গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা

অপরাধ অর্থনীতি আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী রাজনীতি

নিরাপদ সড়ক গড়তে বাংলাদেশের পাশে বিশ্বব্যাংক

মহসীন আহমেদ স্বপন : কোনোভাবেই শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না রাজধানীর গণপরিবহন। বাস স্টপেজ নির্দিষ্ট করে দেয়া ছাড়াও সড়কে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধে করে দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট লাইন। এরপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বেপরোয়া ড্রাইভিং। আইনঅমান্যকারী বাস কোম্পানি, মালিক ও বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দাবি বিশেষজ্ঞদের। আর ট্রাফিক পুলিশ বলছেন, সচেতনতার বিকল্প নেই।
গোটা শহরটাই যেন বাস স্টপেজ। যেখানে-সেখানে গাড়ি ইচ্ছামত থামছে, যাত্রীরাও উঠছেন খেয়ালখুশিমতো। আবার যাত্রীছাউনি থাকলেও তা উপেক্ষা করেই দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা।
এখানেও অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে গণপরিবহন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আশাজাগানিয়া আন্দোলনের পরেও গণপরিবহনে ফেরেনি শৃঙ্খলা, নিরাপদ হয়নি সড়ক। রাজধানীর উত্তরায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উত্তরার কামারপাড়ায় বাসের ধাক্কায় এক ট্রাক হেল্পার নিহত হয়েছেন। নিহত রাশেদের মামা মো. মোস্তফা জানান, তাদের বাড়ি ভোলা সদর থানায়। রাশেদের বাবার নাম সিরাজ হাওলাদার। থাকেন তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে। তার সঙ্গে রাশেদ ট্রাকের সহকারী (হেল্পার) হিসেবে কাজ করতেন। গত রাতে তারা একটি কাজে উত্তরা কামারপাড়ায় যান। সেখানে তারা দুজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় আসমানি পরিবহনের একটি বাস রাশেদকে চাপা দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গত ২৭ আগস্টেই রাজধানীর বাংলামোটরে বেপরোয়া একটি বাসের চাপায় পা হারিয়েছেন কৃষ্ণা রানী চৌধুরী নামে বিআইডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা।
রাজধানীর সড়কগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতোই চলাচল করছে গণপরিবহন। নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে থামছে না গাড়ি। রাস্তা ফাঁকা পেলেই বেপরোয়া হচ্ছে বাসগুলো। ফলে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। গণপরিবহনের সংকটের সুরাহা তো হচ্ছেই না বরং দিনদিন সড়কে নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে।
এ বিষয়ে হেলপাররা বলেন, যাত্রীরা রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন। এখান থেকেই তাদের গাড়িতে তুলতে হয়।
৩ এপ্রিল ২০১৮। দুই বাসের চাপায় হাত হারিয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজিব।
২৮ জুলাই ২০১৮। রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিম সজিব বাসচাপায় নিহত হন।
সম্প্রতি শৃঙ্খলা ফেরাতে বে পদ্ধতি চালু করেছে ট্রাফিক বিভাগ। তবে দেড় শতাধিক সিটি বাস স্টপেজ হলেও বে করা হয়েছে অল্প কয়েকটি ট্রানজেকশনে।
ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন বলেন, যাতে যাত্রীরা সুবিধা পান সেজন্য প্লাস্টিক কন দিয়ে লেন করে দেয়া হয়েছে।
সমন্বিত বাস্তবায়নে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করে ট্রাফিক বিভাগ।
গণপরিবহনের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে চালকরা বলছেন, চালক হিসেবে আমরা যথেষ্ট সচেতনভাবেই গাড়ি চালাই। কিন্তু চলন্ত বাসের সামনে দিয়ে হঠাৎ করে যখন পথচারী রাস্তা পারাপার করে তখন অনেক সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাসগুলো ফুটপাত ঘেঁসে দাঁড়াবে। সিএনজি ও অটোরিকশা এরমধ্যে থাকবে না।
তবে সুফল পেতে বাস মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, আড়িফেরি গান দিয়ে দূর থেকে বাসের সকল তথ্য নিয়েই মামলা দিয়ে দেয়া সম্ভব। যে বাস নিয়ম মানবে না সেটা মালিককে জানাতে হবে এবং এরপর মালিক কী পদক্ষেপ নিলেন সেটা ট্রাফিক পুলিশকে জানাতে হবে।
রাজধানীর প্রতিটি সিটি স্টপেজে এমন বে তৈরি করে বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা গেলে সেখান থেকেই বাসে চড়তে বাধ্য হবেন যাত্রীরা। প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরা অথবা পুলিশ চেকপোস্ট বসাতে হবে। তাহলে অন্তত বিশৃঙ্খলভাবে যাত্রী ওঠানামার কারণে সড়কে আর কোনো তাজাপ্রাণ ঝরবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
নিরাপদ সড়ক গড়তে বাংলাদেশের পাশে বিশ্বব্যাংক : নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা নগরে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকের পর এ কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি মার্সি টেম্বন। নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষন করতে চলতি মাসের ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও জানান মার্সি।
এসময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের আগামী বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশের নৌ পথ ও পানি সম্পদ কাজে লাগাতে জোর দেন কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়ক যেকোন প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক।
এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য নেদারল্যান্ড অত্যন্ত পরিপক্ক ভাবে আমাদের সঙ্গে আছে। জাপান ও জাইকাও এর সাথে যুক্ত হবে। আমাদের পানি সম্পদ, নদী, সমুদ্র এগুলোর সাথে তাদের যুক্ত করতে পারলে এখানকার অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি মার্সি টেম্বন জানান, আমরা বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা সহায়তা করবো। বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অনেক উন্নতি করেছে। আশা করছি তিন চার বছরের মধ্যে তাদের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে পৌছাবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *