নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নাজিরাবাজার থেকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া ৫৭ বছর বয়সী বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে আসেন মাইনুল ইসলাম রাজীব। সকাল থেকে বুকে ব্যথা শুরু হওয়ায় এখানে নিয়ে আসেন বাবাকে। আসার পর টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের কাছে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে যান তিনি। রাজীব সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আনন্দ কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল আব্বুর শরীর খারাপ হওয়াতে। কিন্তু এখানে চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা স্বস্তি পেলাম ঈদের দিনেও চিকিৎসাসেবা পেয়ে।’
লালবাগ এলাকা থেকে ঢামেকে ১৭ বছর বয়সী আমিনুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য এসেছেন ঢামেকের জরুরি বিভাগে। ঈদুল আজহার পশু কোরবানির সময় হাতের আঙ্গুল কেটে যায় আমিনুলের। আর তার চিকিৎসায় ব্যস্ত চিকিৎসকরা।আমিনুলের সঙ্গে আসা মোহাইমিনুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানির সময় হাতের আঙুল কেটে ফেলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই ওকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে হলো। বিপদ তো আর বলে আসে না। এখানে আসার পরে ওর রক্তক্ষরণটা বন্ধ করা গেছে।’
কিছুটা ভিন্ন পরিস্থিতি অবশ্য ঢামেকের স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিভাগে ঃ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এখানে রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের হাসিখুশিতে ভরা মুখই বলে দিচ্ছিল সন্তুষ্টির বার্তা। আর তা হবেই বা না কেন? এদিন সকাল থেকে এই বিভাগে স্বাভাবিক প্রসবে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক মা। একইসঙ্গে আরও একজন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসব করেছেন। এছাড়াও লেবার রুমে একাধিক মায়ের স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টায় ব্যস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। এর পাশাপাশি একাধিক মায়ের অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে এই বিভাগেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) ঃ সকালে সবাই যখন ঈদগাহে ঈদ জামাতে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আসেন ডা. রেজাউল করিম কাজল। গুরুতর রোগী আসায় দ্রুত প্রস্তুত করা হয় অস্ত্রোপচার কক্ষ। ঘণ্টাখানেকের অস্ত্রোপচার শেষে পৃথিবীর আলো দেখলো দুই জমজ শিশু। দুই চিকিৎসকের কোলে চড়ে মায়ের কাছে এলো তারা।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঃ বিকেল ৩টায় মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৭ বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন তাসনিম আক্তার। তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, ‘গত পরশু থেকে ছেলেটার জ্বর। আর হঠাৎ করে আজ সকালে সেটি আরও বেড়ে যায়। তাই জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছি৷ এখানে চিকিৎসকরা ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়ার পরে ছেলেটাকে ভর্তি করিয়েছি।’এই হাসপাতালেই দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন। আর তাই ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি প্রয়োজন হলে এনএস১ পরীক্ষা করে ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের ওসেক সার্ভিসের আওতায় জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারও করা হচ্ছে।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) ঃ চাঁনরাত থেকেই এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিবছর ব্যস্ত সময় পাড় করতে হয় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের। মোটর বাইক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া রোগীদের অধিকাংশকেই আনা হয় এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঈদুল আজহার সময় এর সঙ্গে যুক্ত হয় কোরবানির সময় কেটে যাওয়া হাত বা অন্যান্য দুর্ঘটনার রোগীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২১৯ জন।
ঈদ মানে স্বজনদের সঙ্গে কাটানো খুশির সময়। ঈদ মানে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দিয়ে বেড়ানোর সুযোগ। ঈদ মানেই আনন্দের উচ্ছাস। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকেই রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে ঈদ মানেই দায়িত্ব। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নয়, হাসপাতালে রোগীদের সেবাতেই কাটে ঈদের দিন ও রাত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর গণমাধ্যম কে বলেন, ‘পরিবারের স্বজনদের দূরে রেখে সবাই ঈদ করছে রোগীদের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। চিকিৎসক ও এই সেবায় জড়িত সবার জীবনটাই আসলে এমন। সবাই ঈদের আনন্দ তাদের স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারলেও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঈদের আনন্দ খোঁজেন রোগীদের সেবার মাধ্যমে।’
সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলাই তাদের কাছে ঈদের আনন্দ। আবেগকে হার মানিয়ে দায়িত্ববোধকে ভালোবেসে এই ঈদের আনন্দ রোগীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সারাদেশের মানুষ যখন ঈদ আনন্দে ব্যস্ত তখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। একের পর এক রোগী আসছে আর জরুরি বিভাগে তাদের সেবা দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দায়িত্বরতরা।