থমকে আছে অভিযান

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী

*অনলাইন ক্যাসিনো চলছেই
*লোকমানের ছবি ভাইরাল
*দায়িত্ব কেন র‌্যাবের কাঁধে
*খোঁজ নেই সম্রাটের

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে, বারে ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাসায় একযোগে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে জনমনে স্বস্তি ছড়িয়ে পড়লেও হঠাৎ যেন থমকে গেছে এ অভিযান! টানা দুই-তিন দিন এ নিয়ে দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা হলেও হঠাৎ করে যেন ঝিমিয়ে গেছে সবাই। এর ফলে জনমনে দেখা দিয়েছে কৌতূহলী প্রশ্ন।
চীন, হংকং, কোরিয়াসহ ৫ দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো বা জুয়া খেলা। ওয়েবসাইট বন্ধ করেও ঠেকানো যাচ্ছে না এসব গেমস। সাইবার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইন গেমসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, সাথে সাধারণ মানুষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও নিয়ে যাচ্ছে তারা। ক্যাসিনো-জুয়ার আসরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যেও দেশে চলছে অনলাইনে ক্যাসিনো গেমস বা জুয়া খেলা। যার আরেক নাম বেটিং।
অন্যদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তিনি মাদক আইনে দায়ের করা একটি মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন।
গ্রেফতারের পর থেকে তার নানা কর্মকা-ের রহস্য বের হয়ে আসছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোকমানের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি সমাবেশে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মাথার ওপর ছাতা ধরে আছেন লোকমান। ওই ছবিতে বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকেও দেখা যাচ্ছে।
বড় কোনো ঝড়ের আগে যেমন করে আকাশ থমকে থাকে তেমনি হয়তো বড় কোনো অভিযানের প্রস্তুতি নিতেই এ নীরবতা বলছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে উত্তরা র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ওরফে খালেদ, জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী জি কে শামীম এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ আলমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন। ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজি করে তারা কত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন— সে বিষয়ে একটা তালিকা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোর টাকার কমিশন কারা পেতেন— সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেকের নাম বলেছেন। কমিশন নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশকিছু সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপির নাম রয়েছে।
এই তালিকায় রাজধানীর বিএনপি ও যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নামও রয়েছে। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। তাই মাঝেমধ্যেই বিএনপির এসব নেতা জি কে শামীম ও ল্যাংড়া খালেদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। দুবাইয়ে আত্মগোপন করা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে খালেদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার তথ্যও মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আমরা তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। অনেক বিষয় নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল খালেদের: সূত্র জানায়, উত্তরা র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ওরফে খালেদ, জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী জি কে শামীম এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ আলমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন। খালেদ তার অস্ত্র ভা-ারের ব্যাপারে বেশকিছু তথ্য দিয়েছে। তবে তার কাছে একে-২২ রাইফেল থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়া দুটি একে-২২ রাইফেল তার নয় বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বছরখানেক আগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট খালেদকে দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করেন। এর জের ধরে তাদের মধ্যে ঠা-া লড়াই শুরু হয়। সম্রাটের সন্দেহ ছিল, সিঙ্গাপুরের ম্যারিনা বে স্যান্ডস হোটেলে খালেদ ও জিসানের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। জিসান ঢাকার ক্যাসিনোর চাঁদাবাজির কমিশন হিসাবে সম্রাটের কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। এর জের ধরে সম্রাট খালেদকে বহিষ্কার করে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
