচার করে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের অনাবাসী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিপরীতে প্রযোজ্য ভ্যাট আদায় করতে হবে।
আইনের ধারা-১৯(১) অনুসারে কোনো অনাবাসিক ব্যক্তি বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট স্থান হতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা না করলে অর্থাৎ বাংলাদেশের বাইরের কোনো স্থান হতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে বা বাংলাদেশের বাইরের কোনো স্থান হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সেবা প্রদান করলে তাকে মূসক এজেন্ট নিয়োগ করতে হবে। যারা অনাবাসিক ব্যক্তি তারা সাধারণত বিদেশে অবস্থান করেন। মূসক এজেন্ট তাদের পক্ষে ভ্যাট সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম (যেমন- ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন নেয়া, ভ্যাট চালান ইস্যু করা, হিসাবপত্র সংরক্ষণ করা, দাখিলপত্র দাখিল করা ইত্যাদি) সম্পাদন করবেন। উল্লেখ্য, ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন অনাবাসিক ব্যক্তি/প্রধানের (Principle ) নামে নিতে হবে। আইনের ধারা-১৯(২) অনুসারে অনাবাসিক ব্যক্তির সকল দায়দায়িত্ব ও কার্যাবলী উক্ত মূসক এজেন্ট পালন ও সম্পাদন করবেন। তবে, আরোপিত কর, জরিমানা, দন্ড এবং সুদসহ যাবতীয় অর্থ পরিশোধের জন্য অনাবাসিক ব্যক্তি দায়বদ্ধ থাকবেন।
প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং- ২৪০- আইন/২০২১/ ১৬৩-মূসক, তারিখ- ২৯/০৬/২০২১ এর মাধ্যমে প্রণীত “উৎস মূল্য সংযোজন কর কর্তন ও আদায় বিধিমালা,২০২১ এর বিধি -৩(৩) অনুসারে অনিবন্ধিত ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত অনাবাসিক ব্যক্তির নিকট হতে গৃহীত সেবার সেবামূল্য পরিশোধের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ১৫% হারে উৎসে মূসক আদায় করবে।
অনাবাসিক ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশে প্রদত্ত বেতার, টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক সেবা (যেমন- ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ভাইবার, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যম ব্যবহার করে প্রদত্ত মেসেজ, ভয়েস, বিজ্ঞাপন ও অনুরূপ যে কোন সেবা) সরবরাহকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে মুসক এজেন্ট নিয়োগ পূর্বক মূসক এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হবে। ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ আরো কিছু অনাবাসী প্রতিষ্ঠান কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট, ঢাকা (দক্ষিণ) কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রে ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন গ্রহণ করে যথারীতি ভ্যাট পরিশোধ করছে।