মেটাভার্স হবে বিস্ময়ের বিস্ময় এক স্বপ্নের দুনিয়া

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

শাহ কামাল সবুজ : গত কয়েকদিন আগে মেটাভার্স (Metaverse) নিয়ে ফেইসবুক স্রষ্টা জুকারবার্গ যে লাইফ প্রোগ্রাম করেছিলেন তার মর্মার্থ বাংলায় যা দাঁড়ায় তা অনুধাবন করলে আপনি বিস্মিত হবেন। যা কেউ কল্পনা করেননি তাই হতে যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে। বলতে পারেন এক স্বপ্নের দুনিয়ায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন বিশ্ববাসী। রাহাত চৌধুরীর সাথে আমিও কিছু সংযোজন বিয়োজন করে লিখছি আপনাদের,,, হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে তবে আজকের দিন থেকে ২০ বছর আগে মোবাইল, ইন্টারনেট, এনড্রয়েট যেমন ছিল মানুষের কল্পনার বাইরে। ঠিক ভবিষ্যতে যা হতে যাচ্ছে তাও এখন কল্পনা করা কঠিন। যারা ভাবছেন এটা কেমন করে সম্ভব?? তাদের বলছি মন দিয়ে পড়ুন। বুঝতে পারবেন অনেকটাই,,,,,


বিজ্ঞাপন

মার্ক জুকারবার্গ গত কয়েকদিন আগে লাইভের মাধ্যমে পৃথিবীতে যে একটা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, তা হবে একুশ শতকের একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিশেষ করে ইন্টারনেটের একটা মাইলফলক।
জুকারবার্গের ভাষায়, “Metaverse is the Successor of Internet”। অনেকেই শুধু এটা জেনে ক্ষান্ত দিয়েছেন যে, ফেইসবুক ফেইসবুকই থাকছে শুধু ‘Meta’ নামে একটা নতুন কোম্পানির আবির্ভাব হয়েছে মাত্র। আগে ফেইসবুক ছিলো ফাদার কোম্পানি, আর এখন Meta হবে মাদার কোম্পানি, যার অধীনে থাকবে WhatsApp, Facebook, Instagram এর মতো অ্যাপস। এটা কোনো বিশেষ ঘটনা না, ঘটনা হচ্ছে এই Meta কোম্পানি তৈরি করতে যাচ্ছে মেটাভার্স (Metaverse) নামে এক নতুন ভার্চুয়াল দুনিয়া। আমাদের ইউনিভার্স এর একটা প্যারালাল কপি হবে এই ‘মেটাভার্স।’ এই মেটাভার্স তৈরিতে সহযোগী হিসেবে থাকছে বিশ্বের সব বড় বড় টেকনিক্যাল কোম্পানি। যারা সবাই মিলে নির্মান করতে যাচ্ছে এক ভার্চুয়াল দুনিয়া। যার নেতৃত্বে থাকছে মেটা (Meta)।


বিজ্ঞাপন

মেটাভার্স এ আপনি নিজেই নিজের একটা 3D দুনিয়া তৈরি করতে পারবেন। সেখানে আপনার একটা ‘ভার্চুয়াল কপি’ বা ‘এনিমেটেড কপি’ (Avatar) বসবাস করবে। আপনি চাইলেই সেখানে আপনার বন্ধু বা আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। আপনার প্রোফাইল পিকচারের মতোই আপনার ‘3D Avatar’ সেখানে আপনার প্রতিনিধিত্ব করবে। মজার বিষয় হচ্ছে সেখানে আপনি আপনার একাধিক ‘ভার্চুয়াল কপি’ তৈরি করতে পারবেন। যেমন গেইম খেলার জন্য একটা। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ভ্রমণের জন্য একটা। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য একটা।
শুধু তাই না, সেই দুনিয়ায় আপনি পছন্দমতো যেকোনো পোশাক পরতে পারবেন। কাপড় ও আসবাবপত্র কিনতে পারবেন, আপনার ভার্চুয়াল ঘর আপনার ইচ্ছেমতো সাজাতে পারবেন। অনেকে সেখানে বিভিন্ন 3D অবজেক্ট তৈরি করে বিক্রি করবে, আর আপনি কিনবেন। অবশ্য আপনিও সে দুনিয়ার বিক্রেতা হতে পারবেন। যদি আপনি 3D অবজেক্ট তৈরি করতে পারেন।