খোঁজ নেই সম্রাটের: যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গত দুদিন ধরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানা গেছে। দলীয় শীর্ষ নেতাদের ধারণা, সম্রাট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরবন্দিতে আছেন অথবা আত্মগোপন করেছেন। সম্রাট এখন দল থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তার সঙ্গে দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীরই যোগাযোগ নেই। সম্রাটের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোই এখন ভালো বলতে পারবে। তবে সম্রাট কোথায় আছেন- সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থাই এখনো পর্যন্ত খোলাসা করে কিছু বলছেন না।
এদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভুঁইয়াকে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এ ব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, তেজগাঁও থানা হেফাজতে রেখে লোকমান ভুঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অনলাইন ক্যাসিনো চলছেই : চীন, হংকং, কোরিয়াসহ ৫ দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো বা জুয়া খেলা। ওয়েবসাইট বন্ধ করেও ঠেকানো যাচ্ছে না এসব গেমস। সাইবার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইন গেমসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, সাথে সাধারণ মানুষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও নিয়ে যাচ্ছে তারা। ক্যাসিনো-জুয়ার আসরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যেও দেশে চলছে অনলাইনে ক্যাসিনো গেমস বা জুয়া খেলা। যার আরেক নাম বেটিং।
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি ১৭৬টি জুয়ার সাইটের গেটওয়ে বন্ধ করে দিলেও অবৈধভাবে অন্য গেটওয়ে ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে সেগুলো।
চীন, হংকং, কোরিয়া, ফিলিপাইন্স ও ইউক্রেন থেকে নিবন্ধিত বেটিং সাইটগুলোতেই মূলত বাংলাদেশিদের পদচারণ। এ সাইটগুলোতে ক্রিকেট, ফুটবল, রাগবি ম্যাচ চলাকালে লাইভ বাজি ধরার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব ম্যাচ কোনো চ্যানেলে সম্প্রচার হয় না সেই ক্লাবের খেলা নিয়েও হয় বাজি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রথমে এসব সাইটে জুয়াড়িদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়। জুয়ায় অংশ নিতে অর্থ পরিশোধ করতে হয় ক্রেডিট কার্ডে। দেশে এসব জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এজেন্ট। টাকার বিনিময়ে তারা ডলার কিনে নেয় জুয়াড়িদের কাছ থেকে।
সাইবার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অনলাইনে গেমসের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে জুয়ার টাকা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, এটা একটা সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফাইনান্সিয়াল যে সংস্থাগুলো আছে তাদের সাহায্যে খুব স্বল্পমূল্যে তারা চিপসগুলো সরবরাহ করছে। তরুণরা কিন্তু এই গেমটার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। এর মূল ডেভেলপার হচ্ছে চীন, হংকং, কোরিয়া, ফিলিপিন্স এবং ইউক্রেনের মতো কিছু দেশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে অনলাইনে ক্যাসিনো বন্ধের কাজ করা হচ্ছে।
র‌্যাবের (আইন ও গণমাধ্যম) পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, আমাদের সাথে প্রত্যেকেরই সমন্বয় আছে। আমরা সমন্বিতভাবেই কাজ করছি।
ভবিষ্যতে এসব গেমসের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই সদস্য।
লোকমানের যে ছবি ভাইরাল : মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তিনি মাদক আইনে দায়ের করা একটি মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন।
গ্রেফতারের পর থেকে তার নানা কর্মকা-ের রহস্য বের হয়ে আসছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোকমানের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি সমাবেশে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মাথার ওপর ছাতা ধরে আছেন লোকমান। ওই ছবিতে বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকেও দেখা যাচ্ছে।
এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা কী করে আওয়ামী লীগের সময়ে এত সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।
এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার দুটি ব্যাংকে তিনি ৪১ কোটি টাকা রেখেছেন বলে জানা গেছে। মোহামেডান থেকে আয় করা টাকার ভাগ দিতেন ঢাকার যুবলীগ নেতা সম্রাট ও সাঈদকে।
লোকমান এক সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তাও ছিলেন বেশ কিছুদিন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে ২০০৮ সালে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক তিনি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার রুমে টাঙানো বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলা এবং প্রকাশ্যে সেই ছবিটি ভাঙচুর করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিসিবির পরিচালক হয়েছেন লোকমান।
