পেঁয়াজের ঝাঁজে দিশাহারা মানুষ

অর্থনীতি এইমাত্র জীবন-যাপন বানিজ্য

কেজিতে বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা

বিশেষ প্রতিবেদক : ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধের কারণে আরেকদফা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ঢাকার বাজারে দাম ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা। বেশকিছু জায়গায় সংকটের কথা জানিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। অবিশ্বাস্যভাবে দাম বাড়ায় পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখের পানিতে সাধারণ মানুষের দিশেহারা অবস্থা। অন্যদিকে বরাদ্দ কম থাকায় টিসিবিতেও পেঁয়াজ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানির ৪০০ টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। শিগগিরই খালাস শুরু হবে বলে জানা গেছে।
কোন পূর্বঘোষণা ছাড়াই রোববার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় ভারত সরকার। ফলে সাথে সাথে প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে। একদিনের ব্যবধানে ঢাকায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০-১১০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়। কোথাও কোথাও পেঁয়াজের সংকটের কথা বলে বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়িরা।
হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
অন্যদিকে ঢাকার ৩৫টি জায়গায় টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও পেঁয়াজ না পাওয়ার অভিযোগ গ্রাহকদের। বরাদ্দ কম দেয়ায় পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে বলছেন টিসিবির বিক্রেতারা। পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অন্য দেশ থেকে আরও পেঁয়াজ আমদানির আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পরেরদিনই রাজধানীর বাজারগুলোতে একলাফে প্রতিকেজিতে দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। রোববার যে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা সোমবার তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের রফতানি বন্ধ ঘোষণার পরেই আমদানিকারকরা তাদের দাম বাড়াতে বলেছেন। তবে বাণিজ্যসচিব বলছেন, মিয়ানমার থেকে দুই জাহাজ পেঁয়াজ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। একটি থেকে এরইমধ্যে খালাস শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই তা বাজারে সরবরাহ শুরু হলে দাম আবার নাগালে চলে আসবে।
কারওয়ানবাজার, মতিঝিল ও খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার এবং মহল্লার দোকানগুলো ঘুরে এই দাম দেখা গেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। অথচ রোববার দুপুর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। বিভিন্ন আড়তে প্রতি কেজি পেয়াঁজের পাইকারি মূল্য ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
রোববার ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার খবরে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি আড়তে দুপুরের পর থেকে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। ওইদিন দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন আড়তে প্রতি কেজি পেয়াঁজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও বিকেলের পর থেকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। ফলে মাত্র চার ঘন্টার ব্যবধানে আড়তে কেজি প্রতি পেয়াঁজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
এদিকে রোববার রাত পর্যন্ত মহল্লার দোকানগুলোতে এবং বিভিন্ন খুচরা বাজারে পেঁয়াজ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছিল। অর্থ্যাৎ তখনও পর্যন্ত এসব দোকানে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর খবর পৌঁছেনি। ফলে রোববার রাতেও এসব দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ বসুন আড়তদার সমিতির প্রচার সম্পাদক ও মেসার্স আলহাজ্ব ভান্ডারের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ ৫৭ থেকে ৬২ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু দুপুর একটার পর আমদানিকারকরা আমাদের ফোন করে জানিয়েছেন, ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৭৫ টাকার নীচে বিক্রি করবেন না। কারণ ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে। বর্তমানে ভারতের কলকাতাতেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ রুপি। কিন্তু তখনো দেশি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা এই খবর পাননি।
তিনি বলেন, আমদানিকারকদের নির্দেশে আমরা রোববার দুপুরের পর পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেই। পরে বিকেলে তারা আবার আমাদের ফোনে করে বলে দেয় ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৭৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা বিক্রি করতে বলা হয়। পরে সন্ধ্যা থেকে আমরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। এতে স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারে তা আরো বাড়বে। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ টন পেঁয়াজ বিক্রি করি। আর শ্যামবাজারে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ টন মেট্রিক টন পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ভারত সরকারের পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। এরইমধ্যে মিয়ানমার থেকে দুটি জাহাজ পেঁয়াজ নিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরে পৌছেছে। এর মধ্যে একটি জাহাজ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলেই পেঁয়াজ খালাস শুরু হয়েছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই তা খুচরা বাজারে পাওয়া যাবে। এছাড়াও, তুরস্ক ও মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইপলাইনে রয়েছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানির বন্ধের খবরে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এটা সত্য। তারপরেও আমরা এ নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছি। আমরা সারাক্ষণ এটা নিয়েই কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে ২৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বছরে আমাদের ঘাটতি থাকে ৮ থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি মোকাবিলায় আমরা বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে থাকি।
তিনি বলেন, আমরা পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবি‘র মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হবে। মূল্য নিয়ন্ত্রক এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য বাজার মনিটরিং জোরদার করা হবে।
ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভারত সরকার প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) নির্ধারণ করে দিয়েছে। আগে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ ডলার থাকলেও গত ১৩ সেপ্টেম্বর তা বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার পূনর্র্নিধারণ করেছে ভারত। সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পুরোপুরি পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে।
উল্লেখ্য, বর্তমান প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে উৎপাদন হয়েছে ২৩.৭৬ লাখ মেট্রিক টন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *