কক্সবাজার প্রতিনিধি : সপ্তাহখানেক ধরে মঞ্চ-প্যান্ডেল নির্মাণ। বর্ণিল আলোকসজ্জায় মোড়ানো তোরণ। বাড়ির অন্দর-বাহির জুড়ে অভিজাত সাজ-সজ্জা মিলিয়ে সে এক রাজসিক আয়োজনই বটে!
এ আয়োজন দেখা গেল কক্সবাজার-৪ আসনের বিতর্কিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার চৌধুরীর একমাত্র কন্যা সামিয়া রহমান সানির বিয়েতে।
শুক্রবার টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার বাড়িতে বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা ছিলো। বেলা ১১টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে মেহমানদের আপ্যায়ন। মধ্যখানে জুমার নামাজের জন্য বিরতি দেয়া হয়।
বিয়েতে খাবারের জন্য পাঁচটি প্যান্ডেল করা হয়। প্রতি ব্যাচে প্রায় এক হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়। পুরো আয়োজনকে সিসি ক্যামরার আওতায় আনা হয়। বিয়ে কেন্দ্র করে সপ্তাহ ধরে চলছিল প্রস্তুতি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে সাজসজ্জার সরঞ্জামাদি আনা হয়। আয়োজনের পুরোটা তদারকি করেন আবদুর রহমান বদি। টেকনাফের ইতিহাসে এমন রাজকীয় বিয়ে আর দেখেনি স্থানীয়রা। মূল ফটক থেকে বর-কনের মঞ্চ, খাবারের প্যান্ডেল পর্যন্ত কারুকাজ ছিল। প্রধান গেট থেকে পুরো এলাকাজুড়ে বর্ণিল, চোখ ধাঁধানো আলোর বিচ্ছুরণ ছিল। এ আয়োজন ঘিরে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার এমপি শাহীন আক্তার চৌধুরী ও আবদুর রহমান বদির বাড়ির আঙিনা অভিজাত সাজে সাজানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজকীয় এ বিয়ের জন্য সপ্তাহ ধরে শুধু মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরি এবং সাজসজ্জার কাজ করা হয়। একজন ডেকোরেশন কর্মী জানিয়েছেন, খাবার বাদ দিলে শুধু সাজসজ্জায়ই ব্যয় হয়েছে কোটি টাকার ওপর। সবমিলে এ বিয়েতে কোটি টাকার ওপরে খরচ হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ব্যক্তিগত সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন, বর নেত্রকোনার জয়নগরের ঐতিহ্যবাহী বনেদি পরিবারের মনোয়ারা ম্যানশনের সুরত আলী ও বেগম মনোয়ারা আক্তারের ছেলে ব্যারিস্টার রানা তাজউদ্দীন। এমপি কন্যা সামিয়া রহমান সানির সঙ্গে ব্যারিস্টার রানা তাজউদ্দীনের প্রায় নয় মাস আগে আকদ সম্পন্ন হয়। আবদুর রহমান বদি ও শাহীন আক্তার চৌধুরীর মেয়ে সামিয়া রহমান সানি বর্তমানে ঢাকার লন্ডন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজে অনার্স তৃতীয় সেমিস্টারে পড়েন।
এদিকে আবদুর রহমান বদির একমাত্র মেয়ের বিয়ে নিয়েও রাজনীতি করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন উখিয়া-টেকনাফ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তাদের অভিযোগ, বদি মেয়ের বিয়ে নিয়েও সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কেবল তার অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের মেয়ের বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছেন। বিয়েতে নিমন্ত্রণ না পেয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। উখিয়া উপজেলা যুবলীগ পাল্টা আয়োজন হিসেবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভোজের আয়োজন করে। নেতাকর্মীরা চাঁদা তুলে এ আয়োজন করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, আবদুর রহমান বদির সংসদ সদস্য নির্বাচন ও বদিপত্নী শাহীন আকতার চৌধুরীর সংসদ সদস্য নির্বাচনে যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানবাজি রেখে কাজ করলেও মেয়ের বিয়েতে যুবলীগকে মূল্যায়ন করেনি। এ নিয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ।