সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা খোকনের
নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিশেষ এক বৈঠকে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকার দুই মেয়র। পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে উল্লেখ করে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, দিনদিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে। তাতে সন্দেহ নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সুপরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে গিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই সিটি এলাকা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনবো। আর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় তার সততার কোনও অভাব নাই। তবে অভিজ্ঞতার অভাব আছে। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আগামী রোববার (৪ আগস্ট) ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ আনা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মলেক বৈঠক করেন। এতে ঢাকার দুই মেয়র, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমও)মহাসচিব ইকবাল আরসালান, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে জটিল হচ্ছে। সামাল দিতে আমরা সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে। রাজধানীর ১১টি ওয়ার্ড এখন ডেঙ্গুমুক্ত দাবি করে তিনি বলেন, হাজারও দুঃসংবাদের মধ্যে সুসংবাদও আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির নতুন ওয়ার্ডগুলো বাদ দিয়ে পুরনো ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ড পুরোপুরি ডেঙ্গুমুক্ত। তবে মেয়র ১০টি ওয়ার্ডের হিসাব দেন। এগুলো হলো- ১৪, ১৮, ২২, ২৩, ২৬, ৩৫, ৪২, ৫৩, ৫৫, ৫৬। তিনি জানান, গত ১৭ থেকে ২৭ জুলাই কয়েকটি সংস্থা জরিপ করে এই ফলাফল জানিয়েছে। মেয়র বলেন, দেশের সর্বস্তরের জনগণ, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। আপনাদের কাছে দোয়া চাই। এ সময় এই রিপোর্টের সঙ্গে মতবিরোধ থাকলে, এলাকায় গিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করার আহ্বান জানান তিনি। দক্ষিণ সিটি মেয়র বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের সব সংস্থার সমন্বয়ে কাজ চলছে। জনগণ আগের তুলনায় অনেক সচেতন ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নগর কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করছে। রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু যে কোনও সিজনাল রোগ নয় তা প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই ৩৬৫ দিনই এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে হবে। সে কারণে আমি ডেঙ্গু রিসার্চ সেন্টার করার কথা বলছি। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একটি রোগীর মৃত্যুও কাম্য নয়। আমরা চেষ্টা করছি, ভুল তো হতেই পারে। শিখতে গেলে ভুল হবে। তবে একসময় তো ঠিক হবে। আমার সততার কোনও অভাব নাই। তবে অভিজ্ঞতার অভাব আছে। তিনি আরও বলেন, আগে যে কেউ চাইলেই মশা মারার ওষুধ আমদানি করতে পারতো না। সেই মারার ওষুধ আনতে পারবে। একটি চালানের ওষুধ ত্রুটিযুক্ত হওয়ার চালান বাতিল করেছি এবং সেই কোম্পানিকে ব্ল্যাকলিস্টেড করেছি। পরবর্তী চালানের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ আছে। মশা মারাই একমাত্র সমাধান নয়। এর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী এই তিন ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করছি, ভর্তি হওয়া একটি রোগীও যেন মশারির বাইরে না থাকে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ১৪ হাজার মশারি বিতরণ করেছি। আরও ১৬ হাজার রেডি আছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ আনা হচ্ছে বলে জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কলকাতায় ডেঙ্গু নিয়ে যিনি কাজ করেছেন, তার নাম অনিক ঘোষ। আমি তাকে ফোন করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, আমাকে আমন্ত্রণপত্র পাঠান। আমি গত বুধবার রাত ১০ টায় আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছি। আগামী রোববার অনিক ঘোষ বাংলাদেশে আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। শুধু মশা মারলে হবে না, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি একটি টেকনিক্যাল ব্যাপার। আমাদের এখন তিনটি কাজ আছে। এগুলো হলো- স্বল্প সময়ের কাজ, মধ্যম সময়ের কাজ ও দীর্ঘ সময়ের কাজ। মেয়র বলেন, খারাপ ওষুধ নিয়ে যে প্রশ্ন এসেছে, সেটা নিয়ে বলতে চাই, আমার সিটি করপোরেশনে যে চালানটি এসেছিল, পরীক্ষার পরে দেখেছি, ওষুধগুলো কার্যকর নয়। এরপর ওষুধের ওই কোম্পানিকে আমরা কালোতালিকাভুক্ত করেছি। ওই চালানটিও বাতিল করা হয়েছে। খারাপ ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। পরবর্তী চালানের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, গত সোমবার সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে দেখা যায়, ওষুধ আমদানিতে কিছুকিছু জটিলতা ছিল। যেমন, সারাবিশ্বে অনেক উন্নত ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু, ২০১৫ সাল থেকে সেগুলো আমদানি বন্ধ ছিল। তবে, যত সমস্যা ছিল, সেগুলোর সমাধান হয়ে গেছে। এখন রেজিস্ট্রেশন করা যে কেউ সে ওষুধ আনতে পারবে।