বিশেষ সম্পাদকীয়,আপনাদের ভেতর কারা পাম তেল কিনেন?

Uncategorized সম্পাদকীয়

 ২০২০ সালে ২৪ লক্ষ টন আমদানি করা লেগেছে বাংলাদেশকে। এর ভেতর সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়েছে মাত্র ৮.৪ লক্ষ টন। পাম তেল আমদানি হয়েছে ১৫.৬ লক্ষ টন। অর্থাৎ আমাদের ভোজ্যতেল আমদানির ৬৫% ছিল পাম তেল! আবার এই তেল আমদানির ৭০% হল ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকিটা মালয়েশিয়া থেকে। এর কারন ইন্দোনেশিয়ার পাম তেলের দাম মালয়েশিয়া থেকে কম। ঝামেলা বেধেছে ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধ করেছে। যদিও এর আগেই ইন্দোনেশিয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগের দিন তিন জাহাজে করে আনা ২ কোটি ৮৬ লাখ লিটার পাম তেল আসছে দেশে। আমি বিশাল বড়লোক মানুষ। যদিও অলিভ তেল, আলমন্ড তেল বা সরিষার তেলে হাত দেয়ার সৌভাগ্য হয়না। তবে আমি গরিব নই। আমি কখনো দোকানে যেয়ে বলিনা আমাকে পাম তেল দেন। আমি সব সময় সয়াবিন তেল কিনি। উল্লেখ্য বিশ্ব বাজারে পাম তেলের মূল্য সয়াবিন থেকে কম। যাহোক, হিসাব মিলায়ে দেখলাম শুধু আমি বিশাল বড়লোক নই। আমার মত প্রায় সবাইকেই আমি সয়াবিন তেল কিনতে দেখেছি। আজ পর্যন্ত দেখিনি দোকানে যেয়ে কেউ বলছে “ভাই আমাকে পাম তেল দেন”!
এমনকি আমি এটাও দেখিনি বাংলাদেশের তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যে গুটি কয়েক কোম্পানি তাদের বোতলজাত কোন পাম তেল দোকানে বিক্রি হচ্ছে। আপনারা কেউ দেখেছেন? অমুক ব্রান্ডের পিউর রিফাইনড পাম তেলে কোন দোকানে বিক্রি হতে? তাইলে ক্যামনে কি? আমাদের দেশের মোট তেল আমদানির ৬৫% এর বেশি (২০২২ এ হয়ত সেটা ৭০-৭৫% বা তারো বেশি হতে পারে) পাম তেল আমদানি হয়। তাইলে এই তেল গুলি খায় কারা? কেউ কি জানাতে পারবেন? হোটেলে ধরলাম পাম তেল কেনে? দেশে হোটেলের চাহিদা নিশ্চই মোট চাহিদার ৬৫% হবেনা? ১০% হবার ও কথা না। প্রশ্ন হল তাহলে কি আমাদের আমদানিতে ভুল ঘোষনা দিয়ে পাম তেল আনছি? সেটার সম্ভাবনা কম। কারন সয়াবিনের দাম যদি পাম তেলের কম হত তবে হয়ত ভুল ঘোষনার বিষয়টি মানা যেত। সরল মনে এটা না বুঝার মত রকেট সাইন্স না যে, হয় সয়াবিন তেল আমদানির সময় পাম তেল আনছে বলে ঘোষনা দিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। অথবা পাম তেল ঠিকি আনছে কিন্তু দেশে সেটা সুপার রিফাইন্ড ভিটামিন এ বি সি ডি ই এফ জি এইচ সমৃদ্ধ বলে হাতের স্পর্শ ছাড়া পাম তেল টু সয়াবিন তেল কনভার্টার দিয়ে সয়াবিন তেল বাজারজাত করা হচ্ছে?
একটা মজার ঘটনা মনে পড়ল। যখন পলাশীতে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতাম, তখন মধ্যরাতে দেখতাম ছোট ছোট রুগ্ন গাভী, মহিশ লাইন দিয়ে পুরান ঢাকার দিকে নিয়ে যাওয়া হত। তখন আড্ডার ফাঁকে রসিকতা করে বলতাম, পলশী মোড় হয়ে গেছে মহিশ, রুগ্ন গাভী টু গরু কনভার্টার। কারন এই পথে হেটে পরেনদিন পুরান ঢাকার দোকান গুলিতে এগুলা উৎকৃষ্ট ষাঁড় গরুর গোশতে রুপ নিত। অনেকে বলবেন ভাই মহিশের দাম এখন গরুর থেকে বেশি। তাদের জন্য বলছি যেই সময়ের কথা বলছি তখন মহিশের গোশের দাম গরুর থেকে অনেক কম ছিল।
আমাদের বাজার ব্যাবস্থার হ য ব র ল অবস্থা নিয়ে অনেক বলেছি। এটা তার কিঞ্চিত নমুনা। যে যেভাবে পারে, দেখার কেউ নেই।
পরিশেষে এ কথায় বলব, সাধু সাবধান। যেই সয়াবিন তেল চিপায় চাপায় মজুদ করতেছেন ওইটা আদেও সয়াবিন তেল কিনা চেক করে নিয়েন।


বিজ্ঞাপন