মেটাভার্সে যখন আপনি বাংলাদেশে থেকে জার্মানিতে কোনো ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, আর তখন যদি টিচার এসে আপনার কানটা মলে দেন, তাহলে আপনি সে ব্যথাও অনুভব করবেন! আপনি দুরবর্তী কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য, তাঁর সাথে চ্যাট করা, ছবি দেখা, কথা শোনার পাশাপাশি তাকে (ভার্চুয়াল কপি) ধরতে পারবেন এবং তার সাথে পাশাপাশি বসে কথা বলার ফিল পাবেন। আপনার আই কন্টাক্ট, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, বডি মুভমেন্ট সব হবে বাস্তব জগতের মতো, হুবহু। এজন্য আপনাকে একটা AR Glass পরতে হবে, যা দেখতে আমাদের সাধারণ চশমার মতোই। যেখানে একটা ক্যামেরা লাগানো থাকবে, আর কাজ করবে আপনার চোখ ও হাতের মুভমেন্টকে অনুসরণ করে। আপনার আসেপাশের পরিবেশ ভালো না লাগলে, আপনি হাঁটতে হাঁটতে বা ঘরে বসেই চলে যেতে পারবেন মেটাভার্সে।

মেটাভার্সে ঘরে বসেই আপনি ঘুরে আসতে পারবেন আমেরিকায়, চড়তে পারবেন আইফেল টাওয়ারের চূড়ায়, কিংবা ধরে দেখবেন মিশরের হাজার বছরের পুরনো পিরামিড। আপনি চাইলে সেখানে বসেই সেই পিরামিড নির্মাণের ইতিহাসও দেখতে পারবেন, স্বচক্ষে। দেখবেন প্রাচীন কাপড় পরা কোনো মিশরীয় দাস টেনে নিচ্ছে এক বিরাট পাথর, মরুভূমির বালুর উপর এই টানার শব্দ, চিহ্ন এবং সেই মিশরীয় দাসের দীর্ঘশ্বাস আপনি শুনতে পারবেন। ধরে দেখতে পারবেন সেই পাথরটিও! মহাকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে, মহাকাশেও ভ্রমণ করে আসতে পারবেন। আপনি চাইলেই মেটাভার্সে একটা বাংলাদেশ তৈরি করতে পারবেন যেখানে বাংলাদেশের নদীনালা, খালবিল, পাহাড়, ঝর্ণা, সব থাকবে। অন্যদেরকে সে দেশে হয়তো আপনি নিমন্ত্রণ দিবেন। সেখানে ভিসা, পাসপোর্ট ও ফি’র ব্যবস্থা রাখতে পারবেন। আবার কাউকে একসেস না দিয়ে, একাই থাকতে পারবেন সে দেশে। সব মিলিয়ে আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন আপনার স্বপ্নের দুনিয়া। বন্ধুর সাথে বসে গল্প করতে চাইলে তাকে নক দিয়ে শুধু বলবেন, ‘এই আমার ঘরে আয়, জরুরি আলাপ আছে’। চাইলে আপনারা ভার্চুয়াল ঘরে বসে, ভার্চুয়াল বোর্ডে আপনি দাবা বা টেবিল টেনিস খেলবেন, ভার্চুয়াল টিভি দেখবেন, গান শুনবেন। মিটিং, আড্ডা, ক্লাস, খাওয়াদাওয়া সব হবে মেটাভার্সে।
মেটাভার্সে আপনি ডাক্তারও দেখাতে পারবেন।
আমি আশংকা করছি হয়তো এ ভার্সনে পতিতালয়ও থাকতে পারে। সেখানে হয়তো পতিতা নির্মানকারী অনেক প্রতিষ্ঠানও থাকবে। হয়তো এক্সেস সবার থাকবে না। তাঁরা বলছে শিশুদের জন্য সেখানে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে। সবমিলিয়ে ইন্টারনেটে যা হতে যাচ্ছে, তখন আপনি কতক্ষণ অনলাইনে ছিলেন সেটা হিসেব না করে, কতক্ষণ ছিলেন না সেটা হিসাব করবেন।

উপরে যা যা বলা হয়েছে তা আগামী বছরই হয়ে যাচ্ছে না, এজন্য Meta এক দশকের পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা সবাই মিলে ধাপে ধাপে একটা দুনিয়া নির্মান করছে। নির্মাণ করছে সে দুনিয়ার ইতিহাস।

সম্ভবত এটাই ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, যা দাজ্জালের তৈরিকৃত জান্নাত হতে পারে।
বাকিটা মহান আল্লাহতালাই ভাল জানেন।

আপনাকে এখন থেকেই সে দুনিয়া সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে, সেই সর্বগ্রাসী দুনিয়ায় আপনি কি করবেন এবং কিভাবে সেটা মোকাবিলা করবেন সেটা এখন থেকেই ভাবতে হবে। ২০২২ সাল খুব দূরে নয়, দরজায় কড়া নাড়ছে, কড়া নাড়ছে এক নতুন দুনিয়া।
যা কঠিন চমকপ্রদ।