চীনের সাড়া না পাওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেনা বাংলাদেশ

Uncategorized আন্তর্জাতিক

কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঃ বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত করতে ঢাকায় কর্মরত আশিয়ান বহির্ভূত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ডেকেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তাতে অংশ নেননি চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং এম্বেসি অফ দ্যা পিপুলস রিপাবলিক অফ চায়না ইন বাংলাদেশ।চীনের এই সাড়া না দেয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে বিষয়টি তারা ‘নোটিশ’ করেছে। চীনের অনুপস্থিতিকে কূটনৈতিক রীতির বরখেলাপ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে এ ঘটনাকে মিয়ানমারের প্রতি চীনের পরিষ্কার সমর্থন বলেও মনে করছেন তারা।

ওই বৈঠকে রাশিয়া ও ভারতের রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন না, তবে তারা না থাকলেও প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। মিয়ানমার সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপুর্ন দেশ হিসেবে অনুপস্থিত থেকেছে শুধুমাত্র চীন। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, সৌদি আরব, জাপানসহ প্রায় সব দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের নোটিশে প্রায় সব দেশের মিশন প্রধানদের ডাকা হলেও তারা নিজেরা এসেছেন বা তাদের প্রতিনিধিরা এসেছেন। তবে চীনের কোনো প্রতিনিধিকে আমরা পাইনি। গুরুত্বপূর্ণ কাজে রাষ্ট্রদূত ব্যস্ত থাকতেই পারেন কিন্তু তিনি চাইলে কোনো প্রতিনিধি পাঠাতে পারতেন। সেটা না পাঠানোয় আমরা একটু অবাকই হয়েছি। বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি নোটিশ করেছি।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রশ্নে চায়না আমাদের বহুদিনের পরিচিত বন্ধু। তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। সে হিসেবে চায়নার রিপ্রেজন্টিভ না আসায় আমি দুঃখিত কিন্তু আমি একেবারে অবাক হইনি। কারণ এর মাধ্যমে চায়না আমাদের দুটি ম্যাসেজ দিল। একটা ম্যাসেজ হচ্ছে আমরা এখানে যাব না কারন মিয়ানমার তোমাদের চেয়ে আমাদের বড় বন্ধু। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু কিন্তু মিয়ানমার আমাদের বিশেষ বন্ধু। তোমাদের চেয়ে সেখানে আমার বেশি স্বার্থ রয়েছে। সেখানে আমাদের বেশি সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।’

‘চীন আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে আমাদের স্বার্থগত কারণেই মিয়ানমার ইস্যুতে ডাকা এই মিটিংয়ে আমরা আসব না। চীনের ইন্টারেস্ট মিয়ানমারে অনেক অনেক বেশি।

সেটা আজ থেকে নয়, যুগ যুগ ধরে। মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে তারা একটা পোর্ট বানাচ্ছে। যে রকম হাম্বানটোটা বন্দর আছে শ্রীলংকাতে, যেমন জিবুতিতে তারা একটা বন্দর বানিয়েছে, যেমন করে পাকিস্থানের গোয়াদার বন্দর তারা নিয়ে নিয়েছে তেমনি মায়ানমারেও তারা একটা বন্দর নিয়েছে। মিয়ানমারের এই বন্দর দিয়ে চীন ভারত মাহাসাগর হয়ে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা চলে যাবে। তারা সেই স্বার্থে ছাড় দেবে না। এটা তাদের বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের স্বপ্ন, স্বার্থের অংশ।’

ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অবকাঠামোয় চীনের যে বিনিয়োগ, তা তাদের ব্যবসা। আমরা তার পাই টু পাই ফেরত দিচ্ছি। আর এ কারণেই চীন মিয়ানমার ইস্যুতে সিরিয়াস নয়। তারা এখনও একজন রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে সহায়তা করেনি। তারা এ বিষয়ে আসলেই সিরিয়াস নয়।’
.
চীনের সঙ্গে আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, সেই সম্পর্কের জায়গা থেকে এ ঘটনাকে অন্যভাবে বিশ্লেষণের সুযোগ নেই। কারণ চীন হচ্ছে আমাদের বড় ব্যবসায়িক পার্টনার।

এটা মনে করার কারণ নেই যে, চীন মিয়ানমারকে সমর্থন করে বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে যাবে। চীনের বিদ্যমান নীতি আমরা সবাই জানি। তারপরও গুরুত্বপুর্ন এই বৈঠকে তাদের উপস্থিত থাকাটা কূটনৈতিক ক্ষেত্র থেকে প্রত্যাশিত ছিল।

ছবিঃ- নাফ নদে টহলরত বিজিবির পেট্রোল বোট।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *