তারেক জিয়া-কায়কোবাদের ঘনিষ্ঠ আশরাফুল গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী হতে মরিয়া!

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনিয়ম দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিলেও এখন তা জমা দেননি গণপূর্ত অধিদফতরের রংপুর জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। বগুড়ার বাসিন্দা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই প্রকৌশলী গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর গণপূর্তের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের পিএলআরএ-যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সুযোগে বিসিএস ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা এ আশরাফুল আলম প্রধান প্রকৌশলী হতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির ঘনিষ্ঠ এই প্রকৌশলী ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াতের শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরি করেছেন বগুড়া বাড়ি এবং তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে। সে সময়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তাকে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সে সময়ে তিনি কথায় কথায় তারেক রহমানকে ‘ভাইয়া’ সম্বোধন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে রাখতেন এবং লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে।
জানা যায়, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী আশরাফুল আলম নিজেদের মধ্যে যোগসাজসে মানহীন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় নির্মাণ করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালটি। যার যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়ম এই প্রকল্পের আইএমইডি প্রতিবেদনে ধরা পড়ে। দুর্নীতি ও অনিয়মের সত্যতা পায় একনেকের তদন্ত কমিটিও। যে তদন্তসূত্র মতে জানা গেছে, উচ্চ দর দেখিয়ে নিমানের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই কর্মকর্তা।
দুর্নীতি তদন্তে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠিত কমিটি সরেজমিন পরির্দশনকারী দলের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়। ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী বরাবর তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়। এতে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করলেও রহস্যজনক কারনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গণপূর্ত অধিদফতরের আশরাফুল আলম বিএনপির সমর্থক, একনিষ্ঠকর্মী ও অর্থদাতা। তার বাড়ি বগুড়ায়। অথচ তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চলেন। অথচ রুয়েটে পড়ার সময়ে সে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমান গণপূর্ত মন্ত্রীর আশেপাশের অনেক লোককেই টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তার সম্পর্কে ডিজিএফআই’র প্রতিবেদন পাল্টে নতুন প্রতিবেদন দাখিলেও বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন এই কর্মকর্তা।
গণপূর্তের এই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী শেরেবাংলা নগর ডিভিশন-১ এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৯ এর ৬ আগস্ট পর্যন্ত (সংসদ ভবন) জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে ৩শ’ জনকে ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ দেন। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে, মোটা উৎকোচের বিনিময়ে ধামাচাপা দেন আশরাফুল। এছাড়া তিনি ভুয়া বিল, ভাউচারে বিভিন্ন ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ না করেই টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেন। সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেল সংস্কারের নামে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ২০০৯ সালে তৎকালীন স্পিকার আব্দুল হামিদের নির্দেশে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
আশরাফুল আলম প্রেষণে গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে কিছুদিনের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে চাকরি করেছেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে গণপূর্তে যোগ দেন। অবৈধ উপার্জনের টাকায় আশরাফুল আলম নিজ জেলা বগুড়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (বিপণি বিতান) গড়ে তুলেছেন। স্ত্রীর নামে ঢাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকায় আলিশান ফ্ল্যাটও কিনেছেন। গুলশানে আরো দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। যার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। স্ত্রী ও সন্তানদের নামে নিজ জেলায় সুবিশাল বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে আছে বড় অংকের এফডিআর। গড়ে তুলেছেন মাসিক সঞ্চয় ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সন্তানদের নামেও রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আছে কোটি কোটি টাকার আমানত। পরিবারের সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন তিনি। এছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ি ও কাছের আত্মীয়দের নামে রয়েছে কৃষিজমি ও ব্যবসা। মালয়েশিয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের অর্থপাচার করে সেকেন্ড হোম করেছেন এই প্রকৌশলী। এসবের পাশাপাশি আশরাফুল আলমের নামে-বেনামে রয়েছে আরো প্রায় ১শ কোটি টাকার সম্পদ।
দুর্নীতি দমন কমিশন দু’দফায় তার দুর্নীতির তদন্ত করে। প্রথম দফায় বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেলেও দ্বিতীয় দফার তদন্ত চলমান রয়েছে। তার সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত সম্পদের হিসাব দাখিল করেননি। এমন একজন জুনিয়র কর্মকর্তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়ন করা হলে গণপূর্তের চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *