নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গত বৃহস্পতিবার ১১ মে, সকাল ৯ টায় টিসিবি অডিটোরিয়ামে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং GAIN এর যৌথ উদ্যোগে ভোক্তা-স্বার্থ সুরক্ষায় খাদ্য সমৃদ্ধকরণ ও ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
উল্লেখিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোলাম রহমান, সভাপতি, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. রুদাবা খন্দকার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইম্প্রোভড নিউট্রিশন (GAIN)।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা কার্যালয়ের সকল উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক।
কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট সকল আইন অনুসরণ করে কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। এছাড়াও তিনি অধিদপ্তরের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এরপর কর্মশালায় অধিদপ্তরের কার্যক্রম সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জনাব জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
কর্মশালায় GAIN এর পক্ষ থেকে Background and objectives of the ‘Fortification of Edible Oil and Salt and Bangladesh Perspective ‘ বিষয়ক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জনাব আবুল বাশার চৌধুরী, প্রজেক্ট ম্যানেজার, GAIN.
এছাড়াও কর্মশালায় পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও বিএসটিআইয়ের সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন জনাব রিয়াজুল হক, উপ-পরিচালক, বিএসটিআই, Universal Salt Iodization Programme বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জনাব সরোয়ার হোসেন, লবণ সেল প্রধান, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন এবং Food safety and codex বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মো: আব্দুল আলীম, সদস্য, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে ভোজ্যতেলের বাজারজাতকরণ ও বিপণন বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন কাওরান বাজার ইসলামিয়া শান্তি সমিতির সভাপতি জনাব সিদ্দিকুর রহমান, তেল রিফাইনারি মিল সমূহের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধি জনাব মাহমুদুল হাসান নাদিম।
এরপর মুক্ত আলোচনায় কর্মশালায় উপস্থিত কর্মকর্তাগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ অংশগ্রহণ করেন। মুক্ত আলোচনার শেষে কর্মশালার বিশেষ অতিথি GAIN এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার GAIN এর সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা করেন।
তিনি আলোচনায় কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পৃক্ত করে একটি সভা আয়োজনের মাধ্যমে সমন্বয়ের বিষয়ে বলেন। তিনি আরও বলেন, তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করে ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি গোলাম রহমান, সভাপতি, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বলেন, খাদ্যের নিরাপত্তা বিধান করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি কর্মশালায় জনবলবৃদ্ধিসহ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার বিষয়েও বলেন।
আলোচনায় মহাপরিচালক বলেন, অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রম বাজার তদারকি, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬১২১, অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং সিসিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন। অধিদপ্তর বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও মিডিয়ার সমন্বয়ে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে; এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ১০ টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত করে Reward প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতঃপর তরুণদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভোক্তা-অধিকার আইন বিষয়ে বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে দেশ সেবার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ রূপান্তরে বাংলাদেশ বিভিন্ন কার্যক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে; এছাড়াও বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের গুণগতমান, বিভিন্ন উৎসবের আগে অসাধু ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া আচরণ, শিশু খাদ্যে ভেজাল নিয়েও আলোচনা করেন অর্থাৎ দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব সকলেরই যেখানে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, CAB, GAIN, BSTI ও ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সভায় একই Moto নিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তাদের ভেজাল বিরোধী অভিযানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে বলেন।
পরিশেষে অনুষ্ঠানের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সকলকে একযোগে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে কর্মশালাটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা কার্যালয়ের সকল উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকের সমন্বয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
যেখানে কর্মকর্তাগণ তাঁদের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে মহাপরিচালকে অবহিত করেন এবং এ প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরিশেষে, মহাপরিচালক অধিদপ্তরের বিদ্যমান ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রেখে দেশের মানুষের স্বার্থে একযোগে কাজ করে অধিদপ্তরকে আরও উচ্চ মর্যাদায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আলোচনা সভাটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।