মহসীন আহমেদ স্বপন : পদ্মার চেয়েও বড় সেতু হতে যাচ্ছে বরিশাল-ভোলায়। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১০ কিলোমিটারের এ সেতুটি বরিশালের সঙ্গে যোগ করবে দ্বীপ জেলা ভোলাকে। এর মধ্যে সেতুর প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে। টাকা পেলে আগামী ৪ বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদী সরকার। কাগজে কলমে এখন পর্যন্ত দেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা, ৬ দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য।
কিন্ত এবার বরিশাল আর ভোলার মধ্যে নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। বরিশালের লাহারহাট থেকে ভোলার ভেন্ডুরিয়া ফেরিঘাটকে সংযুক্ত করবে এ সেতু। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু সমীক্ষার কাজ। এ অনুযায়ী নদীর মাঝে চরের উপর ৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টসহ এ সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১০ কিলোমিটার। সেতুতে স্প্যান বসবে ৫৮টি, অবস্থাভেদে এক একটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ১১০-২০০ মিটার। সেতুর প্রাক্কলিত বাজেট ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে প্রায় ১৩০০ একর।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সেতুটি পদ্মা সেতুর মতো ডাবল ডেকার নয়। এটি সড়ক সেতু হচ্ছে। যাচাই বাছাই শেষে এখন ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে।
দ্বীপ জেলা ভোলার সঙ্গে বরিশালকে যুক্ত করতে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সড়ক সেতু নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে এখন দীর্ঘতম সড়ক সেতু হচ্ছে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু, এর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে তা হবে দীর্ঘতম সেতু। বরিশাল-ভোলা সেতু হবে পদ্মা সেতুর চেয়েও দীর্ঘ। কাদের বলেন, এই সেতুর দৈর্ঘ্য হবে আট কিলোমিটার। এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু। এই কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, অলরেডি ফিজিবিলিটি টেস্ট শেষ হয়েছে, এখন ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। ফান্ডিংয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। চায়না এই সেতুতে অর্থায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বরিশাল-ভোলা সেতু পদ্মা সেতুর মতো হবে না, এতে রেল থাকবে না বলে জানান মন্ত্রী। বড় প্রকল্পগুলোতে ‘বড় দুর্নীতি’ হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগের জবাবে কাদের বলেন, উন্নয়ন অগ্রগতিতে সারা বিশ্বে বিস্ময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটা দৃশ্যমান কাজ বিএনপি দেখাতে পারবে না। তাদের (বিএনপি) আছে কথামালার চাতুরি। তাদের সরকার এই দেশে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। এখন শেখ হাসিনা সরকার করছে, এটা তাদের গায়ে জ্বালা, অন্তর্জ্বালা তারা সইতে পারছে না। পদ্মাসেতু থেকে সরে যাওয়ার পর নতুন প্রকল্পে টাকা দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক অস্থির হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বব্যাংক ঢাকা শহরে নতুন বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্প করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে যেহেতু মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে, তাই নতুন করে আরেকটি বিআরটি প্রকল্প নিয়ে ঢাকা শহরকে অচল করতে চাই না। ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মাসেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৭৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মাসেতু খুলে দেওয়া হবে। এছাড়াও কর্ণফুলী টানেলের কাজ ৪৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মাসেতু। প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার ফল আজকের পদ্মাসেতু। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে অপবাদ দিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন সরে যায়, তখন আকাশে ছিলো ঘনকুয়াশা ও মেঘ। তখন সবাই বললো, এ সেতু কী আর হবে? বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তখন সাহসের সঙ্গে বললেন, বিশ্বব্যাংক সরে গেছে, তাতে কী হবে, আমরা নিজস্ব অর্থে এ সেতু নির্মাণ করবো। তখন অনেকে ব্যাঙ্গ করেছিলো। কিন্তু আজ বাস্তব স্বপ্ন পদ্মাসেতু। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর দুনিয়ার নামিদামি বিশেষজ্ঞরা বললেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ বাংলাদেশের পক্ষে কীভাবে সম্ভব। এখানের মাটি সরে যায়। পদ্মা নদীর যে মাটির অবস্থা, তীব্র স্রোত। আবার বালু, কাদা। এখন পর্যন্ত ১৫টি পিলার বসেছে। আগামি ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো ৬টি টার্গেট। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ফান্ডিং সোর্সের ওপর মূলত এ ধরনের মেগা প্রজেক্টের কাজ নির্ভর করে। এটা শেষ হকে চার থেকে পাচ বছর সময় লাগবে। এ সেতুর মধ্য দিয়ে ভোলায় সম্প্রতি আবিস্কৃত গ্যাস খনির জন্য পাইপলাইন বসানো সম্ভব হবে। এছাড়া সেতুর নিচের অংশে নদীর মাঝখানের চরগুলোতে ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার পথও সুগম হবে।