নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গাজীপুরের পূর্ব শত্রুতার জেরে নিজ ঘরে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যার রহস্য উদঘাটন সহ আসামী গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জন্য গেছে, মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী, মোঃ পনির (৪০), পিতা-মৃত ইউনুছ আলী, মাতা-ফুলবরন, সাং-বালিগাঁও,ওয়ার্ড নং-০৬, কালীগঞ্জ পৌরসভা, থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-গাজীপুর।
মামলার বাদী স্বপন মিজার্র পিতা মোমেন ও বড় দুই ভাই সৌদি আরবে চাকরিরত থাকার কারণে একমাত্র ছেলে স্বপন মীজার্কে নিয়ে (ডিসিষ্ট) নাজমা বেগম (৪০) বাড়িতে বসবাস করতেন।
বাদী স্বপন মিজার গত ২৫/১২/২০২০ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ টায় চৈতারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলামিক ওয়াজ মাহফিলে যান।
একই তারিখ রাত অনুমান ৮ টা ৩৫ মিনিটে বাদী স্বপন মির্জা বাড়িতে ফিরে এসে বসত ঘরের খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বাদীর মাতা নাজমা বেগমকে খাটের উত্তর পাশে শোকেসের সামনে মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার করতে থাকেন।
বাদীর ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের সহযোগিতায় ডিসিষ্ট নাজমা বেগমকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
কর্তব্যরত ডাক্তার ডিসিষ্টকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঢাকায় রেফার্ড করেন। বাদী আত্মীয় স্বজনসহ ডিসিষ্ট নাজমাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে রাত অনুমান ১০ টার সময় নাজমা বেগম মৃত্যুবরণ করেন।
এ সংবাদ পেয়ে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ ২৬/১২/২০২০ তারিখ গভীর রাতে এসে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গাজীপুর মর্গে প্রেরন করেন।
অজ্ঞাত নামা আসামীরা ২৫/১২/২০২০ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ টা হতে রাত অনুমান ৮ টা ৩৫ মিনিটের এর মধ্যে যে কোনো সময় ডিসিষ্ট এর বসত ঘরে প্রবেশ করে বাদীর মায়ের মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনায় বাদী অজ্ঞতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানার মামলা নং ১৬, তারিখ- ২৬/১২/২০২০, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ কালীগঞ্জ থানা প্রায় ৩ মাস তদন্ত করে কোনো রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম তদন্ত করেন।
গ্রেফতার কৃত আসামী কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতার কৃত আসামী পনির এর স্ত্রী মানছুরা বেগম (৩৫), পিতা- মৃত আলিম উদ্দিন, মাতা- মৃত খোদেজা বেগম,সাং- চৈতারপাড়া,থানা-কালীগঞ্জ,জেলা-গাজীপুর সৌদি আরবে চাকরি করতেন।
ডিসিষ্ট এর স্বামী মোমেন মিজার (৪৮), পিতা- মৃত আলিম উদ্দিন, মাতা- মৃত খোদেজা বেগম,সাং- চৈতারপাড়া, থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-গাজীপুর তিনিও সৌদি প্রবাসী ছিলেন। আসামী মোঃ পনির এর স্ত্রী প্রবাসী হবার কারণে বিদেশ থেকে প্রায় সময় আসামীর নিকট টাকা পয়সা পাঠাতেন।
উক্ত টাকা গ্রেফতার কৃত আসামী পনির (৪০) তার প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় ডিসিষ্ট নাজমা এর নিকট জমা রাখতেন।
এতে করে উভয়ের মধ্যে টাকা পয়সা লেনদেন-কে কেন্দ্র করে ডিসিষ্ট ও আসামী পনির এর মধ্যে একটি ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়। ঘটনার কিছুদিন পূর্বে টাকা পয়সা লেনদেন-কে কেন্দ্র করে পনির এর সাথে নাজমার মনোমালিন্য শুরু হয়।
মামলার ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ডিসিষ্ট নাজমা আসামী পনির এর ছেলে সোহেলকে নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে যেতে চাইলে পনির নিষেধ করায় দুজনের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে পনিরকে চড় মারে। এতে আসামী মোঃ পনির চরম অপমানিত বোধ করে।
এছাড়াও ডিসিষ্ট এর প্রতিবেশী আব্দুল গাফফার মীর্জা (২৮), পিতা-আব্দুল রশিদ মীর্জা, সাং-চৈতারপাড়া, থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-গাজীপুর (ডিসিষ্ট এর ভাতিজা) এবং মোঃ মোস্তুফা (৪৮), পিতা- মৃত সাফিজ উদ্দিন, মাতা-মৃত আলেকা খাতুন সাং চৈতারপাড়া, থানা কালীগঞ্জ জেলা গাজীপুর (গফফারের শশুর) দের সাথে জমি জমা নিয়ে এবং ডিসিষ্ট এর নিকট ধার চেয়ে টাকা না পাওয়ায় মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
আসামীরা ডিসিষ্ট এর প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় হওয়ায় সকল আসামীরা একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা করে যে, যেহেতু ডিসিষ্ট এর একমাত্র ছেলে নিয়ে বাড়িতে থাকে সেহেতু যে কোনো উপায়ে নাজমাকে হত্যা করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিতে হবে এবং ডিসিষ্ট এর বাড়িতে থাকা নগদ টাকা লুট করে নিতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন সন্ধার পর ডিসিষ্ট এর ছেলেকে কৌশলে পাশের স্কুল মাঠে ওয়াজ মাহফিলে পাঠিয়ে দিয়ে আসামীগণ ডিসিষ্ট এর বাড়িতে প্রবেশ করে।
গ্রেফতার কৃত আসামী মোঃ পনির একটি লাঠি নিয়ে বাড়ির প্রবেশ মুখে পাহারা দিতে থাকে এবং অপর দুইজন আসামী ঘরের ভেতর প্রবেশ করে গ্যাসের পরিত্যক্ত পাইপ দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে ডিসিষ্ট এর মাথায় বাড়ি মারতে থাকে।
ডিসিষ্ট চিৎকার করতে চাইলে আসামীরা তাঁর মুখ চেপে ধরলে ডিসিষ্ট এর শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে পরবর্তীতে আসামীরা ডিসিষ্ট এর পাশে শোকেসের উপর রক্ষিত চাবি নিয়ে শোকেস খুলে নগদ ১০০০০০ (এক লক্ষ) টাকা নিয়ে চলে যায়। এরপর গ্রেফতারকৃত আসামীগণ লুন্ঠিত টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন ঘটনায় জড়িত সকল আসামীরা পরস্পর আত্মীয় প্রতিবেশী। টাকা পয়সা লেনদেন ও জায়গা জমি, সীমানা ইত্যাদি নিয়ে ডিসিষ্ট এর সাথে পূর্ব শত্রুতা ছিলো। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামীরা ডিসিষ্টকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে।
আসামী পনির সহযোগী আসামীদের এ মামলার ঘটনায় ভূমিকা বর্ণনা করে গত বুধবার ৩ আগস্ট আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।