দায়িত্ব কেন র‌্যাবের কাঁধে : বাংলাদেশে পুলিশকে বাদ দিয়ে বিশেষ বাহিনী র‌্যাবকে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যসহ দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের একক দায়িত্ব দেয়ার বিষয় নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিভ্রান্তি এড়াতে অভিযানের পুরো দায়িত্ব র‌্যাবকে দেয়া হয়েছে।
তবে এতদিন ধরে অবৈধভাবে ক্যাসিনো বাণিজ্য চলার পেছনে পুলিশ প্রশাসনের কারও যোগসাজশ ছিল কিনা, এমন প্রশ্ন উঠছিল গত কয়েকদিন ধরে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দল এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতা কর্মীর দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে জড়ানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযান চালানোর কথা বলেছিলেন সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠকে।
এরপর প্রথমে র‌্যাব ঢাকায় চারটি নামকরা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ জুয়ার আসর বা ক্যাসিনো বাণিজ্য বন্ধ করেছিল গত ১৮ই সেপ্টেম্বর। দু’দিন পর পুলিশও অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান শুরু করেছিল। তারপর থেকে পুলিশ এবং র‌্যাব একের পরে এক অভিযান চালিয়ে আসছিল।
তবে এখন পুলিশকে বাদ দিয়ে র‌্যাবকে এককভাবে এই অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হলো।
অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যের গল্প একের পর এক যখন বেরিয়ে আসছে, তখন এনিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বড় প্রশ্ন হিসেবে এসেছে, এতদিন ধরে অবৈধভাবে ক্যাসিনো বাণিজ্য চলেছে কিভাবে? পুলিশ র‌্যাব এবং সরকারসহ সংশ্লিষ্ট এর দায় নিতে রাজি নয়।
কিন্তু সরকারের অর্থমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী বা প্রশাসনের নজরের বাইরে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য চলেছে কিভাবে? সেই প্রেক্ষাপটে অভিযানের দায়িত্ব থেকে পুলিশ বাদ পড়লো।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম বলছিলেন, একই কাজ বিভিন্ন বাহিনী করলে ভাল ফল আসবে না, এই যুক্তিতে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
একই কাজ একটা বাহিনী করা ভাল। একটা কাজ যদি পাঁচজনকে ভাগ করে দেয়া হয়, পাঁচজন পাঁচটা ফলাফল দেখাবে। একারণে র‌্যাবকে দায়িত্ব দিয়েছে।
কিন্তু প্রশাসনের নজরের বাইরে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য চলছিল কিভাবে-এমন প্রশ্ন যে উঠেছে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেছেন, শুধু পুলিশের কথা বলেনি যে, পুলিশের চোখের সামনে এসব চলছিল। র‌্যাবতো এই এলাকার বাইরে ছিল না। সবার চোখের সামনেই চলছিল। তো র‌্যাবকে দায়িত্ব দিয়েছে, তারা দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের বলা হয়েছে, একাসাথে এককাজ একাধিক বাহিনী করলে সমস্যা হতে পারে। সুতরাং তারাই করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নে এটুকুই বলেছেন যে, র‌্যাব এই অভিযান শুরু করেছে, সেকারণে তাদেরকেই এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণারয়ের কর্মকর্তারা যুক্তি দিয়েছেন, বিভ্রান্তি এড়াতে র‌্যাবকে অভিযানের একক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তবে ঢাকায় পুলিশ ষ্টেশন থেকে অল্প দূরত্বেই বিভিন্ন জায়গায় ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য ধরা পড়েছে। ফলে এসব চলার পেছনে পুলিশ প্রশাসনের দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার অবশ্য বলেছেন যে, পুলিশের কেউ জড়িত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
র‌্যাব পুলিশেরই একটা বিশেষ বাহিনী। সাধারণ পুলিশ থেকেই উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা র‌্যাবের প্রধানের দায়িত্ব পান। র‌্যাবে অন্যান্য পদে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী থেকে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যে যেখানে বড় অংকের অর্থে বিষয় ছিলো, ফলে এটি আগে কারোই নজরে আসেনি, এই যুক্তি খাটে না বলে তারা মনে করেন।
দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাসিনো বাণিজ্য চলার দায় পুলিশ বা র‌্যাব কেউই এড়াতে পারে না।
যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটার জন্য যদি আমরা মনে করি যে পুলিশ এখানে সেভাবে কাজ করেনি, তাদের অবহেলা যদি আমরা ধরতে চাই, তাহলে কারও অজান্তে না হওয়ার প্রতিফলন র‌্যাবের ওপরও পড়তে পারে। এটা নিয়ে আমরা প্রশ্ন করতে পারি যে, এখানে সরকারের কৌশলগত কোন কারণ আছে কিনা?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলছিলেন, কোন একটি বাহিনীকে দিয়ে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করানো হলে তাতে সমন্বয়ের অভাব থাকে না। এটাকে তিনি সরকারের একটা কৌশল বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *