নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের সব মহাসড়কে টোল বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টোলের মাধ্যমে আদায় করা অর্থ মহাসড়কের উন্নয়নে ব্যবহার করারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর বৈঠকে দেশের ২১টি মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সংবাদ ব্রিফিং এ প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনার বিষয়ে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও বড় বড় মহাসড়ক যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ এসব মহাসড়কে টোলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, টোলের মাধ্যমে আদায় করা টাকা রাখার জন্য একটি আলাদা অ্যাকাউন্ট করতে হবে। সেই টাকা দিয়ে মহাসড়কগুলো সংস্কার করতে হবে।
২১টি মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে কেউ যাতে টেম্পারিং করতে না পারে। এটা সময়ের দাবী। কিন্তু এমন সিস্টেম করতে হবে যাতে লোক থাকুক আর নাই থাকুক এর উপর দিয়ে গাড়ী গেলেই যেন গাড়ীর নাম, নাম্বার,ওজন এবং বিস্তারিত উঠে যায়। এসব তথ্য যেন কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো একটি জায়গা থেকে মনিটরিং করা হয়। তাছাড়া ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানগুলো যেন নির্দিষ্ট মাপের তুলনায় বেশি না হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো জানান, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জনবল যেন আগে থেকেই নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমের ব্যবস্থা প্রকল্পের মধ্যেই থাকতে হবে। যাতে প্রকল্প শুরু হলে জনবলের কারণে বাস্তবায়ন বাঁধাগ্রস্ত না হয়।
দেশের সব জেল খানায় ভার্চুয়াল কারাগার স্থাপন করতে হবে। যাতে দুর্র্ধষ আসামীদের জেল থেকে আদালতে টানাটানি করতে না হয়। যেসব আসামীর ছিনতাই বা অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে সেসব আসামীকে ক্যামেরার মাধ্যমে এজলাসে বসেই বিচারক যাতে বিচার করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর বরাতে যোগ করেন এম এ মান্নান।
মান্নান জানান, দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি পরিমাণ শিক্ষার্থী আছে তার একটি পরিসংখ্যান চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন পুরনো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যাতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় যে তারা কত শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে। এজন্য একটি নীতিমালা করতে হবে। প্রয়োজন হলে যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই সেসব জেলায় নতুন করে করতে হবে।
একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রায় ৬৩২৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকার দেবে প্রায় ৫৩২৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন প্রায় ৯৯৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য জানান। বর্তমান অর্থবছরের এই পঞ্চম একনেক সভায় অনুমোদিত ১০ প্রকল্পের মধ্যে ৪টিই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের। সেগুলো হলো- ‘কুড়িগ্রাম (দাসেরহাট)-নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী-হোনাহাট স্থলবন্দর সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প, ‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প, ‘ভুয়াপুর-তারাকান্দি জেলা মহাসড়ক (জেড-৪৮০১) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প এবং ‘চারলেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ) চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেইজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ প্রকল্প।
বাকি অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প; সুরক্ষা সেবা বিভাগের ‘নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্প; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব-স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্প (চতুর্থ পর্যায়)’ প্রকল্প; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ‘কনভারশন অব ১৫০ মেগাওয়াট সিলেট গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট টু ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
একনেক বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা।