সড়কে মৃত্যুর মিছিল

অপরাধ এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা সারাদেশ

দুদিনেই প্রাণ গেল ৩৭ জনের

মহসীন আহমেদ স্বপন : ঈদের সময় মহাসড়কে বেড়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনা। বাড়তেই থাকে মৃত্যুর মিছিল। অনেকের আনন্দের ঈদযাত্রা পরিণত হয় শোকযাত্রায়। গত দুদিনেই সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৭ জন।
ঈদুল আজহার ছুটির রেশ এখনো কাটেনি। ছুটি উপভোগ করতে রাজধানীর মিরপুরের কিছু বাসিন্দা মিলে কক্সবাজার ও বান্দরবান ভ্রমণের আয়োজন করেন। কিন্তু ভ্রমণের শুরুতেই বাসের চালকের ঘুমের কারণে চিরঘুমে চলে গেলেন তাদের আট জন। গত বুধবার রাত ২টার দিকে মিরপুর থেকে পিকনিকের দুটি বাস কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে ফেনীতে পৌঁছার পর চালক ঘুমের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে প্রাইম প্লাসের রিজার্ভ করা বাসটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়ার স্টার লাইন ব্রিক ফিল্ডের কাছে এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ছয় জন প্রাণ হারান। অন্য দুই জন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতির তথ্য মতে, ২০১৬ সালের ঈদের সময় ১২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৭৪৬ জন।
২০১৭ সালের একই সময়ে ২০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২৭৪ জন, আহত হয় ৮৪৮ জন।
আর ২০১৮ সালে একই সময়ে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞের মতে, ঈদের সময় সড়কে গাড়ির গতি ও যানবাহনে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়। সাথে বেড়ে যায় অবৈধ যানবাহন এবং অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের সংখ্যা। যার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ঈদের সময় দেখা যায় শহরের বাইরে থেকে, অন্য রুটে চলে যেসব গাড়ি সেগুলো চলে আসে। অনেক আনফিট গাড়ি, পুরনো গাড়ি চলে আসে। ড্রাইভারদের ওপর চাপ থাকে। আবার ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা কম থাকে। ফলে যার যার মতো গাড়ি চালায়।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কগুলো মেরামত করা হলেও দুর্ঘটনা রোধে নেয়া হচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। সাইফুন নেওয়াজ বলেন, আমরা রাস্তা বানাই কিন্তু রাস্তা নিরাপদ করতে যা করা দরকার আমরা তা করি না। দুর্ঘটনা রোধে যাত্রী, চালক এবং সংশিষ্ট সবাইকে সচেতনতারও আহ্বান জানান তিনি।
একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বাসের চাপায় মারা গেছেন প্রাইভেটকারে থাকা একই পরিবারের পাঁচজন। বেঁচে যাওয়া পরিবারের একমাত্র শিশু নাহিদ ময়মনসিংহ মেডিকেলের আইসিইউতে ভর্তি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস একটি প্রাইভেটকারকে চাপা দিলে একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন। দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, প্রাইভেটকারে থাকা নেত্রকোনার দুর্গাপুরের রফিকুজ্জামান, তার স্ত্রী নাজমুন্নাহার শাহীন, ছেলে নাদিম, মেয়ে রনক জাহান ও রফিকুজ্জামানের শ্যালক আশরাফুল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আশরাফুল। তিন বছরের শিশু পুত্র নাহিদ ও চালক ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি আছে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিংয়ের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
স্টেশন অফিসার মাহফুজুর রহমান বলেন, বাসটি প্রাইভেটকারটিকে সামনে থেকে চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা হয়।
ওসি মো. কামরুল ইসলাম মিয়া বলেন, আগের প্রাইভেটকারটিকে রক্ষা করতে গিয়ে বাসটি এসে আরেক কারের ওপর পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিহত রফিকুজ্জামান ঈশ্বরগঞ্জের মধুপুর এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রাইভেটকারে গৌরীপুরে একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন।
নেত্রকোণায় বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত : নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় বাসচাপায় এক মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। উপজেলার পূর্বধলা অতকাপাড়ায় শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কে শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে পূর্বধলা থানার ওসি তাওহীদুর রহমান জানান। নিহত রতন খাঁ (৩৫) পূর্বধলা উপজেলার ছনধরা গ্রামের সিরাজ খাঁর ছেলে। আহতরা রমজান খাঁকে (৪০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি রতনের চাচাচো ভাই। ওসি তাওহীদুর বলেন, রতন তার চাচাত ভাইকে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে পূর্বধলা উপজেলা সদর থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা বিরিশিরি থেকে ঢাকাগামী সুলতানা এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস মোটর সাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই রতন নিহত হন। পুলিশ বাসটি আটক করলেও চালক পালিয়ে গেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।
টাঙ্গাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ : টাঙ্গাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে জেলার ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক ও সকালে নাগরপুর উপজেলার নাগরপুর-সলিমাবাদ সড়কে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। নিহত দু’জন হলেন- জামালপুরের সরিষাবাড়ির পিংনা গ্রামের আবদুল মান্নান (৬২) ও নাগরপুর উপজেলার বেকড়া ইউনিয়নের পাছপাড়া গ্রামের কুদ্দুস মিয়া (৭০)। স্থানীয়রা জানান, ঈদের ছুটি শেষে মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য পিংনা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ভূঞাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন মান্নান। পথে অটোরিকশাটি ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে পৌঁছালে বিপরীত থেকে আসা তারাকান্দিগামী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশার চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মান্নানকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে নিহত কুদ্দুসের বড় ভাই বাদশা মিয়া জানান, সকালে বেকড়া ভোরের বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল কুদ্দুস। পথে নাগরপুর-সলিমাবাদ সড়কে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় সে। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *