ঢাকামুখী অভিবাসন রোধ করা না গেলে কোনো পরিকল্পনায় কার্যকর হবে না-ঢাদসিক মেয়র

রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : ঢাকামুখী অভিবাসন রোধ করা না গেলে যত পরিকল্পনায় নেওয়া হোক তা কার্যকর হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।


বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত “পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) সেক্টরে ৫০ বছরের অর্জন ও ভবিষ্যৎ করণীয়” শীর্ষক এক সেমিনারে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই মন্তব্য করেন।


বিজ্ঞাপন

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “ঢাকা আজ ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের শহর। ২০৩০ সালে কি এটা ৩ কোটি হবে, ২০৪১ সালে কি ৫ কোটি হবে? তাহলে কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না।

আমাদেরকে আগে ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের সকল নাগরিক সুবিধা, উন্নত ঢাকার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে দেশের গ্রামগুলোতে চাকুরি, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

যখন ঢাকার দিকে এই গতি (গ্রাম হতে শহরে অভিবাসন) রোধ করতে পারব, তখনই আমরা ২০৩০ সালে ঢাকার ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের যথার্থ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারব। কিন্তু আমরা যদি ধরেই নিই যে, ঢাকার দিকে এই অভিবাসনের গতি চলতে থাকবে, তাহলে আমরা যতই পরিকল্পনা করি না কেন, ২০৩০ সালে গিয়ে দেখা যাবে — আমাদের কোনো পরিকল্পনায় কার্যকর হয়নি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া রূপরেখা আলোকেই কেবল ঢাকামুখী অভিবাসন রোধ করা যাবে উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গ্রাম হবে শহর’ — যে পথনকশা আমাদেরকে দিয়েছেন — তা যদি সঠিকভাবে, সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে অভিবাসনের এই গতি রোধ করা যাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকাবাসীর জন্য উন্নত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে।”

ঢাকা শহরের ৯৫ শতাংশ বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক ও ৯৯.৯৯ শতাংশ বাড়িতে সোক ওয়েল নেই কিন্তু বাড়ির মালিকদের সেগুলো নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য করতে হবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এ ইমারত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের আবেদন ও অনুমতি সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে নিতে হবে বলে উল্লেখ আছে।

কিন্তু আজ অবধি সেটা রাজউক দিয়ে থাকে। আমরা একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। মন্ত্রণালয় সেটা পর্যালোচনা করছে। আমি আশাবাদী যে, ডিসেম্বরের মধ্যে সেটা পেয়ে যাবো। পেয়ে গেলে আগামী বছর থেকে সেটা বাস্তবায়ন করব।

যতক্ষণ পর্যন্ত সেই বসত-বাড়ি, আবাসনগুলো নিজস্ব সেপটিক ট্যাংক ও সোক ওয়েল স্থাপনা বা নির্মাণ করবে না, আমরা সেগুলোর কোন অনুমতি দেবো না। সেটা যত বড় অট্টালিকার ডেভেলপার কোম্পানীই হোক অথবা ছোটখাটো ঘরই হোক।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনসহ জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জাতির দুঃসময়ে, দুর্দিনে, বিপদে-আপদে সবার আগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

আমাদের দেশে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ মিলে মিশে বসবাস করে। এদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজকে সেই সম্প্রীতি নষ্ট করতে এবং দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয় সরকারসহ সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে হবে।”

সম্প্রতি কুমিল্লার পূজামণ্ডপে সৃষ্ট ঘটনাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রের একটি অংশ উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, “এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।